সকলের মঙ্গল কামনা ও বিশ্বশান্তির লক্ষেই খ্রিস্টমাস পালন করলেন কুষ্ঠ রোগীরা
বিশ্বরূপ দে : একদিকে যখন ২৫শে ডিসেম্বর প্রভু যীশুর জন্মদিন উপলক্ষে বিশ্বব্যাপী মহা ধুমধামের সাথে খ্রিস্টমাস উৎসব পালন করা হচ্ছে, তখন আরেকদিকে দুর্বিসহ জীবনযাত্রার মধ্যেই খ্রিস্টমাস উৎসব পালন করলেন ঝাড়খণ্ডের জামতারা জেলা অন্তর্ভুক্ত সেনপুর হাসিপাহারির কুষ্ঠ কলোনির মানুষেরা ।
খ্রিস্টধর্মাবলম্বী মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন সাঁওতাল জনজাতির বসবাস এই গ্রামে । কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন নির্বাহী প্রত্যেকের সম্মিলিত উদ্যোগ ও যথাসাধ্য প্রচেষ্টায় এই গ্রামে পালিত হলো প্রভু যীশুর জন্মদিন । সন্ধ্যা নামতেই আলো আর রঙিন কাগজের মালায় সাজিয়ে তোলা হয় সমগ্র গ্রামটিকে । ক্ষনিকের জন্য শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও অন্তরের ব্যাথা দূরে সরিয়ে রেখে কলোনির ছোট থেকে বড় সকলেই আনন্দে মেতে উঠলেন প্রভু যীশুর জন্মদিনে ।
জানা গেল, বিগত দিনে ফাদার এলবার্ট নামের একজন খ্রিস্টীয় সন্যাসীর উদ্যোগেই এখানে গড়ে ওঠে কুষ্ঠ কলোনি । বাসস্থান গড়ে দেওয়ার পাশাপাশি প্রভু যীশুর উদ্দেশ্যে প্রার্থনার জন্য কলোনির একপাশে ছোট্ট একখানি প্রার্থনা কক্ষও নির্মাণ করে দেন তিনি । আর তারপর থেকেই জাতপাতের বিভেদ ভুলে কলোনির প্রত্যেক মানুষ সম্মিলিত ভাবে এই দিনটিতে প্রভু যীশুর কাছে সকলের মঙ্গল কামনা এবং বিশ্বশান্তির উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করে থাকেন ।
মনুষ্য জাতি সহ সমগ্র বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা হলেন স্বয়ং পরমেশ্বর - যিনি এক ও অভিন্ন । অথচ পরমেশ্বর দ্বারা সৃষ্ট সেই মানুষই তার আরাধ্য দেবতাকে জাতপাতের বিভেদে ধর্মের নামে বিভক্ত করেছে এবং সেই দেবতাকে কেউ ডাকে কৃষ্ণ, কেউ ডাকে খ্রিস্ট, আবার কেউ বলে আল্লাহ । কিন্তু ঈশ্বর বা পরমেশ্বর সর্বদাই এক ও অভিন্ন ।
"জাতপাতের বিভেদ ভুলে, একে অপরের সাথে সৌভাতৃত্ব গড়ে তুলে বিশ্বময় শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়াই সর্বধর্মের মূল মন্ত্র । আর তাই সকলের মঙ্গল কামনা ও বিশ্বশান্তির লক্ষ্যেই সর্বজাতি সমন্বয়ের মধ্যে দিয়ে আজকের এই বিশেষ দিনে প্রভু যীশুর কাছে আমাদের প্রার্থনা" - এমনটাই বললেন সেনপুর হাসিপাহারির কুষ্ঠ কলোনির বাসিন্দা দিলীপ সোরেন, রামু, বাবু, চন্ডী বাউড়ি, ফুলমণি ও চঞ্চলারা ।
উল্লেখযোগ্য বিষয়, তাদের এই উৎসবে সামিল হয়ে নানাভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন "সিএলডব্লিউ"-এর অঞ্জন সরকার সহ চিত্তরঞ্জন এলাকার বেশ কিছু সহৃদয় ব্যক্তি । এতে স্বভাবতই খুশি হয়েছেন সমাজে "ব্রাত্য" হয়ে পড়ে থাকা কুষ্ঠ কলোনির মানুষেরা ।
0 Comments