পুরনির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগ সিপিআই প্রার্থীর
বিশ্বরূপ দে : কলকাতার পুর নির্বাচনের ঠিক দুদিন আগে ৮২নং ওয়ার্ডের তৃনমূল কংগ্রেস প্রার্থী তথা পুরসভার বিদায়ী প্রশাসক ও রাজ্যের মাননীয় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগ করলেন এই ওয়ার্ডেরই বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিআই প্রার্থী পারমিতা দাসগুপ্ত ।
নির্বাচনী প্রচারের অন্তিম দিন অর্থাৎ শুক্রবার দলীয় কার্যালয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,"বামফ্রন্ট আমলের যাবতীয় প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়নকে হাতিয়ার করে, তার ওপর একটু রংচং মাখিয়ে ঝাঁ-চকচকে রূপ দিয়ে নিজেদের উন্নয়ন বলে দাবি করে মানুষকে ভাঁওতা দিয়ে চলেছে তৃনমূল সরকার । ৮২ নং ওয়ার্ডও এর ব্যতিক্রম নয় । সুতরাং তৃনমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের আমলে উন্নয়ন তো দূর, বরং বহু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে সেগুলোকে পুরোদমে ব্যবসায়িক ক্ষেত্র বানিয়েছে তারা । আর এসবের বিরুদ্ধে বামেরা যখনই মানুষকে সাথে নিয়ে আন্দোলনের পথে নামার চেষ্টা করেছে, তখন কোথাও পুলিশ দিয়ে, কখনো আবার দলীয় গুন্ডাবাহিনী দ্বারা ভয় দেখিয়ে বামেদের কাছ থেকে মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে প্রলোভনের রাজনীতির ফাঁদে তাদের আবদ্ধ করে রাখছে তৃনমূল"।
এলাকার পুরসমস্যার সমাধান অর্থাৎ ৮২নং ওয়ার্ডের পুরউন্নয়ন কি আদৌ হয়নি তাহলে ? এ প্রশ্নের উত্তরে সিপিআই প্রার্থী পারমিতা দাসগুপ্ত বলেন যে তৃনমূল পরিচালিত পুরবোর্ড দ্বারা এই ওয়ার্ডের উন্নয়ন যে কি বা কতটা হয়েছে তা ওয়ার্ড পরিক্রমা করলেই বোঝা যায় । উদাহরণ স্বরূপ তিনি বলেন,"নিকাশি ব্যবস্থার বেহাল দশা । অল্প বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে আলিপুর রোড ও তৎসংলগ্ন সমগ্র অঞ্চল । এমনকি চেতলায় খোদ ফিরহাদ হাকিমের বাড়ির সামনেও বৃষ্টির জল জমে থাকে । দীর্ঘদিন ধরে জমা জল থেকে ডেঙ্গু সংক্রমিত হতে হয় এলাকাবাসীদের । এলাকার জমা জল দ্রুত নিকাশের জন্য কোন তৎপরতা গ্রহণ করতে দেখা যায় নি তৃনমূল প্রার্থীকে । ফলে বিগত দিনে ওয়ার্ডের বহু মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল । এই তো উন্নয়নের ছবি"।
ওয়ার্ডের প্রাথমিক স্কুল সম্মন্ধে মারাত্মক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সিপিআই প্রার্থী বলেন,"এলাকার প্রাথমিক স্কুলগুলোকে সংস্কার করা তো দূর অস্ত, উল্টে সেগুলোকে রীতিমতো ভাড়া বাড়িতে পরিণত করা হয়েছে । প্রাথমিক স্কুলের গায়ে বোর্ডটিই শুধু টাঙানো, আসলে তা টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে । আলিপুর রোড সংলগ্ন একটি প্রাথমিক স্কুলের নাম পরিবর্তন করে নিজের মায়ের নামে স্কুলটিকে অনুষ্ঠান বাড়ি তৈরি করে ফেলেছেন তৃনমূল প্রার্থী ফিরহাদ হাকিম । শুধু তাই নয়, বাম জমানায় এলাকায় একটি প্রসূতি হাসপাতাল ছিল । সেটির কোন অস্তিত্বই নেই বর্তমানে । আর ফিরহাদ হাকিমের বাড়ির বিপরীতে যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে সম্প্রতি "মেয়র'স হেল্থ ক্লিনিক" বলে চালানো হচ্ছে, সেটিও বিগত দিনের বাম জমানার তৈরি । পুরনো ভবনটিকে শুধুমাত্র নীল-সাদা রঙে সাজিয়ে তুলেছেন তারা । ওয়ার্ডের ১০০ দিনের কাজ অন্তর্ভুক্ত শ্রমিকদের ক্ষোভের কথাও জানালেন বাম প্রার্থী । অভিযোগ, তাদের নির্ধারিত বেতনমূল্যের চাইতে কম দেওয়া হয়, তাও আবার অনিয়মিত"।
