ব্রেকিং নিউজ

6/recent/ticker-posts

আনিস হত্যার বিরুদ্ধে পথে নামলেন নওশাদ, মীনাক্ষী, প্রতীক ঊর রহমান

 অনির্দিষ্টকালের জন্য আমতা থানা ঘেড়াও করে অবস্থানে বসলেন মীনাক্ষী মুখার্জি

বিশ্বরূপ দে-র বিশেষ প্রতিবেদন

    আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আনিস খান হত্যার তদন্ত ও দোষীদের কঠোরতম শাস্তির দাবিতে রাজ্যজুড়ে চলছে সমস্ত বামপন্থী ছাত্রযুব সংগঠনের বিক্ষোভ, মিছিল ও পথ অবরোধ কর্মসূচি । এমনকি রাজ্যের বাইরে দিল্লীতেও সোমবার আনিস খান হত্যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন বাম ছাত্রযুবরা । দিনভর দফায় দফায় রাজ্য ও রাজ্যের বাইরেও আনিস হত্যার প্রতিবাদে গর্জে ওঠে বাম ছাত্রযুবদের বিরুদ্ধতার স্লোগান । 

  আনিসের মৃত্যুর ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাঁর মা এবং হাওড়া আমতার সমগ্র এলাকাবাসী । এদিন শহীদ আনিসের পরিবারের সাথে দেখা করে দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন জারি থাকবে বলে জানিয়েছেন আইএসএফ চেয়ারম্যান তথা ভাঙরের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী । পাশপাশি, তাঁর পরিবারের সাথে দেখা করেন DYFI নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি সহ অন্যান্য ছাত্রযুব নেতৃত্ব । আনিসের হত্যাকারিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমতা থানা ঘেড়াও করে অনির্দিষ্টকাল অবস্থান ও রাজ্যজুড়ে আন্দোলন জারি রাখার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কমরেড মীনাক্ষী । তিনদিনের মধ্যে যদি আনিসের খুনিদের গ্রেফতার করা না হয়, তাহলে গোটা বাংলা অবরুদ্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ছাত্রনেতা কমরেড প্রতীক ঊর রহমান । 

  সোমবার আনিসের পরিবারের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে নবান্নে তাঁর বাবাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এই "আমন্ত্রণ" প্রত্যাখ্যান করেন আনিসের বাবা । এবিষয়ে তিনি জানান যে মুখ্যমন্ত্রী যদি আমতার বাড়িতে এসে দেখা করতে চান তাহলে আসতেই পারেন, কিন্তু নবান্নে গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করার কোন প্রশ্নই ওঠে না । অন্যদিকে, রবিবার গভীর রাতে হঠাৎই আশ্চর্যজনক ভাবে আনিসের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারকে নানাভাবে সাহায্যের প্রলোভন দেখান একটি সংবাদমাধ্যমের কর্ণধার তথা মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি কৌস্তভ কুন্ডু । যিনি নিজেই একসময় চিটফান্ড কেলেঙ্কারির একাধিক মামলায় ইডি ও সিবিআইয়ের খাতায় অভিযুক্ত । মমতা ঘনিষ্ঠ এই ব্যক্তির হঠাৎ করেই আনিসের বাড়িতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে কৌতূহল দানা বেধেছে রাজনৈতিক মহলে । এই ঘটনার সাথে কৌস্তভ কুন্ডুর কি সম্পর্ক বা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই কি ঘটনা ধামাচাপা দিতে তিনি গভীর রাতে  আনিসের বাড়িতে যান ! প্রশ্ন গণতান্ত্রিক মহলের । 

  আনিস খান হত্যারহস্য নিয়ে যখন তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি, ঠিক সেই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যেই আগুনে ঘৃতাহুতির মতো প্রকাশ্যে চলে আসে হাওড়া জেলা অন্তর্ভুক্ত আমতা থানার ওসিকে দেওয়া আনিসের একটি চিঠি । খোদ তাঁরই লেখা চিঠির বয়ান অনুযায়ী, প্রাণ সংশয়ের কারণে নিরাপত্তার আবেদন জানিয়ে আমতা থানার ওসিকে চিঠি লিখেছিলেন আনিস খান এবং সেই চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছিল জেলার পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ও স্বরাষ্ট্র সচিব থেকে শুরু করে মানিবাধিকার কমিশনে । কিন্ত তা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট মহলের পক্ষ থেকে কোনরকম নিরাপত্তা দেওয়া তো দূর, আবেদনের ভিত্তিতে কোনরকম পদক্ষেপই নেয়নি আমতা থানার পুলিশ । 

