ব্রেকিং নিউজ

6/recent/ticker-posts

পুলিশের বিরুদ্ধে মহিলা কমিশনে গেল AIPWA

থানার হেফাজতে গণ-আন্দোলনের মহিলা কর্মীদের ওপর যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে মহিলা কমিশনে গেল AIPWA ও AISA 

বিশ্বরূপ দে-র বিশেষ প্রতিবেদন

      সামাজিক ন্যায় অধিকার আন্দোলনের অন্যতম নেতা তথা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র শরদিন্দু উদ্দীপনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ৭ই ফেব্রুয়ারি কামালগাজি মোড়ে AISA ও AIPWA-র বিক্ষোভ-সভা চলাকালীন আন্দোলকারি ছাত্রযুবদের গ্রেফতার করে নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ । গ্রেফতারের পর থানার অভ্যন্তরে তাদের ওপর অকথ্য অত্যাচার চালানো হয় এবং গণ-আন্দোলনের মহিলা কর্মীদের অশ্রাব্য গালিগালাজ দেওয়ার পাশাপাশি, থানার পুলিশ কর্মীরা তাদের ধর্ষণ করে খুন করার হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন  আন্দোলনকারিরা । পরদিন প্রত্যেককে বারুইপুর আদালতে পেশ করা হলে দুজনের জামিন মঞ্জুর করে আদালত, কিন্তু বাকিদের বিরুদ্ধে পুলিশের বানানো মিথ্যা মামলায় জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় বারুইপুর আদালত । এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে AISA, AIPWA, RYA ও মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ, মিছিল ও প্রতিবাদী সমাবেশ সংগঠিত করা হয় । ছাত্রযুবদের ওপর ওই নির্মম পুলিশি হামলার বিরুদ্ধে সংগঠিত আন্দোলনকে সমর্থন করেন রাজ্যের গণতান্ত্রিক মহল । গ্রেফতার হওয়া ছাত্রছাত্রীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে রাজ্যজুড়ে আন্দোলনের চাপে শেষমেষ তাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় আদালত । এই ঘটনায় নরেন্দ্রপুর থানার দোষী পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায় সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের ছাত্র, যুব ও মহিলা গণ-সংগঠন । কিন্তু ঘটনার দীর্ঘদিন পরও দোষীদের শাস্তি দেওয়া তো দূর, সেবিষয়ে কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি রাজ্যের প্রশাসন । তাই এবার নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ দ্বারা সংগঠিত নৃশংস অত্যাচার ও মহিলাদের ওপর যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে প্রতিকারের দাবি জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনের দ্বারস্থ হল অল ইন্ডিয়া প্রোগ্রেসিভ উইমেন্স এসোসিয়েশন (AIPWA) এবং অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন (AISA)।

  রাজ্যের মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনকে দেওয়া লিখিত অভিযোগ ও আবেদনপত্রে সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, "গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারী নারী ও পুরুষদের নৃশংসভাবে মারধোর করে মিথ‍্যা মামলা দিয়েছে । পুলিশ সম্পূর্ণ বেআইনী ও অপরাধমূলক কাজ করেছে । সংশ্লিষ্ট থানার পুলিস অফিসারদের শাস্তি হওয়া প্রয়োজন । পুলিশ যে অপরাধগুলি সংগঠিত করেছে তা হল, 

১। থানা হেফাজতে নিয়ে তিনজন মহিলাকে যৌন হেনস্থা করা হয় । চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরি, সৌমি জানা ও বর্ষা বড়াল -- তিনজনকে হেফাজতে নিয়ে শারীরিক অত‍্যাচার ও যৌন হেনস্থা করে পুলিশ । অত‍্যন্ত নারীবিদ্বেষী গালি দিতে দিতে কয়েকজন পুরুষ পুলিশ এদের মেঝেতে ফেলে বুকে ও তলপেটে বারবার লাথি মারে এবং "খানকি" বলে সম্বোধন করে "তোদের দেখাচ্ছি" বলে হুমকি দেয় । হুমকি দেওয়ার সময় পুরুষ পুলিশেরা নিজেদের জামা তুলে ধর্ষণের ইঙ্গিত করছিল ।


