ব্রেকিং নিউজ

6/recent/ticker-posts

সংবিধানের প্রসঙ্গ তুলে হিজাব বিতর্ক নিয়ে প্রেস বিবৃতি জারি পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকীর

 


বিশ্বরূপ দে  :   হিজাব কান্ডকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ছবি প্রচারিত হয়েছে, তাতে এই মুহূর্তে তোলপাড় গোটা বিশ্ব । 

  অতি সম্প্রতি কর্ণাটকের একটি কলেজে মুসকান নামের এক মুসলিম ছাত্রীর হিজাব বা বোরখা পরার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে গেরুয়া উত্তরীয় পরিহিত বেশ কিছু যুবক । ওই ছাত্রী নিজের স্কুটিতে চড়ে কলেজে প্রবেশ করতেই "জয় শ্রীরাম" ধ্বনি দিতে দিতে গেরুয়া উত্তরীয় পরিহিত এবিভিপির ছাত্ররা রে রে করে তেড়ে আসে মুসকানের দিকে । তাদের দাবি মুসলিম ধর্মের পোশাক পরে কলেজে পড়াশুনা করা যাবে না । যুবকদের ওই আক্রমণের প্রতিবাদস্বরূপ মুসকান সাহসের সাথে নিজের পরিচয় বহাল রেখে পাল্টা "আল্লাহু আকবর" আওয়াজ তুলতে থাকে । দুপক্ষের এই ধর্মীয় বিরোধসম্পন্ন স্লোগানে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কলেজ চত্বর । অধ্যাপক ও কলেজের অন্যান্য কর্মীরা ছুটে এসে দুপক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন এবং মুসকানকে কলেজের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে সহযোগিতা করেন । 

  এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার থেকেই তোলপাড় হয়েছে সমগ্র বিশ্ব । অসংখ্য মানুষ কলেজে হিজাব পরার বিরুদ্ধে গেরুয়া উত্তরীয় পরিহিত এবিভিপির যুবকদের তীব্র সমালোচনা ও নিন্দা করার পাশাপাশি, মুসকান নামক ওই ছাত্রীর সাহসিকতার প্রশংসা করেন । ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে হিন্দুত্ববাদ বিরোধী একাধিক রাজনৈতিক সংগঠন । মুসকানের প্রতিবাদকে সমর্থন করে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রত্যেকে এবং ছাত্রীদের দাবি, তাদের হিজাব পরেই কলেজে আসার অনুমতি দিক কর্তৃপক্ষ ।  

  প্রসঙ্গত উল্লেখ, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকেই কর্ণাটকের বহু কলেজে হিজাব পরে আসার বিরুদ্ধে সরব হয় একশ্রেণীর যুবক । এর ফলে বিভিন্ন কলেজেই হিজাব পরে আসা মুসলিম ছাত্রীদের আক্রোশের মুখে পড়তে হয় । এনিয়ে ইতিমধ্যেই কর্ণাটক হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে । গতকালই ছিল ওই মামলার শুনানি । কিন্তু এই একই দিনে কলেজে হিজাব পরে আসার ঘটনায় যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা অবশ্যই দেশের সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্ববোধের বিরুদ্ধে আগামীদিনের অত্যন্ত ভয়ংকর ও ক্ষতিকারক দিক বলেই মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা । 

