নিজস্ব প্রতিনিধি , রামপুরহাট, ৯ জুলাই ঃ বাবার পাশে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে দাঁড়িয়েছিল রেড ভলন্টিয়ারের সদস্যরা। এবার জন্মদিনের অনুষ্ঠান বন্ধ রেখে রেড ভলন্টিয়ারদের অক্সিজেন যোগালেন প্রতিবন্ধী ছেলে। কেক কেটে প্রতিবন্ধী যুবকের জন্মদিনের আনন্দ উপভোগ করে নিলেন রেড ভলন্টিয়ারের সদস্যরা।
রামপুরহাট পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের চাকলামাঠের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ রায় ও দেবযানী রায়ের একমাত্র পুত্র দেবজিৎ শিশু অবস্থা থেকেই অস্বাভাবিক। তবে মা – বাবার স্নেহ এবং যত্নে সে ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠে। স্বাভাবিক চলাফেরা কিংবা কথাবার্তা বলতে না পারলেও মানবিকতা বোধ তাঁর মধ্যে রয়েছে একশো শতাংশ। ছেলেকে হাসিখুশির মধ্যে রাখতে রায় পরিবার প্রতিবছর ছেলের জন্মদিন পালন করে। ৪ জুলাই তাঁর ২৬ বছর জন্মবার্ষিকী ছিল। কিন্তু তাঁর আগেই প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পরেন বাবা বিশ্বজিৎ রায়। শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। খবর পেয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার কাঁধে নিয়ে রায় বাড়িতে পৌঁছে যান রেড ভলন্টিয়ারের সদস্যরা। বিশ্বজিৎবাবুকে সুস্থ করে তুলতে ঘন ঘন রায় বাড়িতে পৌঁছে ছিলেন রেড ভলন্টিয়ারের সদস্যরা। তখনই তারা জানতে পারেন দেবজিতের জন্মের বিষয়টা। সেই মতো শুক্রবার সকালে কেক নিয়ে রায় পরিবারে হাজির হন রেড ভলন্টিয়ারের সদস্য রাহুল চট্টোপাধ্যায়, তারিক ইসলাম, পার্থ প্রতিম গুহ, ঝিলিক কর্মকার, সুশান্ত মণ্ডল, দেবারতি বিশ্বাস, সঞ্জীব মল্লিক, ইউসুফ আলিরা। সেখানেই কেক কেটে অনাড়ম্বর জন্মদিন পালন করেন তারা। তাদের এই কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হয়ে নিজের জীবনের সঞ্চিত অর্থ রেড ভলন্টিয়ারের সদস্যদের হাতে তুলে দেন দেবজিৎ।
রাহুল বলেন, “আমরা জানতাম না দেবজিত এভাবে আমাদের হাতে তাঁর সঞ্চিত অর্থ তুলে দিয়ে আমাদের উৎসাহকে অক্সিজেন যোগাবে। ও আর পাঁচজন মানুষের মতো স্বভাবিক চলাফেরা কিংবা কথাবার্তা বলতে না পারলেও মানবিকতার দিক থেকে সবকে হার মানিয়েছে। আমরা দেবজিতের কর্মকাণ্ডে আরও উদীপ্ত হলাম”।
বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “আমি রামপুরহাট আদালতে সামান্য কপিরাইটের কাজ করি। স্ত্রী আদালতের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। ছেলের জন্মের এক-দু মাস পর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। অনেক চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা তাকে বাঁচিয়ে তুলতে পারলেও বাম পা অসার হয়ে যায়। কথাবার্তা শিশু সুলভ। তবে ওকে কোনদিন সমস্যার কথা বুঝতে দিইনি। এই অবস্থাতেয় ছেলে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছে। প্রতিবছর ছেলের জন্মদিন পালন করি ৪ জুলাই। কিন্তু এবার আমি অসুস্থ হয়ে পরায় জন্মদিন পালন করা হয়নি। কিন্তু সেই অভাব পূরণ করেছে রেড ভলন্টিয়ারের সদস্যরা। আর তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে আমার ছেলে। যেদিন ওরা আমার বাড়িতে এসে অক্সিজেন লাগিয়ে গিয়েছিল সেদিন থেকেই ওদের পাশে থাকার কথা বার বার বলেছে ছেলে। তাই ছেলে নিজের সঞ্চিত অর্থ তুলে দিয়েছে রেড ভলন্টিয়ারদের হাতে। আমিও চাই ওরা আরও আরও মানুষের পাশে দাঁড়াক। ঈশ্বর ওদের সঙ্গে আছে”।
0 Comments