জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের ঘর থেকে উদ্ধার করছেন বিষধর সাপ
বিশ্বরূপ দে : "বন্যেরা বনেই সুন্দর, শিশু মাতৃক্রোড়ে" - চিরন্তন সত্য এই বাক্যটির যথার্থ রূপ দিয়েছে চিত্তরঞ্জনের পঞ্চপান্ডব ।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অন্যান্য বন্যপ্রাণীর পাশাপাশি সাপের ভূমিকা অনস্বীকার্য । কিন্তু সাপ সম্পর্কে সচেতনতার অভাবেই প্রাণীটিকে দেখা তো দূর, নামেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বহু মানুষ । আর তাই সাপটি বিষধর নাকি বিষহীন তা না বুঝে অনেক ক্ষেত্রেই পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় পরিবেশের অমূল্য সম্পদ এই প্রাণীটিকে । ফলে ক্রমশই বিলুপ্ত হতে চলেছে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ।
সাপের ভয় দূর করার লক্ষ্যে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি, চিত্তরঞ্জন এলাকায় কারো ঘরে সাপ ঢুকলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, প্রায় দু-দশক ধরে পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল সাব-ডিভিশন অন্তর্গত চিত্তরঞ্জন এলাকায় সাপ উদ্ধার করে আসছেন পিন্টু, অশোক, সিয়ারাম, অঙ্কন এবং মনজিৎ । তবে শুধু সাপই নয়, আহত অবস্থায় পড়ে থাকা কোন পাখি, হনুমান বা অন্যান্য প্রাণীকে উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের সম্পূর্ন সুস্থ করে প্রকৃতির কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার মতো মহৎ কাজের মধ্যে দিয়ে, বন্যপ্রাণ রক্ষা করে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন আসানসোল চিত্তরঞ্জনের এই "পঞ্চপান্ডব" । এদের মধ্যে কেউ কেউ সরকারি চাকুরিরত হওয়ায় সাপ উদ্ধারের ফোন পেলেই ছুটে যাওয়া সম্ভব হয় না । আর তাই অন্যান্যরাও সাপ উদ্ধারের প্রশিক্ষণ নিয়ে সাপ ও মানুষ - দুপক্ষেরই প্রাণ বাঁচিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ।
এই অঞ্চল থেকে বছরে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০টির মতো সাপ উদ্ধার করার রেকর্ড রয়েছে তাদের । উদ্ধারের পর বন দফতরের সহযোগিতায় তাদের লোকালয় থেকে বহু দূরে নিয়ে গিয়ে উন্মুক্ত বনাঞ্চলে ছেড়ে দেওয়া হয় । খরিশ, কেউটে, শাখামুটি, কালাচের মতো উগ্র বিষসম্পন্ন সাপের পাশপাশি বেশ কয়েকটি অজগর সাপও উদ্ধার করেছেন এই পাঁচ সাহসী যুবক । উদ্ধারের সময় বেশ কয়েকবার সাপের ছোবলও খেয়েছেন তাদের কেউ । আর তাই সংশ্লিষ্ট দফতর বা প্রশাসনের কাছে তাদের আবেদন, মৃত্যুর মতো দুর্ঘটনা এড়াতে এভিএস অর্থাৎ এন্টি ভেনাম সিরাম ও সাপ উদ্ধারের বিভিন্ন যন্ত্রাদি বহনের জন্য সরকারি ভাবে বিশেষ ও বৈধ অনুমতি প্রদান করা হোক ।
0 Comments