এত দুর্নীতি সত্বেও বারংবার এই ওয়ার্ড থেকে তৃনমূল প্রার্থীরাই বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে আসছেন, এটা কোন ম্যাজিক ? উত্তরে বাম প্রার্থীর সংক্ষেপে একটাই জবাব - "প্রলোভন আর সন্ত্রাসের ম্যাজিক"। তাহলে এর বিরুদ্ধে আপনাদের ভূমিকা বা আন্দোলন কোথায় ? বাম প্রার্থীর বক্তব্য যে তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা দলগতভাবে বিগত দিনেও প্রতিবাদ করেছি, এখনো করছি । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মানুষকে নিয়ে । কারণ জনগন তৃণমূলের সন্ত্রাসে এতটাই ভীত যে সব বুঝেও তারা মুখ বুজে রয়েছে । তবে হ্যাঁ, এটাও সত্যি যে নিঃসন্দেহে আমরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষকে প্রতিবাদমুখী হয়ে ওঠার সাহস জোগাতে পারিনি, অবশ্যই এটা আমাদের ব্যর্থতা । তবে করোনাকালে বামপন্থী ছাত্রযুবদের রেড ভলান্টিয়ার্স টিম যেভাবে মানুষের পাশে ছিল তাতে গতবারের চাইতে এবারে আমাদের আসন সংখ্যা বাড়বে বলেই আশা করছি । পাশাপাশি ৮২নং ওয়ার্ডে তৃণমূলের ভোট কিছুটা হলেও কমবে বলে জানিয়েছেন সিপিআই প্রার্থী পারমিতা দাসগুপ্ত ।
আর সেই নিরীখে এই ওয়ার্ডে এবার বামেদর ভোট বাড়বে বলেই আশাবাদী বাম প্রার্থী । তবে নির্বাচনের দিন শাসকদল যদি কোনরকম গন্ডগোল পাকিয়ে মানুষকে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোটদান করতে বাধা দেয়, সেক্ষেত্রে আমরা প্রতিরোধে নামবো । কারণ ইতিমধ্যেই রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারি বলেছেন যে তৃনমূল যদি ভোট লুঠ করতে তাদের গুন্ডাবাহিনীকে ব্যবহার করে তাহলে তারাও নাকি প্রস্তুত । কিন্তু আমারা মনে করি, তৃণমূল আর বিজেপি একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ । দুই দলের মধ্যে একটা গোপন আঁতাতের পরেই হয়তো শান্তিপূর্ণ ভোট বানচাল করতে শুভেন্দুর এই মন্তব্য, যা স্বাভাবিক ভাবেই নির্বাচনের আগে উত্তেজনার পারদ চড়াচ্ছে । সেক্ষেত্রে আমরা মানুষকে সাথে নিয়ে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে নামবো । সে বিজেপির বিরুদ্ধেই হোক বা শাসকদলের বিরুদ্ধে ।
তবে ৮২নং ওয়ার্ডের সিপিআই প্রার্থী পারমিতা দাসগুপ্তকে একেবারেই গুরুত্ব দিতে নারাজ ফিরহাদ হাকিম । তাঁর ছোট্ট এবং সাফ কথা যে ৩৪ বছরের বাম জমানা মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে, তাদের উন্নয়নও দেখেছে, সন্ত্রাসও । এখন বাংলায় তৃণমূলের জমানা, মানুষ তাদেরও দেখছে । যদি তৃনমূল দুর্নীতি আর সন্ত্রাসের রাজনীতি করেই থাকে তাহলে ২০১১-য় বাংলার মানুষ বামেদের গদিচ্যুত করলোই বা কেন, আর তারপর থেকে প্রত্যেকটা নির্বাচনে তৃনমূল মানুষের বিপুল সমর্থন পাচ্ছেই বা কেন ! মানুষই শ্রেষ্ঠ বিচারক । তাদের বিচার মাথা পেতে গ্রহণ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই । তাই এই নির্বাচনেও কারা দুর্নীতি বা সন্ত্রাস করেছে আর কারা সন্ত্রাসমুক্ত বাংলা গড়ে উন্নয়ন করছে - তার উত্তর দেবে জনগণ । বিরোধীরা তো বিরুদ্ধে বলবেই, তা নিয়ে তৃণমূলের এগিয়ে যাওয়া নয়, তৃণমূলের অগ্রগতি মানুষকে সাথে নিয়ে । কারণ মানুষের পাশে, মানুষের সাথে সর্বদা তৃণমূল কংগ্রেস ।
0 Comments