জাতিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে ও আদিবাসী অধিকার রক্ষায় পথে নামছে প্রতিবাদী ঐক্য মঞ্চ
বিশ্বরূপ দে : ১৭ই জানুয়ারি'২২ জাতিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে ও আদিবাসী অধিকার রক্ষায় রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ দিবসের ডাক দিয়েছে "প্রতিবাদী ঐক্য মঞ্চ"। প্রত্যেকটি জেলার জেলাশাসককে স্মারকলিপি দেওয়ার পাশাপাশি, কলকাতা সহ বেশ কয়েকটি শহরে এই ইস্যুতে প্রতিবাদ সভা সংগঠিত হবে । এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার জন্য সমস্ত গণতান্ত্রিক সংগঠন, কালেক্টিভ ও ব্যক্তিবর্গকে প্রতিবাদী ঐক্য মঞ্চের পক্ষ থেকে আহ্বান জানিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা মেরুনা মুর্মু, সমাজ গবেষক কুমার রানা, দিশম আদিবাসী গাঁওতার লবান হাঁসদা ও মনু হাঁসদা, AISA-এর স্বর্ণেন্দু মিত্র ও সাগুন হেমব্রম, AIPWA-এর ইন্দ্রানী দত্ত ও তিতাস গুপ্ত, আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চের সরস্বতী বেসরা ও রামনিবাস বাস্কে, নীলডাঙ্গা সমাজ সুসৌর গাঁওতার জিতেন টুডু ও সুশীল চক্রবর্তী, মেদিনীপুর মিউনিসিপ্যাল শ্রমিক ইউনিয়নের তপন মুখার্জি, AIPF-এর নির্মল ঘোষ, APDR মেদিনীপুরের বাণীকান্ত বারিক, সাঁওতালি সাহিত্য একাডেমি মেদিনীপুরের রবীন্দ্রনাথ সরেন ও সুরেন্দ্রনাথ হেমব্রম, এবং একুশের ডাক-এর পক্ষ থেকে মলয় তিওয়ারি, শামিম আহমেদ, শৈলেন মাইতি, অমিত দাসগুপ্ত ও প্রশান্ত গাঙ্গুলি প্রমুখ ।
আজ, ১৫ই জানুয়ারি প্রতিবাদী মঞ্চের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি জারি করে এই কর্মসূচির ঘোষণা করা হয় ।
উক্ত বিবৃতির মাধ্যমে প্রতিবাদী ঐক্য মঞ্চের আহ্বায়কগণ জানিয়েছেন, ১৭ জানুয়ারি রোহিত ভেমুলার শহীদ দিবস । রোহিতের প্রাতিষ্ঠানিক হত্যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতবিদ্বেষি অবমাননার নিষ্ঠুর বাস্তবতা সামনে এনেছিল, দেশজুড়ে যুবসমাজ আলোড়িত হয়েছিল । সম্প্রতি আমাদের রাজ্যে সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা পাপিয়া মাণ্ডি জাতিবিদ্বেষি অবমাননার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে লড়াই শুরু করেছেন । লড়াইটা কঠিন, এখানে জনমানসে ধারণা ছড়িয়ে দেওয়া আছে যে "এরাজ্যে তেমন জাতপাতের নিপীড়ন নেই"। পাপিয়া মান্ডি যে মাটিতে দাঁড়িয়ে লড়ছেন সেই মাটিতেই চুনি কোটালকে প্রাণ দিতে হয়েছিল । বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলনের পথে ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করায় সবং কলেজের একজন অভিযুক্ত অধ্যাপক সাসপেণ্ড হয়েছেন । কিন্তু অন্য অভিযুক্ত, কলেজের অধ্যক্ষ, নিজের পদে বহাল আছেন এবং পাপিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন । পুলিশ এখনও চার্জশিট দেয়নি, কাউকে গ্রেপ্তার করে নি । কলেজের সভাপতি তথা এলাকার বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী শ্রীযুক্ত মানসরঞ্জন ভুঁইয়া ইতিমধ্যেই অভিযুক্তদের আড়াল করে প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়েছেন । পাপিয়ার লড়াইয়ের পাশে এখন আমাদের দাঁড়ানো একান্ত প্রয়োজন ।
সম্প্রতি মালদায় এক আদিবাসী স্কুলশিক্ষক যুবককে অপমান করে মারধর করা হল, বালুরঘাটের একজন পদস্থ সরকারি কর্মচারী জাতবিদ্বেষের শিকার হলেন, রবীন্দ্রভারতী, প্রেসিডেন্সি ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও এধরনের বিভিন্ন ঘটনা বারবার সামনে আসে । কাঁথির সাবাজপুট সম্বোধী শিক্ষাতীর্থ স্কুলের কর্মচারী শবরকন্যা মৌসুমি দাস কল্লাটকে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দ্বারা অবমাননা ও হেনস্থার ঘটনাও সামনে এসেছে ।
ব্যক্তি স্তরে অবজ্ঞা ও অবমাননার এইসব ঘটনাগুলি কাঠামোগত বৈষম্য ও বঞ্চনার সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত । এসসি-এসটি নিপীড়ন নিবারণ আইনকে লঘু করে যেমন সুবিচার থেকে বঞ্চনা করা হয়, তেমনই অরণ্যের অধিকার আইনকে অগ্রাহ্য করে আদিবাসীদের জমির অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয় । সংরক্ষণের সাংবিধানিক অধিকারকেও বিভিন্ন কায়দায় ফাঁকি দেওয়া হয় । সাঁওতালি ভাষা রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার ভাষা হওয়া সত্ত্বেও বহু যুগ ধরে শিক্ষা ও চাকরির জগতে তাকে চরম বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে । বিপুল সংখ্যক আদিবাসী জনতার বসবাস সত্ত্বেও রাজ্যের কোনও এলাকাকে পঞ্চম তপশিলের অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি । এইসব কাঠামোগত বৈষম্য দৈনন্দিন জাতিবিদ্বেষি হেনস্থার মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে । বর্তমানে ডেওচা খনি প্রকল্পেও আক্রমণ ও উচ্ছেদের নিশানা বানানো হচ্ছে সেখানকার আদিবাসী মানুষদের ।
এই সমস্ত বিষয়গুলি তুলে ধরতে, পাপিয়া মান্ডির লড়াইকে শক্তি যোগাতে, ডেওচা-পাচামির বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে আগামি ১৭ই জানুয়ারি, রোহিত ভেমুলার শহীদ দিবসে, রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদী কর্মসূচীর ডাক দিয়েছে প্রতিবাদী ঐক্য মঞ্চের অধীন বিভিন্ন গণ সংগঠন ।
ওইদিন রাজ্যের প্রত্যেকটি জেলার জেলাশাসকদের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হবে । এছাড়া কলকাতা সহ কয়েকটি শহরে প্রতিবাদসভা সংগঠিত হবে । এই কর্মসূচীগুলিতে সমস্ত গণতান্ত্রিক সংগঠন, কালেক্টিভ ও ব্যক্তিবর্গকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রতিবাদী ঐক্য মঞ্চের আহ্বায়কগণ ।
0 Comments