ব্রেকিং নিউজ

6/recent/ticker-posts

ফিরিয়ে দাও আমাদের বাসস্থান - চড়াই

আজ ২০শে মার্চ "বিশ্ব চড়াই পাখি দিবস"


বিশ্বরূপ দে-র বিশেষ প্রতিবেদন

    "হে মানব, ছিনিয়ে নিও না আমাদের বাসস্থান, ফিরিয়ে দাও আমাদের অরণ্য । সকলের বাসযোগ্য হোক পরমেশ্বরের সৃষ্টি এই মহাবিশ্ব"। 

  যুগ যুগ ধরে বন্যপ্রাণীদের এই মর্মস্পর্শী আকুতি কর্ণপাত করে নি তথাকথিত সভ্যতার স্বঘোষিত ধারক ও বাহক, স্বার্থপর এবং উন্নয়নকামী মানুষ । তার ফলে আজ বিপন্ন বন ও বন্যপ্রাণ । 

  একমাত্র নিজেদের বাঁচার লড়াইকেই প্রাধান্য দিয়ে অবাধে বন ও বন্যপ্রাণ ধ্বংস করে চলেছে মানুষ । কখনো বাসস্থান নির্মাণ করতে দখল ও লুঠ করেছে মাইলের পর মাইল অরণ্য, কখনো আবার বাণিজ্যের রসদ সন্ধানে হত্যা করা হয়েছে অরণ্যে বসবাসকারি প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি, শান্ত ও নিরীহ বন্যপ্রাণীদের । সভ্য মানুষের এই কৃতকর্মে ক্রমশ ভারসাম্য হারাতে বসেছে প্রকৃতি ও পরিবেশ । ফলস্বরূপ একটু একটু করে গোটা পৃথিবীর দখল নিচ্ছে দূষণ । পরিণতি - বায়ুমন্ডলের বিষক্রিয়া এবং মৃত্যুমিছিল । তবু থামতে শেখে নি ধ্বংস ও নিধনযজ্ঞের অসভ্য কারিগর বা জল্লাদ "মানুষ"। ওদের "চাহিদার কোন শেষ নেই"। আর সেই চাহিদা পূরণের লক্ষেই ওরা অবাধে লুঠ করছে অরণ্য । কিন্তু ওরা জানে না যে অরণ্য একদিন মানুষের এই হিংসাবৃত্তির বিরুদ্ধে শেষ প্রহার হানবেই । সেদিন আর খুব বেশি দূরে নয় । প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে মানবজাতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলে সমগ্র মানবজাতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করবে বন ও বন্যপ্রাণ। সেদিন ধ্বংস হবে মানুষের সাধের সভ্যতা, কৃত্রিম উন্নয়ন এবং সর্বশক্তিমান প্রকৃতি ও পরিবেশ হত্যাকারি মানুষ নামক প্রাণীর অস্তিত্ব । হয়তো কয়েক সহস্র বছর পর আবার রচিত হবে এক নতুন ইতিহাস, যাতে মানবসভ্যতা ধ্বংসের জন্য দায়ী করা হবে একমাত্র মানুষকেই এবং সেই ইতিহাস রচনা করবে অরণ্য ও অরণ্যের সেই আদিম-সভ্য, শৃঙ্খলাপরায়ণ জীবকুল । 

  আজ ২০শে মার্চ "বিশ্ব চড়াই পাখি দিবস"। কিন্তু নব প্রজন্মের ছোটরা কতটুকুই বা চেনে ছোট্ট এই চড়াইদের ! ইট-পাথরের তৈরি অট্টালিকার জঙ্গল ঘেরা শহরে আজ হারিয়ে গেছে ওদের বাসা । নেই ছাদের চিলেকোঠা, নেই ঘরের ঘুলঘুলি । সৌন্দর্য্য বজায় রাখতে বাহারি গাছ আছে শহরজুড়ে, কিন্তু ঝাঁ চকচকে আলোর রোশনাইতে রাতের পর রাত বিনিদ্র হয়ে কাটাতে কাটাতে শেষমেষ ক্লান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে ওদের সন্তান এবং আত্মীয়-পরিজন । অনেকে আবার কাটা পড়েছে ঘুড়ির মাঞ্জা দেওয়া সুতোর টানে বা ইন্টারনেট তরঙ্গপ্রবাহের বিষক্রিয়ায় ।  বংশবৃদ্ধি তো দূর, বংশই আজ ধ্বংসের মুখে বললেও ভুল বলা হবে, কারণ মাত্র ১৪ থেকে ১৬ সেন্টিমিটার দৈর্ঘের এই ছোট্ট চড়াই আজ বিলুপ্তপ্রায় । অবশিষ্টরা ডারউইন তত্ত্ব অনুযায়ী সংগ্রাম চালিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে প্রাণপন চেষ্টা করছে । জানে না ভবিষ্যৎ কি ? 

  প্রসঙ্গত উল্লেখ, চড়াই অরণ্যের পাখি নয় । শহর বা গ্রামাঞ্চলের বসতি অঞ্চলেই এদের বসবাস । গ্রামগঞ্জে মাঝে মধ্যে চড়াই লক্ষ করা গেলেও, শহরে আজ এদের কোন অস্তিত্ব নেই বললেই চলে । 

শহুরে সভ্যতাই কেড়ে নিয়েছে ওদের বাসস্থান, ওদের বাঁচার অধিকার । শহরে কোন বাড়ির ছাদে, বারান্দার রেলিংয়ে, ঘরের চালে, উঠোনে, আর কোনদিনই দেখা যাবে না ওদের, শোনা যাবে না একঝাঁক চড়াইয়ের কিচিরমিচির ডাক । 

  মাত্র ১৪-১৬ সেন্টিমিটারের পাখিগুলো, যাদের আয়ুকাল বড়জোর ৪-৫ বছর আর ওড়ার ক্ষমতা ৩৮ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা - তারা মানুষের পক্ষে কতটা ক্ষতিকারক ছিল, যে মানুষ তাদের বাঁচার অধিকার কেড়ে নিলো ? এদের জন্য কেউ বলে না "দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই"।

Post a Comment

0 Comments