  এপ্রসঙ্গে বুধবার (৯ই ফেব্রুয়ারি'২২) ভাঙরের বিধায়ক তথা ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর চেয়ারম্যান পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকী এক প্রেস বিবৃতি জারি করে বলেছেন - "বহু ভাষা ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ আমাদের ভারতবর্ষ । কিন্তু অতি সম্প্রতি কর্ণাটকের ঘটনার সাথে তা বেশ বেমানান । চরম দক্ষিণপন্থী কিছু গোষ্ঠী, মূলত এবিভিপির চাপে কর্ণাটকের বেশ কয়েকটি কলেজ কর্তৃপক্ষ মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব বা বোরখা পরাকে নিষিদ্ধ করতে সচেষ্ট হয়েছে । এমনকি কলেজের ইউনিফর্মের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাথার স্কার্ফকেও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না ।  ভারতীয় সংবিধানে প্রত্যেক নাগরিকের নিজের নিজের ধর্মীয় বিধি মেনে চলার অধিকার আছে । সংবিধান প্রতিশ্রুত মৌলিক স্বাধীনতা ও অধিকারকে সবার সম্মান দিতে হবে এবং রাষ্ট্রকে এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে, যেখানে সংবিধান স্বীকৃত এইসব মৌলিকতা বিনষ্ট না হয় । কিন্তু আমরা দেখেছি যে এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, যেখানে একটা বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে । খাদ্য এবং বস্ত্র, যা মানুষের একান্ত নিজস্ব রুচি ও পছন্দের বিষয় । সাম্প্রতিক সমাজ ব্যবস্থায় তাতেও হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে । সংখ্যাগুরুদের নৈতিকতা জোরপূর্বক সংখ্যালঘুদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে । খর্ব করা হচ্ছে ভারতীয় সংবিধানের নৈতিকতাকে । কিন্তু প্রত্যেক দেশবাসীকেই সংবিধানের নৈতিকতাকে মান্যতা দিতে হবে । কারণ ভারতবর্ষ হলো বহু ধর্ম, বহু ভাষাভাষি ও বহু সংস্কৃতির অপরূপ মিলনস্থল । এখানে একক মানুষই বলুন বা কোন সম্প্রদায়, সকলের মর্যাদা অক্ষুন্ন থাকা উচিত । কর্ণাটক উচ্চ ন্যায়ালয় এই সংক্রান্ত মামলায় সঠিক পর্যবেক্ষন করেছে যে হিজাব বা বোরখা একটি সম্পূর্ন ব্যক্তিগত বিষয় । এক্ষেত্রে সরকারের আদেশ ব্যক্তির স্বাধীনতাকে লঙ্ঘন করেছে । হিজাব নিয়ে এই হৈচৈকে আমাদের আরো বড় পরিসরে দেখতে হবে । সেটি হলো ইসলাম সম্বন্ধে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষের মনে অহেতুক ভীতি ছড়ানোর প্রক্রিয়া, যাকে আমরা "ইসলামোফোবিয়া" বলে থাকি । এই প্রক্রিয়ার তীব্র নিন্দা করি আমরা । পাশাপাশি দেশজুড়ে গেরুয়া গুন্ডাবাজির প্রতিবাদে যে প্রতিরোধ গড়ে উঠছে, তা এক নতুন ভাষার জন্ম দিচ্ছে যার আদ্যপ্রান্ত সাংবিধানিক এবং আমরা তাকে স্বাগত জানাই । পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষেরই তাঁর নিজের রুচি-পছন্দ মতো পোশাক পরিধানের সম্পূর্ন অধিকার আছে । এই মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে কোন আপোষ হতে পারে না । ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) দৃঢ়তার সঙ্গে সেইসব ছাত্রী বা শিক্ষার্থী, যাদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তাদের পাশে আছে এবং তাদের প্রতি সংহতি জানাচ্ছে"।

  প্রসঙ্গত উল্লেখ, কর্ণাটক হাইকোর্টের অভ্যন্তরীণ রায়ে আজ ৯ই ফেব্রুয়ারি হিজাব বা বোরখা পরে মুসলিম ছাত্রীদের শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশ ও পড়াশুনা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে । সুতরাং এক্ষেত্রে বলাই বাহুল্য, সম্প্রীতির ভারতবর্ষে মাননীয় আদালতে পরাজিত হলো গেরুয়া শিবিরের সাম্প্রদায়িক উষ্কানিবাদ ।

Post a Comment

0 Comments