গোটা রাজ্যবাসীকে শান্ত ও সজাগ থাকার অনুরোধ করেছেন নওসাদ সিদ্দিকী
বিশ্বরূপ দে : রামপুরহাটের বড়শোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু ঊল্লা শেখের খুন হওয়ার পর গ্রামের একাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও খুনের ঘটনাকে "গণহত্যা" আখ্যা দিলেন সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক কমরেড মহঃ সেলিম । স্থানীয় সূত্র মারফৎ খবরের ভিত্তিতে এখনো পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১০ হলেও সরকার পক্ষ তা মানতে নারাজ । অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃতদেহগুলির অবস্থা এমনই হয়েছিল যে সেগুলি শনাক্ত করা তো দূর, সেগুলি উদ্ধার করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় দমকল বাহিনীকে । সিপিএমের জয়ের কারণেই নাকি তৃণমূল নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে জবাবদিহি করায় ক্রমশ হিংসাত্মক হয়ে ওঠে বড়শোলা গ্রাম পঞ্চায়েত, যার বলি হতে হয়েছে তৃণমূলেরই কর্মী ও সাধারণ মানুষকে - এমনটাই দাবি মহঃ সেলিমের ।
এপ্রসঙ্গে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন যে রামপুরহাট পুরসভার ১৭নং ওয়ার্ডে সিপিএম প্রার্থী জয়ী হয়েছে । আর সেই কারণেই তৃণমূলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতারা একে অপরকে মারছে । তিনি বলেন,"নবান্নের পক্ষ থেকে রামপুরহাটকে বিরোধীশূন্য করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু এখন সেই নির্দেশ কার্যকরী হচ্ছে দলীয় কর্মীদের ওপরেই"। ১৭নং ওয়ার্ডে সিপিএম প্রার্থী জয়ী হওয়ার পর নিজেদের ওপর ক্ষোভ মেটাতেই এই নারকীয় হামলা বলে দাবি করেন মহঃ সেলিম । ইতিমধ্যেই এই নারকীয় ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে রাজ্যজুড়ে মিছিল ও সভা সংগঠিত করছে সিপিআই, সিপিআইএম সহ অন্যান্য বামপন্থী সংগঠন ।
অন্যদিকে, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে ঘটনায় জড়িত প্রত্যেক দোষীকে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানানোর পাশাপাশি, রামপুরহাট সহ গোটা রাজ্যবাসীকে কোনরকম উস্কানি বা প্ররোচনায় পা না দেওয়ার আবেদন জানিয়ে প্রত্যেককে শান্ত, সজাগ ও সচেতন থাকার অনুরোধ করেছেন আইএসএফের রাজ্য কমিটির চেয়ারম্যান ও ভাঙরের বিধায়ক পীরজাদা মহঃ নওসাদ সিদ্দিকী ।
রামপুরহাটের নারকীয় হত্যাকান্ড প্রসঙ্গে এক প্রেস বিবৃতি জারি করে তিনি বলেন,"বীরভূমের রামপুরহাটে যে একাধিক মানুষের হত্যা ঘটেছে তা আমাদের হতচকিত করে দিয়েছে । পশ্চিমবঙ্গে আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড আরো একবার আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল । গতকাল তৃণমূল কংগ্রেসের এক উপপ্রধান খুন হয়ে গেলেন । অভিযোগ তাঁর নিজের দলের অন্য একটি গোষ্ঠীর হাতে তিনি খুন হয়েছেন । এর বদলা হিসেবে রামপুরহাটের পাশেই বগটুই গ্রামে মাটির বাড়িতে আগুন লাগিয়ে একাধিক মানুষকে খুন করা হল । যেটুকু খবর পাওয়া যাচ্ছে, বারোজন মারা গেছেন এই অগ্নিকাণ্ডে । দেখা যাচ্ছে শাসকদলের ভেতরেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দরুন মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে । এই জেলায় বেআইনী বালিখাদান, বেআইনী অস্ত্রাগার গড়ে উঠেছে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের মদতে । পঞ্চায়েতে সরকারী টাকা লুট করছে শাসকদলের স্থানীয় নেতারা । ঐ টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করতে গিয়ে নিজেদের মধ্যেই খুনোখুনি করছে শাসক দলের নেতা ও দুষ্কৃতীরা । এই ঘটনার তদন্ত করতে রাজ্যসরকার যথারীতি "সিট" গঠন করে দিয়েছে সেই জ্ঞানবন্ত সিং-এর নেতৃত্বে । সিট গঠন যে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার আর এক নাম, সেটা বুঝতে আমাদের কারুর অসুবিধা নেই । সম্প্রতি আনিস খান হত্যাকান্ডই তার প্রমাণ । তৃণমূল কংগ্রেস বিষয়টি গ্রাম্য বিবাদ বলে কাটিয়ে দিতে চাইছে । আর তাতে সায় দিয়েছেন খোদ রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য । কিন্তু এই খুনোখুনি, এই অরাজকতা চলতে পারে না । অবিলম্বে সমস্ত দুষ্কৃতিকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে । আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে এটাও লক্ষ্য করছি যে এই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক রঙ দেবার চেষ্টা চলছে । দলের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে বলছি, এই বিষয়ে কড়া ব্যবস্থা নিন । ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের পক্ষ থেকে আমরা রামপুরহাটবাসী তথা গোটা রাজ্যের মানুষকে অনুরোধ করছি, প্ররোচনায় পা দেবেন না । শান্ত ও সজাগ থাকুন, সৌহার্দ্য বজায় রাখুন।
0 Comments