শিক্ষামন্ত্রীকে ভাঙা মেরুদন্ড উপহার দিতে গিয়ে গ্রেফতার SFI নেতাকর্মী
বিশ্বরূপ দে : রাজ্যের ভগ্ন শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতীক স্বরূপ শিক্ষামন্ত্রীকে ভাঙা মেরুদন্ড, বর্ণ পরিচয় ও সহজপাঠ উপহার দিতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হতে হলো SFI-এর রাজ্য সম্পাদক কমরেড সৃজন ভট্টাচার্য, সভাপতি প্রতীক উর রহমান সহ ১৭ জন নেতাকর্মীকে । এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠলো বিধাননগর নর্থ ডিভিশন অন্তর্গত করুণাময়ী এলাকা ।
কেন্দ্রের অপরিকল্পিত লকডাউনের ফলে এক আকস্মিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় জনজীবন । কাজ হারিয়ে বহু মানুষকেই বেকারত্ব বরণ করতে হয়েছে । নাটকীয়ভাবে আনলক পর্ব শুরু হওয়ার সাথে সাথেই সাধারণ মানুষ নতুন করে কর্মসংস্থান খুঁজে পাওয়ার দৌড় শুরু করেন । কিন্তু করোনার ক্রমাগত ধাক্কা, সরকারি বিধিনিষেধ আর লকডাউন ও আনলকের লুকোচুরিতে নাজেহাল হতে হয় শ্রমজীবী মানুষকে । চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয় অসংখ্য পরিবার । এক কথায় বলতে গেলে জীবনটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে সাধারন মানুষের ।
ঠিক সেই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মানুষের রুজি-রোজগারের কথা ভেবে বিশেষ কিছু বিধিনিষেধ অবলম্বন করার ঘোষণা করে বাজার, দোকান-পাট থেকে শুরু করে অফিস, কারখানা ও বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান চালু করার নির্দেশ জারি করেন । তাতে খুশি হন মানুষ । কিন্তু আজ পর্যন্ত স্কুল-কলেজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি নিয়মমাফিক খোলার কোন নির্দেশ জারি করা হলো না । ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া সেই অনলাইন আর প্রাইভেট টিউশন অর্থাৎ কোচিং সেন্টারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ।
গণ-পরিবহন, হাটবাজার, দোকান, রেস্তোরাঁ, জিম, সিনেমা হল, অফিস থেকে শুরু করে পাড়ার ক্লাব ও মদের দোকান সবই খোলা, অথচ বন্ধ শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান -- কেন ? এই প্রশ্ন তুলে সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল, শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে বহুবার রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে । কিন্তু সেক্ষেত্রে কানে তুলো আর চোখে এঁটুলি সেটে বসে থেকে ঋষি অরবিন্দকে ফাঁসিতে ঝোলাচ্ছেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী । আর তাঁর সুযোগ্য সাঙ্গপাঙ্গরা নেতাজি থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ, স্বামী বিবেকানন্দ - প্রত্যেককেই ধরে ধরে তৃণমূলী বানাচ্ছেন ।
ছাত্রছাত্রীদের পঠন-পাঠন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে কোন সদার্থক ভাবনা তো দূর, উল্টে তাদের অশিক্ষিত করে রাখার চক্রান্ত করে আগামীদিনে মদ আর "ক্লাব" কালচারের যোগ্য সন্তান তৈরি করার অপচেষ্টা করছে তৃনমূল পরিচালিত এই রাজ্যের সরকার । আর এই ষড়যন্ত্রকে লোকচোক্ষে ধামাচাপা দিতে ছাত্রভাতা, মোবাইলের প্রলোভন ইত্যাদি দেখিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ক্রমশ ধ্বংসের পথে নিয়ে চলেছে রাজ্য সরকার ।
ইতিমধ্যেই রাজ্যের সমস্ত "অচল শিক্ষায়তন" অবিলম্বে খোলার দাবিতে সরব হয়েছেন একাধিক শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠন ।
রাজ্যের এই ভগ্ন শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোমবার, ২৪শে জানুয়ারি SFI-এর পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতীক স্বরূপ ভাঙা মেরুদন্ড, সহজপাঠ ও বর্ণ পরিচয় নিয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে উপহার দিতে যাওয়ার পথে বিধাননগর নর্থ থানার পুলিশ বাধা দেয় সংগঠনের নেতাকর্মীদের । প্রথমে বাদানুবাদ এবং পরে ক্রমশ তা ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতিতে পরিণত হয় । বাধা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে SFI কর্মীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে তাদের ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ ।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে করুণাময়ী অঞ্চল । বিরোধী রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয় । তবে আগামীদিনে রাজ্যের এই ভগ্ন শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দিকে দিকে জোরদার ছাত্র-আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠন নেতৃত্ব ।
0 Comments