ব্রেকিং নিউজ

6/recent/ticker-posts

"ভোটের স্বার্থে কাশ্মীরের অশ্রু বিক্রি বন্ধ করুন"- মহম্মদ ইউসুফ তারিগামি

"দ্য কাশ্মীর ফাইলস" প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে নিশানা করলেন সিপিআই(এম)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তারিগামি

বিশ্বরূপ দে :  সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া "দ্য কাশ্মীর ফাইলস" ছবিটি নিয়ে উত্তাল দেশ । কেউ কেউ ছবিটির প্রশংসায় পঞ্চমুখ, কেউ আবার ছবিটির মধ্যে দিয়ে সত্য ঘটনাকে আড়াল করে বিজেপিকে খুশি করার জোরালো গন্ধ পাচ্ছেন । ছবিটির সমালোচনা করে ইতিমধ্যেই বহু রাজনীতিবিদ তাদের নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেছেন । 

  ছবিটি দেখার জন্য কেন্দ্রের তরফে প্রত্যেককে বাধ্যতামূলক করতে হবে । অর্থাৎ প্রত্যেক ভারতীয়কে ছবিটি দেখতে কেন্দ্রের তরফে আইন পাস করতে হবে এবং যে ব্যক্তি ছবিটি দেখবেন না, তার ক্ষেত্রে দুবছর সশ্রম কারাদন্ড হওয়া উচিত এবং যে বা যারা ছবির সমালোচনা করবেন তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আইন পাস করা উচিত - ছবির নির্মাণ প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে এইভাবেই বিদ্রুপ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি যশবন্ত সিনহা । 

  এর পাশাপাশি, কাশ্মীর ফাইলস ছবি প্রসঙ্গে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে নিশানা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক বিবৃতি জারি করেছেন সিপিআই(এম)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ ইউসুফ তারিগামি । 

  উক্ত বিবৃতিতে ইউসুফ তারিগামি বলেছেন, "আমাদের সমাজের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেন কাশ্মীরি পন্ডিতগণ । আতঙ্কে ভয়ে তাঁদের উপত্যকা ছাড়তে হয়েছে, এটা আমাদের ইতিহাসের দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায়, তা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই । কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে এটাও সত্য যে, হিংসার সমর্থকরা দেখেনি কে কোন্ ধর্মের সাথে সম্পর্ক রাখে, কে মন্দিরে যায় আর কে মসজিদে । ওরা যেমন টিকালাল টাপলুকে মেরেছে, লাসা কলকে মেরেছে, তেমনই মহম্মদ শাহবান উকিলকেও মেরেছে, বয়স্ক নেতা মৌলানা মসুদী সাহেবকেও রেহাই দেয়নি । মীরওয়াইজ কাশ্মীর মৌলানা ফারুক কাদের গুলিতে মরেছে ? এইচএমটির জেনারেল ম্যানেজার খেরা সাহেবকে যেমন নিশানা বানানো হয়েছে, তেমনই কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর মশীরুল সাহেবকেও হত্যা করা হয়েছে, তাঁর ব্যক্তিগত সচিব আব্দুল গণি সাহেবকেও হত্যা করা হয়েছে । যারা এখনও কাশ্মীরের রক্তের সওদা করছে, খোলা বাজারে বিক্রি করছে, তাদের বলছি, যে-ই মরেছে, আমার আত্মীয় মরেছে । আমার প্রিয়জন মরেছে । আমার অভিভাবক মরেছে । তাঁর নাম কী ছিল, কোন্ ধর্মের ছিল -- আসলে তো কাশ্মীরি ছিল । আমি আত্মীয়দের এইভাবে ভাগ করতে পারবোনা । ওয়ানধামা হত্যাকাণ্ড যেমন হয়েছে, গাও কদল হত্যাকাণ্ডকেও ভোলা যায় না । আমাদের বিধানসভার অধ্যক্ষ ছিলেন, ন্যাশনাল কনফারেন্স, কংগ্রেস, পিডিপি'র আইনসভার সদস্যদের কে মেরেছে? কেন মারা হয়েছে ? কারণ, তাঁরা উগ্রপন্থার পথে যেতে অস্বীকার করেছিলেন । সর্বপ্রথম যে রাজনৈতিক নেতার মৃত্যু হয়েছিল, তিনি শ্রীনগরের ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা মহম্মদ ইউসুফ হালওয়াই । উগ্রপন্থীরা বলেছিল, ১৫ই আগষ্ট ব্ল্যাক আউট করার জন্য । তিনি রাজি হননি, তাই তাঁকে খুন করা হয়েছিল । আজ এই ছবি যখন বানানো হচ্ছে, তাঁকে কোন্ শিবিরে সামিল করা হচ্ছে ? ১৯৮৯ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর কুলগামে আমার বাড়ি ঘিরে ফেলা হয়েছিল । কোনোক্রমে বেঁচে যাই। বাধ্য হয়ে বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল । জম্মু চলে যেতে হয় । আমি কাশ্মীর থেকে প্রথম পরিযায়ী । আমার আগে কোনো রাজনৈতিক কর্মী কাশ্মীর থেকে বিতাড়িত হননি ।