  উক্ত আবেদন পত্রে আনিস আমতা থানার ভারপ্রাপ্ত ওসিকে জানিয়েছিলেন, "মহাশয়, আমি আনিস খান, আমতা থানার অন্তর্গত সারদা দক্ষিণ খাঁন পাড়া গ্রামের বাদিন্দা । ২২/৫/২১ তারিখে আমাদের গ্রামে একটি রক্তদান শিবিরের উদ্যেগ নেওয়া হয়েছিল । যার প্রধান উদ্যোক্তা ছিলাম আমি । ওইদিন বিকেলে আমাদের কুশবেরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ও স্থানীয় তৃণমূল বুথ সভাপতি মালেক খান এবং তার পুত্র মাসুদ খানের নেতৃত্বে তৃণমূলের বেশকিছু অনুগামী আমাকে রক্তদান শিবির করা যাবে না বলে প্রকাশ্যে হুমকি দেয় । অন্যথায় ফল খারাপ হবে বলেও মন্তব্য করে তারা । কারণ জানতে চাইলে তারা আমাকে বলে, "এবারের নির্বাচনে তৃণমূল ছাড়া অন্য দল কিভাবে ভোট পেল ? এর দায় তোকে নিতে হবে"। আমি বলি, "সেই দায় আমি কেন নিতে যাবো ! মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকারে স্বেচ্ছায় ভোট দিয়েছেন"। আমার এই কথায় কর্ণপাত না করে তারা আমাকে ক্রমাগত হুমকি দিতে থাকে । অতঃপর ওইদিন সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ উক্ত ব্যক্তিরা স্বদলবলে আমার বাড়িতে চড়াও হয় এবং আমাকে ও আমার বৃদ্ধ বাবা, মা এবং বাড়ির অন্যান্যদের অকথ্য গালিগালাজ করে ও বাড়ির দরজায় লাথি মারে । প্রতিবাদ করাতে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় এবং আমাকে বাড়ি ছাড়া করতে বাধ্য করে । এই অবস্থায় আমি ভীষণভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং আশঙ্কা প্রকাশ করছি যে যেকোন দিন ওরা আমাকে খুন করতে পারে । তাই উক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমার ও আমার পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন জানাচ্ছি । ওরা আমাকে যেভাবে অনুসরণ করছে, তাতে আমার পক্ষে থানায় গিয়ে আবেদনপত্র দেওয়া সম্ভব নয়, তাই পোস্ট মারফৎ অভিযোগ পত্র পাঠালাম । সার্বিকভাবে আপনার সহযোগিতা কামনা করি"।

  সুতরাং আনিসের হত্যা যে হঠাৎ করে কোন খুনের ঘটনা নয়, তা আমতা থানার ওসিকে লেখা আনিসের এই চিঠি থেকেই পরিষ্কার । পাশাপাশি, এটাও পরিষ্কার যে আনিস খান তৃণমূল করতেন না । তবে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আনিস খান হত্যা প্রসঙ্গে নবান্নের সাংবাদিক সন্মেলনে কিভাবে দাবি করলেন যে "আনিস তৃণমূল করতো, গত ভোটেও সে তৃণমূলকে সাহায্য করেছে" ! প্রশ্ন গণতান্ত্রিক মহলের । 

  আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আনিস খান হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে সোমবার এক প্রেস বিবৃতি জারি করেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির কার্যকরী সভাপতি সামসুর আলি মল্লিক । উক্ত বিবৃতিতে তিনি বলেন, "অবিলম্বে কোন কর্মরত বিচারপতির তত্বাবধানে আনিস খান হত্যার সিবিআই তদন্ত করতে হবে । সোমবার আনিসের বাড়ি গিয়ে আইএসএফের চেয়ারম্যান ও ভাঙরের বিধায়ক মহঃ নওশাদ সিদ্দিকী এই কথা জানিয়ে বলেন, প্রায় ৯৬ ঘন্টা নীরব থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ খুলেছেন । সিট গঠন করে হত্যার নিরপেক্ষ তদন্তের কথা জানিয়েছেন তিনি । হয়তো কোন বড় মাথাকে আড়াল করতেই তিনি এতটা সময় নিলেন । কিন্তু সিটের ওপর আমাদের ভরসা নেই । রাজ্যপুলিশ তদন্তের নামে এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাইছে । প্রয়োজনে এই তদন্তে হায়দ্রাবাদের কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাবরেটরির সাহায্য নেওয়া উচিত । তিনি বলেন, আনিস আইএসএফের কর্মী ও সুদক্ষ ছাত্র সংগঠক ছিলেন । গতবছর বিধানসভা নির্বাচনের সময় সংযুক্ত মোর্চার পক্ষে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কাজও করেছিলেন আনিস । এইরকম নির্ভীক ও প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্ধ করে গণতন্ত্রের কন্ঠ রোধ করা যাবে না । চাকরি ও অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে কোন লাভ হবে না"।

  এদিন বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আনিসের বাড়িতে তাঁর পরিবারের সাথে দেখা করতে যান লক্ষীকান্ত হাঁসদা, নাসিরউদ্দিন মীর এবং অন্যান্যরা । কলকাতায় আনিস হত্যার প্রতিবাদে সংগঠিত নাগরিক মিছিলে অংশগ্রহণ করেন আইএসএফের কর্মী-সমর্থকেরা । উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য নেতৃত্ব ইমরান খান, কুতুবউদ্দিন ফাতেহী প্রমুখ ।

Post a Comment

0 Comments