স্থানীয়দের মতে উপনির্বাচন বানচাল করতেই শাসকদলের অস্ত্র কারখানা তৈরি
বিশ্বরূপ দে : বিশ্বস্ত সূত্র মারফৎ খবরের ভিত্তিতে পূর্ব বর্ধমান জেলা অন্তর্ভুক্ত সালানপুর থানার অধীনস্ত চিতলডাঙা গ্রামে হানা দিয়ে একটি অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানার হদিশ পেল পুলিশ ।
একদিকে রাজ্যজুড়ে শাসকদল আশ্রিত গুন্ডাবাহিনীর তান্ডব, ভোট সন্ত্রাস, গণহত্যা ইত্যাদি সংঘটিত হচ্ছে, আর অপরদিকে চলছে শাসকের অগণতান্ত্রিক ও সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে বামপন্থী ছাত্রযুব ও রাজ্যের গণতন্ত্রপ্রিয় নাগরিকবৃন্দের লাগাতার প্রতিবাদ । কর্মসংস্থানের দাবিতে নবান্ন অভিযানে মঈদুল ইসলামের হত্যা, আনিস খান হত্যা এবং অতি সম্প্রতি বীরভূমের রামপুরহাট গণহত্যার প্রতিবাদে ও ন্যায় বিচারের দাবিতে সোচ্চার রাজ্যের গণতান্ত্রিক মহল । তারই মধ্যে কেন্দ্রের একাধিক জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদে ২৮-২৯শে মার্চ দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সমস্ত কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন । সব মিলিয়ে এককথায় বলতে গেলে কেন্দ্র ও রাজ্যের সম্মিলিত প্রয়াসেই ক্রমশ ভঙ্গুর হতে চলেছে সমাজ ব্যবস্থা - ধ্বংসের মুখে গণতন্ত্র । একদিকে শাসকের সন্ত্রাস বনাম বিরোধীদের লড়াই, অপরদিকে একশ্রেণীর বাজারি সংবাদমাধ্যমের শাসক-দালালি । এসবের যাঁতাকলে ক্রমশ বিলুপ্তির পথে গণতন্ত্র । এইরকম একটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠার লক্ষে ছাত্রযুবদের হাত ধরে বামেদের উত্থান নতুন দিশা দেখাচ্ছে বলে মনে করছেন গণতন্ত্রপ্রিয় বঙ্গবাসী ।
বিগত পৌরসভা নির্বাচনে বামেদের ভোট শতাংশের নিরীখে অনেকটাই বেড়েছে । তার প্রধান কারণ হলো ছাত্রযুবদের গণ-আন্দোলন । এটা অবশ্যই বামেদের জয় । পৌরসভা নির্বাচনগুলিতে শাসকদল বিরোধীদের প্রচার থেকে শুরু করে ভোটের দিন যেভাবে সন্ত্রাস নামিয়ে সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে তা নিশ্চিতভাবে প্রমান করে যে বামেদের উত্থানকে ভয় পেয়েছে শাসক । আর তাই আরো বেশি করে গুন্ডাবাহিনীকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী কন্ঠস্বর স্তব্ধ করতে মরিয়া শাসকশ্রেণী । ১২ই এপ্রিল উপনির্বাচনের আগে আসানসোলের অস্ত্র কারখানার হদিশ এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মত বিরোধীদের ।
১২ই এপ্রিল রাজ্যের দুটি গুরুত্বপূর্ন কেন্দ্রে উপনির্বাচন । একটি আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র, অপরটি বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র । আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিআইএম প্রার্থী কমরেড পার্থ মুখার্জি এবং বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিআইএম প্রার্থী কমরেড সায়রা শাহ হালিম ।
আসানসোলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো উপযুক্ত কোন প্রার্থী পায়নি তৃণমূল, তাই বিহার থেকে একজনকে ধরে নিয়ে এসেছে যে একসময় বিজেপির সাংসদ ছিলেন । তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা প্রসঙ্গে এমনই মন্তব্য করছেন আসানসোলবাসী । আসানসোল এবার শিল্প চায় । তাই একসময়ের শিল্প তালুককে পুনরায় উজ্জীবিত করতে এবার সিপিআইএমের প্রার্থী কমরেড পার্থ মুখার্জিকেই নির্বাচিত করে সংসদে পাঠাতে চায় অঞ্চলের মানুষ । কারণ হিসেবে মানুষের বক্তব্য,"পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির কোন ঠাঁই নেই । আর তৃণমূলে সব চোর-চিটিংবাজ । এদের দ্বারা আসানসোলের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয় । সারাবছর মানুষের পাশে যে মানুষটিকে সর্বক্ষণ দেখা যায়, পাওয়া যায়, তার নাম পার্থ মুখার্জি"।
বাম প্রার্থীর এই বিপুল সমর্থনকে ভয় পাচ্ছে বলেই সন্ত্রাস করে ভোট বানচাল করতে চাইছে শাসকদল । সেই উদ্দেশ্যেই বেআইনি অস্ত্র কারখানা নির্মাণ করে ভোট সন্ত্রাসের সামগ্রী তৈরি করা হচ্ছিল বলেই জানিয়েছেন স্থানীয়রা । কিন্তু গোপন সূত্র মারফৎ খবর পেয়ে সালানপুর থানার অধীনস্ত রূপনারায়নপুর আইসি-র নেতৃত্বে আসানসোল দুর্গাপুর কমিশনারেটের অন্তর্ভুক্ত চিতলডাঙা গ্রামের বেআইনি অস্ত্র কারখানায় হানা দিয়ে শেষমেষ দুষ্কৃতীদের পাকড়াও করে পুলিশ । অস্ত্র কারখানায় হানা দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম ও বেশ কিছু অর্ধসমাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি মোট চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । কতদিন ধরে এই কারখানা চলছিল, কি উদ্দেশ্যে বেআইনি অস্ত্র তৈরি হতো এবং এই চক্রের পেছনে কোন রাজনৈতিক দল বা কোন ব্যক্তির মদত আছে কিনা তা জানতে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত শুরু করেছে সালানপুর থানা ও রূপনারায়নপুর ইনভেস্টিগেশন সেন্টারের পুলিশ ।
0 Comments