 কোনো কাশ্মীরি পন্ডিতও উপত্যকা ছাড়েন নি । আমাদের এলাকার হাজান গ্রামের এক কাশ্মীরি পন্ডিত জগরনাথ ছিলেন সরকারি কর্মী । কর্মচারী সংগঠনে ছিলেন । তাঁর সরকারি কোয়ার্টারে আমাকে রেখেছিলেন । ৯০-এ যখন কাশ্মীরি পন্ডিতরা উপত্যকা ছেড়ে আসতে বাধ্য হলেন, আমি তাঁদের সেই অসহায়তার সাক্ষী ছিলাম । নিজের চোখে তাঁদের দুর্দশা আমি দেখেছি । পরবর্তী সময়ে রাজ্যপালের বাসভবনের সামনে আমরা একটা মিছিল করেছিলাম । সেখানে আমি দাবি তুলেছিলাম, রাজ্যপাল সাহেব, আপনার ভবনের দরজা খুলুন । এই কাশ্মীরি পন্ডিতরা ভিখিরি না। এঁরা কোনও পিকনিকে আসেননি । এঁরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এসেছেন । নিজেদের অধিকার চাইতে এসেছেন । আমার কাশ্মীরি পন্ডিত ভাইবোনরা এ'সব জানেন । উগ্রপন্থীদের গুলিতে হত কাশ্মীরি পন্ডিত অশোকও তো আমার আত্মীয়ই ছিল, আমার ছায়াসঙ্গী, আমার কমরেড। আমার শ্বশুরকে উগ্রপন্থীরা খুন করেছে । আমার ভাইপোকে হত্যা করেছে । কিন্তু শুধু তো ব্যক্তিগত ক্ষতি নয় । পার্টি কর্মীরা, বিধানসভার অধ্যক্ষ, বিধায়কদের হত্যা করা হয়েছে, তাঁরাও তো আমার সঙ্গী ছিলেন । কাকে কোন্ ভাগে ফেলবো ? সত্য দেখার জন্য দু'টো চোখের প্রয়োজন । এক চোখে দেখা যাবেনা । কাশ্মীরি পন্ডিত আমার ভাই-বোনেরা যতদিন না সসম্মান এবং নিরাপদে নিজেদের ভূখণ্ডে ফিরে না আসছে, নিজেদের ঘরে ফিরে না আসছে, ততদিন এই ক্ষত পূরণ হনে না । বিজেপি'র শাসকদের বলছি, ভোটের স্বার্থে আমার চোখের জল, আমার প্রিয়জনের চোখের জল'কে ভাগ করবেন না । যাঁরাই মরেছেন, আমার মরেছে । আমাদের মরেছে । ক্ষতি হয়েছে কাশ্মীরের পরিচয়ের । কাশ্মীরের সভ্যতার । যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সবাই মিলে আমাদের ঘর না সামলাবো, ততদিন এর সমাধান নেই । এই দুঃখ কাশ্মীরি পন্ডিতদের, শিখদের, মুসলিমদের । আমাদের ভাগ করবেন না"।

Post a Comment

0 Comments