নরেন্দ্রপুর থানায় ছাত্রযুব ও মহিলাদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে আজ রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ দিবস
বিশ্বরূপ দে-র বিশেষ প্রতিবেদন
নাগরিক অধিকার ও সামাজিক ন্যায় আন্দোলনের অগ্রণী ছাত্রনেতা শরদিন্দু উদ্দীপনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে সোমবার ৭ই ফেব্রুয়ারি কামালগাজি মোড়ে বাম ছাত্র, মহিলা ও মানবাধিকার সংগঠনের বিক্ষোভ চলাকালীন নির্বিচারে লাঠি চালিয়ে বিক্ষোভকারিদের গ্রেফতার করে নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ । থানার ভেতর গণ-সংগঠনের মহিলা কর্মীদের অকথ্য গালিগালাজ করার পাশাপাশি, তাদের ধর্ষণ ও খুনের হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে । পরদিন ধৃতদের বারুইপুর আদালতে পেশ করা হলে দুজনের জামিন হয় এবং সাতজন এখনো জেল হাজতে রয়েছে । শুক্রবার ১১ই ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে ।
ছাত্র আন্দোলনে ওপর এই পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে গ্রেফতার হওয়া গণ-সংগঠনের কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ১০ই ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাজ্যজুড়ে এক প্রতিবাদ দিবসের ডাক দিয়েছে সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের ছাত্র সংগঠন AISA এবং মহিলা সংগঠন AIPWA সহ অন্যান্য গণ-সংগঠনগুলি ।
এবিষয়ে বুধবার ৯ই ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতি জারি করেন সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড দীপঙ্কর ভট্টাচার্য ।
উক্ত বিবৃতিতে তিনি বলেন - "সত্তরের দশকে যখন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ে ছাত্র ছিলাম, তখন নরেন্দ্রপুরে কোন থানা ছিল কিনা মনে নেই । তখন সম্ভবতঃ পুরো চব্বিশ পরগণা একটাই জেলা ছিল । এখন দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার মধ্যে বারুইপুর শুনছি আলাদা "পুলিশ জেলা" । আর নরেন্দ্রপুরে টের পেলাম শুধু থানা গড়ে ওঠে নি, রীতিমত পুলিশের রাজত্ব কায়েম হয়েছে । সম্প্রতি নাগরিক অধিকার ও সামাজিক ন্যায় আন্দোলনের কর্মী শরদিন্দু উদ্দীপনকে ঐ থানা দীর্ঘক্ষণ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন পোস্ট প্রসঙ্গে । গত ৭ই ফেব্রুয়ারি বিকেলে এই প্রসঙ্গে থানার বাইরে একটি প্রতিবাদ সভার কর্মসূচী নিয়েছিল ছাত্র সংগঠন AISA, নারী সংগঠন AIPWA এবং নাগরিক অধিকার সংগঠন এপিডিআর । সেই প্রতিবাদ সভা শুরু হতেই নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ সভা বানচাল করতে আচমকা আক্রমণ নামায় । শারীরিক নির্যাতন ও গালাগালি চলতে থাকে রাত পর্যন্ত । একবার ছেড়ে দিয়ে আবার আটক করে গণ-সংগঠনের ছাত্র ও মহিলা কর্মীদের । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে বর্তমান ও অতীতের কর্মীদের যোগাযোগের পরিচয় পেয়ে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়াতে থাকে পুলিশ । গভীর রাতে দুজন কর্মীকে ছাড়ার পর নজন কমরেডকে থানায় আটক করে রাখা হয় । চলতেই থাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন - বিশেষ করে মহিলা অ্যাক্টিভিস্ট সৌমি জানা ও বর্ষা বড়ালকে নিশানা করে । ৮ই ফেব্রুয়ারি বারুইপুর কোর্টে আটক অ্যাক্টিভিস্টদের তোলা হয় কোমরে দড়ি বেঁধে । আদালত সৌমি ও বর্ষার জামিন মঞ্জুর করেছে, কিন্তু অন্য সাতজনের পরবর্তী শুনানি আগামী ১১ তারিখ । প্রসঙ্গত উল্লেখ, যাদবপুরের ছাত্র আন্দোলন গণতন্ত্রের মজবুত দুর্গ । হায়দ্রাবাদ থেকে জেএনইউ ও জামিয়া, এলাহাবাদ ও বেনারস থেকে যাদবপুর, প্রতিবাদী ছাত্ররা গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে বারবার রুখে দাঁড়িয়েছে এই 'আচ্ছে দিন' ও অধুনা 'অমৃত কালের' কঠিন সময়ে । তাই রাষ্ট্রের কুৎসা ও দমনের তারা বিশেষ টার্গেট । একুশের নির্বাচনে রাজ্যকে বাঁচাতে বিজেপির বিরুদ্ধে জোরালো রায় দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ । কিন্তু সেই রাজ্যে গণতন্ত্রের জন্য সোচ্চার ছাত্র-মহিলা-নাগরিক অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা আজ বর্বর পুলিশী হানার মুখে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ গোয়া থেকে উত্তরপ্রদেশ, দেশ জুড়ে গণতন্ত্রের জন্য আওয়াজ তুলছেন । কিন্তু তাঁর নিজের রাজ্যে পুলিশের এই অত্যাচারের বিষয়ে নির্বিকার । তবে জবাব তাঁকে দিতেই হবে । বিগত বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার ছাত্রযুব-মহিলা ও সাধারণ মানুষ গণতন্ত্রের পক্ষে রায় দিয়েছিল, পুলিশ হাজতে ছাত্র ও নারী আন্দোলনের কর্মীদের উপর অত্যাচারের জন্য নয়"।
দোষী পুলিশ কর্মীদের উপযুক্ত শাস্তি ও ধৃতদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি চলতে থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাম আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র ও নারী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ।
0 Comments