২। ঋতুস্রাবের জন‍্য স‍্যানিটারি ন‍্যাপকিন দিতে অস্বীকার করে পুলিশ । প্রথমবার গ্রেপ্তার হওয়ার পর চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরির ঋতুস্রাব শুরু হয়েছিল । তিনি মহিলা পুলিশের কাছে স‍্যানিটারি প‍্যাড চাইলেও তা দিতে অস্বীকার করে পুলিশ । রাত্রি সাড়ে নটা নাগাদ মুক্তি পেয়ে বাইরে বেরনোর সাথে সাথে পুলিশ আবার মারতে মারতে থানার ভেতর নিয়ে যায় । এই সময়ও তিনি প‍্যাড চেয়ে পাননি । রক্তক্ষরণের কথা বলে পুলিশের কাছে আকুতি জানানোর পরও তাঁকে গালিগালাজ সহ লাথি মারে পুলিশ ।


৩। থানার বাইরে মারার সময়ও মেয়েদের রেপথ্রেট দেয় পুলিশ । উপরোক্ত  তিন মহিলাকে লাথি মারার সময় বারবার যৌন হেনস্থামূলক গালি ও ভেতরে নিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছিল পুলিশ । থানায় তোলার আগে মারধর চলা কালীন সেকেন্ড অফিসারের বারংবার নির্দেশ ছিল মহিলাদের পা টেনে যৌনাঙ্গে মারতে । উপরুক্ত তিনজন মহিলা ছাড়াও আরেকজন ছাত্রী সায়নি সাহাকে মারার সময় একজন পুরুষ পুলিশ নির্দেশ দিচ্ছিল ছাত্রীটির নিম্নাঙ্গে লাঠি চালোনোর । সেইমতো পুলিশ সায়নির নিম্নাঙ্গে লাঠি চালায় । 

৪। থানায় তোলার আগে বারংবার মহিলাদের শরীর নিয়ে কটুক্তি  করা হয়, চুল ছোট বলে সৌমি জানাকে বলা হয়- ছেলে না মেয়ে, বুকে মারব না নীচে ! "মহিলা পুলিশ কোথায়, পুরুষ আপনি, গায়ে হাত দেবেন না" বারংবার একথা বলা সত্বেও মহিলাদের "খানকি, উপরে চল দেখাচ্ছি মাগী" এই ধরনের অশ্রাব্য ভাষায় বারংবার উক্তি করা হয় ।


৫। থানার বাইরে এবং হেফাজতে নিয়ে মহিলা ও পুরুষদের নৃশংসভাবে মারে পুলিশ । প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হতে থাকে "গুলি করে দেব"। সমস্তটা করে পুরুষ পুলিশ । বারংবার সৌমি জানা অনুরোধ করেন তার ইউটিআই আছে, বুকে পেটে যৌনাঙ্গে না মারতে, কিন্তু ক্রমাগত চলে আক্রমণ, লাঠি, লাথি যৌনাঙ্গ, তলপেট, বুক লক্ষ্য করে । ফোনের পাসওয়ার্ড না দেওয়ায় মুখে-পেটে ক্রমাগত চলে পুলিশের লাথি । প্রসঙ্গত মহিলাদের প্রত্যেককে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে থানার তিন তলায় তোলা হয়েছিল । পুরুষ পুলিশ অফিসারদের অত্যাচারের পর আসেন মহিলা অফিসার নেহা । ক্রমাগত মহিলাদের মারতে মারতে বলতে থাকেন "কি করতে পারবি, মানুষই নয় তোরা, কোনও অধিকার নেই তোদের"। 


