ব্রেকিং নিউজ

6/recent/ticker-posts

আনিস খান হত্যার বিরুদ্ধে রাজপথে বাম ছাত্রযুবরা

আনিস হত্যার বিচারের দাবিতে নাগরিক মিছিলের ডাক দিল AISA

বিশ্বরূপ দে-এর বিশেষ প্রতিবেদন

   SFI নেতা কমরেড সুদীপ্ত সেনগুপ্ত এবং DYFI কর্মী কমরেড মঈদুল ইসলামের পর রাষ্ট্রীয় নেকড়েবাহিনীর শিকার হলেন বামপন্থী ছাত্রযুব আন্দোলনের আরো একজন অগ্রণী সৈনিক আনিস খান । 

  কর্মসংস্থানের দাবিতে ২০২১-এর নবান্ন অভিযানে পুলিশের বর্বরোচিত আক্রমণে DYFI কর্মী মঈদুল ইসলাম হত্যার একবছর পূর্তিতে যখন রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, ঠিক তখনই আরো একজন ছাত্রযুব নেতা আনিসের হত্যার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদে সংগঠিত হয়ে রাজ্যজুড়ে তৃণমূল সরকারের এই হত্যালীলার বিরুদ্ধে পথে নেমে ধিক্কার, প্রতিবাদ এবং দোষীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির দাবি তুলেছে সকল বামপন্থী ছাত্রযুব সংগঠন ও গণতান্ত্রিক মহল ।

  NPR, NRC ও CAA বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক ছিলেন হাওড়া জেলা অধীনস্ত আমতার যুবক তথা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আনিস খান । তাঁর পরিবারের কথা অনুযায়ী, ১৮ই ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ শুক্রবার রাতে তিনজন সিভিক ভলান্টিয়ার এবং একজন পুলিশ আধিকারিক হঠাৎই এসে হাজির হন তাদের বাড়িতে । কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই একপ্রকার বলপূর্বক তারা বাড়িতে প্রবেশ করে সিড়ি বেয়ে তিনতলার ঘরে চলে যায় । সামান্য সময়ের ব্যবধানেই আবার নিচে নেমে আসে । এরই মধ্যে বিকট এক শব্দ শুনে তিনতলায় উঠে যান বাড়ির লোকজন এবং দেখেন বাড়ির নিচে পরে রয়েছে আনিস খানের নিথর দেহ । সিভিক ভলান্টিয়ার এবং ওই পুলিশ আধিকারিককে কিছু প্রশ্ন করার আগেই ঘটনায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন আনিসের পরিবার । ওই চারজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়, তাদেরই মধ্যে এক সিভিক ভলান্টিয়ার পুলিশ আধিকারিককে বলেন "চলুন স্যার, কাজ হয়ে গেছে"। 

  কারা ওরা ? সত্যিই কি সিভিক ভলান্টিয়ার এবং পুলিশ ! নাকি পুলিশের পোশাক পরা শাসকদল আশ্রিত কুখ্যাত খুনেবাহিনী ! বিষ্ময়কর এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে রাজ্যের সরকারকেই । সমস্ত বামপন্থী ছাত্রযুব সংগঠনের পাশাপাশি, গণতান্ত্রিক মহলের দাবি, একাধারে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে আনিসের এই নৃশংস হত্যার জবাবদিহি করতেই হবে । এর পাশাপাশি, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে নিজেদের জাহির করা সংবাদমাধ্যম আজ সম্পূর্ণরূপে চটিচাটা দালালে পরিণত হয়েছে, তাই আনিস হত্যার বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে কোন প্রশ্ন করার সাহস দেখাতে পারে না বলেই মনে করেন বাম গণতান্ত্রিক মানুষ । 

  তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী আব্দুস সাত্তারের সময়ে নিউটাউনের বিরাট এলাকা জুড়ে মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার জন্য গড়ে তোলা হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়টি । ২০১১-য় তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতা দখলের পর বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজও হয়েছে এই শিক্ষাঙ্গনে । কিন্তু ছাত্রদের খেলাধুলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যে জমি বরাদ্দ ছিল, তা রাজ্যের তরফে স্বাস্থ্য দফতরকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায় । সর্বপ্রথম এর চরম প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন আনিস । ছাত্রযুব সমাজকে একত্রিত করে আন্দোলন শুরু করেছিলেন । এছাড়া ফি-বৃদ্ধি, ছাত্রছাত্রীদের জন্য হোস্টেল ও অন্যান্য দাবিতেও সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে বিরুদ্ধতার আওয়াজ তুলেছিলেন আনিস । এমনকি NRC-র প্রতিবাদে যখন দেশ এবং বাংলা জুড়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছিল, তখনও সেই আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলেন আনিস । শাসকদলের নানা প্রলোভন উপেক্ষা করে ছাত্রযুবদের আন্দোলনমুখী করে তুলতে সর্বদা নেতৃত্ব দিয়ে এসেছিলেন আনিস । 

  ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস ও আইএসএফ জোটের একমাত্র বিজয়ী প্রার্থী ভাঙরের নওশাদ সিদ্দিকী । জয়ের পর ভাঙরের বিভিন্ন জায়গায় তাঁর কর্মীদের ওপর হামলা হয় । ঘরছাড়া হয়েছিলেন বহু দলীয় কর্মী । তাদের মধ্যে আনিসও ছিলেন । আর শুক্রবার অর্থাৎ ১৮ই ফেব্রুয়ারি তাঁর ঘরে ফেরার খবর জানতে পেরেই আনিসের বাড়িতে হানা দেয় ওই চারজন দুষ্কৃতী । রীতিমতো আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে আনিসের বাবাকে আটকে রেখে তারা চলে যায় তিনতলার ঘরে, যেখানেই ছিলেন আনিস । মারধরের পর ছাদের ওপর থেকে তাঁকে নিচে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয় । ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় আনিস খানের । 

  অন্যদিকে পুলিশ জানিয়েছে যে ওইদিন রাতে থানা থেকে কোন পুলিশ আনিসের বাড়িতে যায় নি । তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে "কারা ওরা" ? সন্দেহের তীর শাসকদলের দিকেই উঠছে । কারণ, তাঁর পরিবারের কথা অনুযায়ী, শাসকদল আশ্রিত গুন্ডাবাহিনী একাধিকবার আনিসকে খুনের হুমকি দিয়েছিল । যদিও সবই অভিযোগ । সঠিক তদন্ত হলে তবেই প্রকাশ পাবে সত্য । আর তাই আনিস হত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে দোষীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির দাবি তুলেছে প্রত্যেকটি বাম সংগঠন ও রাজ্যের গণতান্ত্রিক মহল । 

  আনিস খান হত্যার প্রতিবাদে রবিবার দক্ষিণ কলকাতার আলিপুর সংলগ্ন মনি সান্যাল সরনী (চেতলা সেন্ট্রাল রোড)-তে এক প্রতিবাদ সভার মধ্যে দিয়ে বিক্ষোভ ও পথ অবরোধ কর্মসূচি সংগঠিত করে AISF, AIYF, SFI ও DYFI । সংগঠনের দাবি, ছাত্রযুবদের ওপর তৃণমূল সরকারের এই পুলিশি হামলা ও হত্যা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে । পাশাপাশি, পুলিশের ছদ্মবেশে যারা আনিসকে হত্যা করেছে তাদের চিহ্নিত করে কঠিনতর শাস্তির বন্দোবস্ত করার দাবি তুলেছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা ।

  এর পাশাপাশি, ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা শহীদ দিবসের দিন "গণতন্ত্র বাঁচাও, মানবতা বাঁচাও" এই স্লোগানকে সামনে রেখে আনিস হত্যাকান্ডের ন্যায় বিচারের দাবিতে, সোমবার বেলা তিনটেয় ধর্মতলা থেকে মহাজাতি সদন পর্যন্ত এক নাগরিক মিছিলের ডাক দিয়েছে সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের ছাত্র সংগঠন AISA (অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন)।

Post a Comment

0 Comments