জলবায়ুর পরিবর্তন গোটা বিশ্বের মানুষকে চিন্তায় রেখেছে। খরা, বন্যা, সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি অনেক সময় মানুষকে বাসস্থান ছাড়া করেছে। এ কারণে মানুষের সামনে অনেক সময়ই সমস্ত দরজা বন্ধ হয়ে যায়। সহায়তাও আসে সামান্যই। সমস্যার একটি অংশ হ’ল প্রবাসী, আশ্রয়প্রার্থী এবং শরণার্থীরা। আবহাওয়ার কারণে অনেককেই নিজেদের দেশ ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হচ্ছে।
কোনও দেশের আইন সাধারণত হিংসা, শরণার্থীদের দিকেই নজর দেয়। দুঃখের বিষয় এগুলির দিকে নজর দিলেও পরিবেশের প্রতি নজর বড় একটা দেয় না কেউ। কোনও দেশেই পরিবেশ সংক্রান্ত কোনও আইন সেভাবে নেই। পরিবেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন যদিও হয়। এছাড়া শরণার্থী নিয়েও আন্তর্জাতিক সম্মেলন হওয়ার উদাহরণ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গ্লোবাল কমপ্যাক্ট ফর সেফ (Global Compact for Safe),অর্ডারলি অ্যান্ড রেগুলার মাইগ্রেশন (Orderly and Regular Migration) এবং গ্লোবাল কমপ্যাক্ট ফর রিফিউজিস (Global Compact for Refugees)। এই সম্মেলনে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও পরিবেশগত অবনতি নিয়ে আলোচনা হয়।
কিন্তু এর কোনও আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। বাইডেন প্রশাসন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের সনাক্ত ও সহায়তা করার উপায় অনুসন্ধান শুরু করেছেন। তবে এই প্রক্রিয়া বেশ জটিল। প্রায়শই দেখা যায় জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি মানুষকে বাস্তচ্যুত করতে পরিবেশগত চাপগুলিও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তার ফলে মানুষ অন্য জায়গায় চলে যেতে বাধ্য হয়। পরিবেশ তাদের স্থানান্তরিত করতে চাপ দেয়। এর উদাহরণও রয়েছে। গুয়াতেমালা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পথে অনেকে মারাত্মক খরা বা ঝড়ের কবলে পড়েছেন। তবে অনেকে আবার কাজের সন্ধানে অন্য দেশে পাড়ি জমান। এখনও পর্যন্ত ঠিক কতজন জয়বায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রবাসী হয়েছেন তার সঠিক কোনও প্রমাণ নেই। কিন্তু বর্তমানে এর সংখ্যা অনেক বেশি। আগামী বছরগুলিতে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আরও বেশি সংখ্যাক মানুষের দেশান্তর ঘটবে বলে আশঙ্কা। সংখ্যাটি হতে পারে 8 বিলিয়ন।
ফলে বিশ্বজুড়ে বড়সড় চাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে এর প্রধান কারণ হল খরা। এক্ষেত্রে যেহেতু প্রয়োজন তীব্র হয়, তাই অনেকেই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে দেশান্তরিত হন। গত ১০ বছরে বিশ্বব্যাপী দুর্যোগের কারণে বছরে ২৩ মিলিয়নেরও বেশি লোক স্থান পরিবর্তন করেছেন। যদিও তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই তাঁদের নিজের দেশেই রয়েছেন বলে জানিয়েছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার স্টেট অফ দ্য গ্লোবাল জলবায়ু সংক্রান্ত রিপোর্ট (World Meteorological Organization’s State of the Global Climate)। তবে ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার ১৪৩ মিলিয়ন লোককে ২০৫০ সালের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য হবেন তা নিয়েও রয়েছে আশঙ্কা।
0 Comments