৬। অকথ্য নির্যাতনের পর ইউটিআই এর ব্যাথা শুরু হলে "নেশা করে, নেশা পাচ্ছে না বলে এরকম করছে, খানকি গিরি" এ জাতীয় অশ্রাব্য ভাষায় আক্রমণ চলে, হসপিটাল নিয়ে যাওয়ার পথে নির্দেশ দেওয়া হয় সারা রাস্তা জোর করে বসিয়ে রাখতে । মহিলাদের সেল থেকে বের করেন দুজন পুরুষ অফিসার । দায়িত্বে থাকা মহিলা অফিসার কোথায় ছিলেন জানা যায়নি ।

 

৭। রাতে কয়েকজন ছাড়া কর্তব্যরত প্রত্যেক পুলিশ অফিসার হাফ প্যান্ট গেঞ্জি পরেছিলেন এবং প্রতিনিয়ত গালিগালাজ চলতে থাকে । 


৮। মহিলা সেলের মধ্যে সিসিটিভি লাগানো ছিল এবং ঐখানেই মহিলাদের বাধ্য করা হয় ইউরিন করতে ।


৯। "মেডিক‍্যাল ফিট"-এর জাল সার্টিফিকেট বানায় পুলিশ । চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরিকে গভীর রাতে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু কোনরকম পরীক্ষা না করে আগে থেকে লেখা মেডিক‍্যাল ফিট সার্টিফিকেটে নাম বসিয়ে পুলিশকে দিয়ে দেওয়া হয় । এর প্রতিবাদ করায় ওখানেই তাকে মেরে দেওয়ার হুমকি দেয় পুলিশ । বাকিদের কারও মেডিক‍্যাল টেস্ট করায় নি পুলিশ । সৌমি জানার ইউরিনারি ট্র‍্যাক্ট ইনফেকশন হয় । বারবার সেকথা বলায় তাঁকে পুলিশ হেনস্থা করে এবং শেষে হাসপাতালে নিয়ে জোর করে কোভিড ওয়ার্ডে ঢুকিয়ে দেয় । তাঁর শারীরিক অবস্থার এতটাই অবনতি হয় যে স্যালাইন দিতে হয়, কোর্টে পেশ করার সময় অজ্ঞান হয়ে যান তিনি ।


১০। সকলের স্মার্ট ফোনের সমস্ত ভিডিও ও ছবি জোর করে মুছে দেয় পুলিশ । পাসওয়ার্ড দিতে অস্বীকার করায় একজন মেয়ের বুকে লাথি মারে পুলিশ । 


নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশের এই বর্বরতা রাজ্যের পুলিশি ব‍্যবস্থার অত‍্যন্ত উদ্বেগজনক চেহারা তুলে ধরেছে । মেয়েদের বার বার যৌনাঙ্গে, বুকে তলপেটে আঘাত করা, ধর্ষনের হুমকি দেওয়া, গালাগালি দেওয়া হলো । গণআন্দোলনের কর্মীদের ওপর এই ধরনের অত্যাচার চালালো এই রাজ্যের পুলিশ । পুলিশের এই ধরনের ব্যবহারের আমরা তীব্র বিরোধিতা করছি । আমরা দাবি জানাচ্ছি, এর বিরুদ্ধে  উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক মহিলা কমিশন"।

  এর পাশাপাশি সংগঠনের দাবি, নরেন্দ্রপুর থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ও সেকেন্ড অফিসার সহ সমস্ত দোষী পুলিশদের অবিলম্বে  শাস্তি দিতে হবে । থানায় জেন্ডার সেন্সিটাইজেশন চালাতে হবে । প্রতিটা থানায় মহিলাদের জন্য স্যানিটারি  প্যাডের ব্যবস্থা রাখতে হবে । মহিলা বন্দীদের  জন্য পরিস্কার শৌচালয় রাখতে হবে । থানার শৌচালয়কে সিসিটিভির আওতায় রাখা চলবে না ।

অন্যথায় রাজ্যজুড়ে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠন নেতৃত্ব ।

Post a Comment

0 Comments