এলাকার মানুষের সাথে একান্ত আলাপচারিতা থেকেই জানা গেছে, ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে ওই ১২ টি পরিবারের আদিবাসী সমাজের রীতি মানতে চায়নি। ঔদ্ধত্যের বহি:প্রকাশ। যা ভালোভাবে নেয়নি গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়। তাই তাদের শায়েস্তা করতেই মোড়ল ও তার দলবল সালিশী সভা বসিয়ে ১২ পরিবারকে দিয়েছে সমাজ থেকে বিচ্যুতির নিদান। এবং শুধু তাই নয়, পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক বিরোধীতার ইন্ধনও।
কি ঘটেছে ?
একঘরে হওয়া ১২ টি পরিবারের সদস্যদের একজন যুবক সোম সোরেন। বদমাইশ ছেলে বলেই যার পরিচয় দিচ্ছেন গাঁয়ের অধিকাংশ মানুষ। মাস দেড়েক আগে ওই যুবকের সাথে গাঁয়ের এক গৃহবধূর পরকীয়ার সম্পর্ক খোলসা হয়ে যায়। যা নিয়ে অসন্তোষের ঝড় ওঠে গ্রামে। বসে সালিশী সভা। জানা গেছে, সেই সভায় তিন হাড়া মদের জরিমানা করা হয় যুবককে। যুবক একরোখা মেজাজ নিয়ে তা দিতে অস্বীকার করে। যুবকের আত্মীয় পরিজন মিলে প্রায় ১৮ টি পরিবার পক্ষ নেয় যুবকের। গ্রাম ভাগ হয়ে যায় আড়াআড়ি ভাবে। তারপর থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে এক বিবাদের বাতাবরন তৈরী হয়। কেন আদিবাসী সমাজের রীতি মেনে মোড়লের দেওয়া নিদান মানবে না গাঁয়ের কয়েকটা পরিবার এই প্রশ্নে ফের সালিশী সভা বসে বুধবার। সেখানে দুই পক্ষের হাতাহাতি পর্যন্ত হয়। তারপরই গাঁয়ের মোড়ল শরত হেমব্রম ১২ টি পরিবারকে একঘরে করার নিদান দেন। শুধু পুকুর বা কলের জল নয়, সরকারি যেকোনো সুবিধা থেকেই ওই ১২ টি পরিবারকে ব্রাত্য রাখারও নিদান দেওয়া হয়েছে। একঘরে হওয়া পরিবারের এক সদস্য মঙ্গল সোরেন বলেন, “আমার কাকার ছেলের পরকীয়া সম্পর্ককে কেন্দ্র করে গ্রামের আঠারোটা পরিবারকে একঘরে করা হয়েছিল। পরে ছটা পরিবারকে মোড়ল নিজেদের দলে নিলেও, আমরা আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্তে অটুট ছিলাম মোড়লের নিদান মানব না। তাই সালিশি সভা বসিয়ে আমাদেরকে একঘরে করা হয়েছে। আমরা কোথাও কিছু করতে পারছি না। পুকুরের জল, টিউবওয়েলের জল নিতে পারবো না বলে জানিয়েছে। আমাদের ব্যাপক মারধরও করা হয়েছে।” বাড়িতে বাচ্চা রয়েছে। বয়স্ক মহিলারা রয়েছে। সবাইকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি। ঝামেলা বাড়ার ভয়ে প্রশাসনের কাছেও যেতে পারছি না”। গ্রামের মোড়ল শরত হেমব্রম সালীশ সভার কথা স্বীকার করে বলেন, “আমি গ্রামের মোড়ল। ওরা আমাকে মোড়ল ঠিক করেছে। আমি ওদের জন্য। ওদের কথা যেমন আমাকে শুনতে হবে, সেরকম আমার কথাও ওদেরকে শুনতে হবে। এটাই আমাদের সমাজের রীতি”। গ্রামেরই এক বরিষ্ঠ সদস্য জানিয়েছেন, “আদতে একদিকে গ্রামে মোড়ল ও তার দলবল এবং অপরদিকে ওই ১২ টি পরিবার। গাঁয়ে দুটো পক্ষ হয়ে গিয়েছে। যার ফলস্বরূপ বিবাদ চরমে পৌঁছেছে। পেছনে খানিকটা রাজনৈতিক ইন্ধনও আছে। কারন অভিযোগকারী এই মঙ্গল সোরেনই এক সময় গাঁয়ের তৃণমূলের আমদানী ঘটিয়েছিল। পরে ভাগবাঁটোয়ারাকে কেন্দ্র করে বনিবনা না হওয়ায় সে বিজেপির দিকে ঢলেছে। অপরদিকে মোড়ল ও তার দলবল এখন তৃণমূলের দিকেই ঘেঁষে আছে। বিবাদের পেছনে এটাও একটা কারন”। ঘটনা প্রসঙ্গে সাঁইথিয়ার বিডিও স্বাতী দত্ত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “ঘটনা জানার পরই পুলিশ হস্তক্ষেপ করেছে। উভয় পক্ষকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। ব্লক প্রশাসনের তরফ থেকেও চেষ্টা চলছে দ্রুত সমস্যার নিষ্পত্তি ঘটানোর”।
0 Comments