ঝাড়খণ্ডের কুষ্ঠ রোগীদের পাশে "অর্চি" ও স্থানীয়রা
ঝাড়খন্ড থেকে
বিশ্বরূপ দে-র বিশেষ প্রতিবেদন : পশ্চিম বর্ধমানের চিত্তরঞ্জন-ঝাড়খন্ড সীমান্তবর্তী কাঙ্গুই পাহাড় সন্নিহিত হাসিপাহারি অঞ্চল সংলগ্ন স্নেহপুর গ্রামের কুষ্ঠ কলোনি । মাত্র একশো জন মানুষের বসবাস এই গ্রামটিতে । তার মধ্যে পুরুষ মহিলা সহ প্রায় তিরিশ জন মানুষ ভয়াবহ কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত । রোগাক্রান্ত এই মানুষগুলো দীর্ঘদিন ধরে বিনা চিকিৎসায় অবহেলিত হয়ে পড়ে থেকে শেষমেষ পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছেন । অঙ্গহানির ফলে কর্মক্ষমতা হারিয়ে অবশেষে ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমেই জীবন অতিবাহিত করতে বাধ্য হয়েছেন গ্রামের কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত মানুষেরা । বহু ক্ষেত্রে আমাদের তথাকথিত সভ্য ও সামাজিক মানুষের সামনে অসার ও জরাগ্রস্ত হাত দুটি বাড়িয়ে ভিক্ষার আবেদন করলেও "সভ্য" মানুষের "অবহেলা আর ঘৃণা" দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয় তাদের । এইভাবে চরম অবহেলা, বঞ্চনা আর ঘৃণা নিয়েই স্নেহপুর হাসিপাহারির প্রায় একশো মানুষ নিজের সন্তান-সন্ততি ও পরিজনকে বুকে আগলে রেখে মানুষের কাছ থেকে সামান্য একটু স্নেহ আর সহানুভূতির আশায় অবাক দৃষ্টিতে বসে থাকে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে ।
তবে মাঝেমধ্যে আমাদের এই সমাজেরই কিছু ব্যতিক্রমী মানুষ নিজেদের মানবিক মূল্যবোধের যথাযথ পরিচয় দিয়ে তাদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন । তাদের মধ্যে রয়েছে বামপন্থী ছাত্রযুব সংগঠনের "রেড ভলান্টিয়ার্স" টিম ।
করোনা প্যান্ডামিক পরিস্থিতিতে স্নেহপুরের কুষ্ঠ কলোনির অসহায় মানুষগুলোর মুখে দুবেলার অন্ন ও হাতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী তুলে দিয়ে মানবতার নজির সৃষ্টি করেছে "রেড ভলান্টিয়ার্স"। এমনকি চিত্তরঞ্জন এলাকার বহু মানুষ তাদের পারিবারিক কোন অনুষ্ঠানে এই গ্রামে এসে কুষ্ঠ আক্রান্ত মানুষদের সাথেই খাওয়া দাওয়ার আনন্দ উপভোগ করেছেন । কিন্তু এসব কোন স্থায়ী সমাধান নয় । আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে সরকার বা প্রশাসনিক মহলের ।
"সরকার পক্ষ চাইলে অসহায় এই মানুষগুলোর জন্য অনেক কিছুই করতে পারে । কিন্তু এদের দিকে তেমনভাবে নজর দেওয়া হয় না । ফলে একপ্রকার ব্রাত্য বা "অচ্ছুৎ" হয়ে সমাজে চরম বঞ্চনার শিকার হয়ে গ্রামের এককোনায় পড়ে থাকতে হচ্ছে এদের । এই মানুষগুলোকে বাঁচাতে হলে অবিলম্বে স্থায়ী চিকিৎসা ও সুষম খাদ্য সরবরাহের বন্দোবস্ত করা প্রয়োজন" -- এমনটাই বললেন হাসিপাহারির স্নেহপুর গ্রাম সংলগ্ন চিত্তরঞ্জন লোকমটিভ ওয়ার্কসের সিটু অনুমোদিত শ্রমিক নেতা ও সমাজসেবক চিন্ময় গুহ । করোনা প্যন্ডামিক পরিস্থিতিতে রেড ভলান্টিয়ার্স টিমের পক্ষ থেকে এই মানুষদের যেভাবে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে, তাতে প্রত্যেককে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি ।
সম্প্রতি বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে স্নেহপুর হাসিপাহারির কুষ্ঠ কলোনির মানুষদের অসহায় অবস্থার কথা প্রকাশিত হওয়ার পর, স্বতস্ফূর্ত ভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে কলকাতার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা "অর্চি"। শুক্রবার (২১শে জানুয়ারি,২০২২) এখানকার কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত মানুষদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনদানের লক্ষ্যে বিনামূল্যে স্থায়ী চিকিৎসা পরিষেবার উদ্বোধন করেন অর্চির প্রতিষ্ঠাতা প্রলয়েশ লাহিড়ী । ডঃ পবিত্র চৌধুরীর তত্বাবধানে বিশেষ এই চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রলয়েশ বাবু । সংস্থার এই প্রশংসনীয় মানবিক উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়েছেন চিত্তরঞ্জনের সিটু নেতা চিন্ময় গুহ এবং অঞ্জন সরকার, পিন্টু দাস, অঙ্কন দাস, মনজিৎ সিং, অশোক রাম ও শুভজিৎ ভৌমিক সহ অন্যান্য স্থানীয় যুবকেরা । সংস্থার এই উদ্যোগে স্বভাবতই খুশি হয়েছেন স্নেহপুর হাসিপাহারি অন্তর্ভুক্ত কুষ্ঠ কলোনির মুখিয়া দিলীপ সোরেন, রামু সরকার, ফুলমণি বাউড়ি, চঞ্চলা কুমারি, নাগিনা মাহাত সহ অন্যান্যরা ।
0 Comments