ছাত্রনেতা খুনের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানালো সিপিআই (এমএল) লিবারেশন
বিশ্বরূপ দে-র বিশেষ প্রতিবেদন
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা তথা NPR, NRC ও CAA বিরোধী আন্দোলনের অগ্রণী সৈনিক আনিস খান হত্যার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে বাম গণতান্ত্রিক ছাত্রযুবদের ধিক্কার ও বিক্ষোভের পাশাপাশি, রাজ্যের আইন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অবিলম্বে রাজ্যের পুলিশমন্ত্রীর পদত্যাগ করার দাবিও উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে ।
রবিবার সিপিআই-সিপিআইএম সহ অন্যান্য বাম সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজ্যজুড়ে আনিস খান হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় । কলকাতার বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে পথ অবরোধ ও মোমবাতি প্রজ্বলনের মধ্যে দিয়ে আনিস হত্যার বিচারের দাবিতে সরব হন বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা । এবিষয়ে সোমবার বিকেলে AISA-র পক্ষ থেকে এক নাগরিক মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে । মঙ্গলবারও বেহালা চৌরাস্তার মোড় থেকে আনিস হত্যার তদন্ত ও ন্যায় বিচারের দাবিতে মিছিলের আহ্বান জানিয়েছে AISA । রবিবার আনিস খানের বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবা ও পরিবারের অন্যান্যদের সাথে দেখা করেন DYFI ও AISA-র নেতৃবৃন্দ ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ, শুক্রবার রাতে হাওড়া আমতার বাসিন্দা, তথা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আনিস খানের বাড়িতে তিনজন সিভিক ভলান্টিয়ার এবং একজন পুলিশ আধিকারিক বলপূর্বক প্রবেশ করে তিনতলার ঘর থেকে মারতে মারতে ছাদ থেকে নিচে ছুড়ে ফেলে দেয় আনিসকে । ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর । যদিও পুলিশের বক্তব্য, ওইদিন রাতে থানা থেকে কোন পুলিশই আনিসের বাড়িতে যায় নি । তাহলে কারা ওরা ? নিজেদের আড়াল করতে পুলিশের সাজানো গল্প, নাকি পুলিশের পোশাক পরে তৃণমূল আশ্রিত খুনেবাহিনীর নারকীয় হত্যাকান্ড ? এই প্রশ্নই আজ সকল প্রতিবাদী মানুষের মুখে ।
ছাত্রনেতা আনিস খান হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানানোর পাশাপাশি, রাজ্যের শাসকশ্রেণীর দিকে সরাসরি আঙুল তুলে তৃণমূলকেই এই ঘটনার দায় নিতে হবে বলে সাফ ঘোষণা করেছে সিপিআই (এমএল) লিবারেশন ।
দলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির তরফে এক প্রেস বিবৃতি জারি করে বলা হয়, "রাজ্য সরকার পরিচালিত আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদী ও জনপ্রিয় ছাত্রনেতা আনিস খানকে তাঁর হাওড়া-আমতার বাড়িতে তান্ডব চালিয়ে, তিনতলা থেকে ছুড়ে ফেলে খুন করা হয়েছে । আনিসের বাবার কথায়, ওইদিন মধ্যরাতে তাদের বসতবাড়িতে পুলিশের পোশাকে প্রবেশ করে চারজন দুষ্কৃতী । তারা আনিসের ওপর নৃশংস অত্যাচার চালিয়ে অবশেষে তিনতলার ছাদ থেকে নিচে ছুড়ে ফেলে পালিয়ে যায় । ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় আনিসের । গণ-আন্দোলনের জনপ্রিয় নেতৃত্ব হয়ে উঠছিলেন আনিস । কেন্দ্রের "নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন"-এর বিরোধীতায় গড়ে ওঠা উত্তাল আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল উজ্জ্বল । আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানীয় নেতাদের খবরদারি ও দুর্নীতি, পঠন-পাঠন সংক্রান্ত পরিকাঠামো অবনমন এবং অধ্যাপক নিয়োগের দাবি নিয়ে বিগত দিনে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তিনি । এই কারণেই স্থানীয় "বাহুবলীদের" একপ্রকার চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন আনিস । এজন্য তাঁকে বহুদিন ধরে সাশানিও দেওয়া হচ্ছিল । কিন্তু শাসকের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছাত্রযুবদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্ভীক গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার সাহস জোগাতেন ছাত্রনেতা আনিস খান । তারই পরিণতি এই নৃশংস খুন"।
আনিস হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানানোর পাশাপাশি, এই নির্মম, অমানুষিক ও সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের দায় মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকারকেই নিতে হবে এবং কোন টালবাহানা না করে অবিলম্বে পুলিশের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করার দাবি তুলেছে সিপিআই (এমএল) লিবারেশন ।
0 Comments