বিশ্বরূপ দে : দলিত আন্দোলনের অগ্রণী নেতা শরদিন্দু উদ্দীপনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ৭ই ফেব্রুয়ারি, সোমবার দক্ষিণ ২৪ পরগণা অধীনস্ত নরেন্দ্রপুর থানা সংলগ্ন কামালগাজি মোড়ে এক বিক্ষোভ কর্মসূচি সংগঠিত করে নকশালপন্থী ছাত্র-মহিলা সংগঠন AISA, AIPWA এবং মানবাধিকার সংগঠন APDR-এর নেতাকর্মীরা । বিক্ষোভ চলাকালীন নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ নির্বিচারে বিক্ষোভকারিদের ওপর লাথি-লাঠি চালায় এবং গণ-সংঠনগুলির প্রায় ১৫ জনকে গ্রেফতার করে । পরদিন অর্থাৎ ৮ই ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ধৃতদের বারুইপুর আদালতে পেশ করা হলে তাদের জামিন নাকোচ করে মাননীয় আদালত । সোমবার গ্রেফতারের পর থানার অভ্যন্তরে সংগঠনের মহিলা কর্মীদের ধর্ষণ ও খুনের হুমকি দেয় নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ । এমনই অভিযোগ করা হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে ।
এবিষয়ে মঙ্গলবার সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের মহিলা সংগঠন AIPWA-র রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে এক প্রেস বিবৃতি জারি করা হয় ।
উক্ত বিবৃতিতে AIPWA (অল ইন্ডিয়া প্রোগ্রেসিভ উইমেন্স এসোসিয়েশন)-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদিকা কমরেড ইন্দ্রানী দত্ত বলেন,"দলিত আন্দোলনের নেতৃত্ব শরদিন্দু উদ্দীপন ফেসবুকে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ধর্মনিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে একটি ফেসবুক পোস্ট করেন । সেই পোস্টকে ঘিরে শরদিন্দু উদ্দীপনের গ্রেপ্তারি ও হেনস্থার বিরুদ্ধে গতকাল ৭/০২/২২ বিকেলে কামালগাজি মোড়ে জমায়েত ও মিছিলের ডাক দেয় AISA, AIPWA, APDR এবং একুশের ডাক ইত্যাদি গণ-সংগঠন । সভা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ চুলের মুঠি ধরে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে কমরেড রুদ্রপ্রভাকর দাস ও আকাশ গুপ্তা সহ আরো অনেককে । তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করলে কমরেড চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরীকেও আটক করা হয় । গ্রেপ্তার করা হয় ছয়জন বিক্ষোভকারীকে । কমরেডদের মুক্তির দাবিতে থানার সামনে জড়ো হন পড়ুয়া, সামাজিক ও গণ-আন্দোলনের কর্মীরা । বেশ কিছুক্ষণ টালবাহানার পর ব্যাক্তিগত বন্ডে গ্রেপ্তার হওয়া সাথীরা ছাড়া পাওয়ায়, সংহতিতে জড়ো হওয়া যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা স্লোগানে অভিবাদন জানাচ্ছিলেন মুক্তি পাওয়া সাথীদের । স্লোগান ওঠার সাথে সাথে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় কমরেডদের । চলন্ত গাড়ির সামনে ফেলে তাদের ওপর এলোপাথাড়ি লাঠি আর লাথি চালাচ্ছিলো পুলিশ, এরপর চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় । এক মহিলা কমরেড 'লাল সেলাম' স্লোগান তোলায় জঘন্য অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে তাকেও লাঠিপেটা করে পুলিশ । তার অপরাধ - দীপ্ত কণ্ঠের 'লাল সেলাম' স্লোগান ।
লাঠির ঘা থেকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে অন্য দুই মহিলা কমরেডের বুকে ধাক্কা মার হয় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্বিচারে আঘাত করে থানার পুরুষ ও মহিলা পুলিশ । সাথে চলে পিতৃতান্ত্রিক অশ্রাব্য গালিগালাজ, থানায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয় গণ-সংগঠনের মহিলা কর্মীদের । দু'জন পুরুষ পুলিশ সিঁড়ি দিয়ে টেনে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে থানায় তোলে কমরেড বর্ষাকে । এইভাবে গ্রেফতার করা হয় আর ১১ জন কমরেডকে । থানার ভিতরে ফোনের পাসওয়ার্ড দিতে অস্বীকার করায় নির্বিচারে লাথি মারা হয় মহিলা কমরেডদের । পুলিশ লকআপেও সমস্ত কমরেডদের উপর অকথ্য মারধর চলে । এমনকি গুলি করে মেরে দেওয়ার হুমকি দেয় পুলিশ । নরেন্দ্রপুর থানার লকআপে এই অত্যাচার চালায় মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পুলিশবাহিনীর একাংশ ।
কমরেড মলয় আর চন্দ্রাস্মিতাকে মেডিকেল করাতে নিয়ে গেলেও আগে থেকে লিখে রাখা সার্টিফিকেটে নাম বসিয়ে দেওয়া হয় । লকআপে বাকি আটক কমরেডদের কোনো মেডিক্যাল চেক-আপ করানো হয়নি । মেরে রক্তাক্ত করে দেবার পরেও কমরেডদের ন্যূনতম চিকিৎসার বন্দোবস্তও করেনি নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ । গ্রেপ্তার হওয়া সাথীদের আজ বারুইপুর কোর্টে পেশ করা হয়েছিলো । তাদের বিরুদ্ধে, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, অপরাধমূলক কাজে উস্কানি দেওয়া ইত্যাদি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে ।
বারুইপুর কোর্টে গ্রেপ্তার হওয়া সাথীদের কোমরে দড়ি বেঁধে আনা হয়, যা মধ্যযুগীয় এবং বর্বরোচিত আচরণ । পুলিশের মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে আজ জামিন খারিজ হলো সমস্ত কমরেডের"।
শরদিন্দু উদ্দীপনের মত-প্রকাশের স্বাধীনতার উপর আক্রমণসহ গতরাতের পুলিশি সন্ত্রাস আদপে উক্ত থানার ব্রাহ্মণ্যবাদী ও পিতৃতান্ত্রিক চেহারার প্রতিফলন বলেই দাবি করে নকশালপন্থী মহিলা সংগঠন AIPWA ।
নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশের এই বর্বরোচিত ও পিতৃতান্ত্রিক সন্ত্রাসকে ধিক্কার জানিয়েছে AIPWA । পাশাপাশি, গ্রেপ্তার হওয়া কমরেডদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি এবং নরেন্দ্রপুর থানার হেনস্থাকারী ও অত্যাচারী অফিসারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে প্রগতিশীল মহিলা সমিতির (AIPWA) সকল নেতাকর্মী এবং সমগ্র গণতান্ত্রিক মহলের কাছে সংগঠনের আহ্বান, মত-প্রকাশের স্বাধীনতার উপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন ।
0 Comments