ব্রেকিং নিউজ

6/recent/ticker-posts

চিড়িয়াখানায় খাঁচাবন্দি সিংহের অস্বাভাবিক মৃত্যু

 খাঁচাবন্দি প্রাণীদের মুক্ত করে জঙ্গলে ছাড়ার দাবি বন্যপ্রাণ প্রেমীদের

বিশ্বরূপ দে  :   সম্প্রতি ডুলহাজরা সাফারি পার্কের একটি খাঁচাবন্দি সিংহের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সহ গোটা বিশ্বের পশুপ্রেমী সংগঠনের সদস্যরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন । তাদের বক্তব্য, বন্যপ্রাণীদের খাঁচাবন্দি করে অর্থের বিনিময়ে দর্শকদের বিনোদনের মাধ্যম বানানোর প্রকৃত অর্থ -- "বর্বরতা" । এর বিরুদ্ধে বিশ্বের সমস্ত চিড়িয়াখানা, মূলত যেসব দেশে বন্যপ্রাণীদের স্বল্প পরিসরের খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়, সেগুলি থেকে বন্যপ্রাণীদের উন্মুক্ত করে যথাযথ পদ্ধতিতে অবিলম্বে তাদের নিজ বাসস্থান অর্থাৎ জঙ্গলে ফেরানোর দাবি জানিয়েছে বন্যপ্রাণ রক্ষা ও সংরক্ষণকারি সংস্থা "বনবাসী আলিপুর" সহ সমস্ত বন্যপ্রাণ প্রেমী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন । তাদের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার একাধিক বন্যপ্রাণ প্রেমী সংস্থা ও সেখানকার জু-অথরিটি । 

  প্রাকৃতিক অরণ্য ধ্বংস করে সামাজিক বনায়ন বা কৃত্রিম সৌন্দর্য বৃদ্ধি ঘটাতে ভারত-বাংলাদেশের বিভিন্ন অভয়ারণ্যে আকাশমনি ও ইউক্যালিপ্টাসের মতো পরিবেশ বিধ্বংসী গাছ লাগিয়ে বন্যপ্রাণী, প্রকৃতি-পরিবেশ ও জীববৈচিত্র আজ ক্রমশ ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে । অবিলম্বে যদি ওই সমস্ত গাছ সরানো না হয়, তাহলে আগামীদিনে তার খেসারত মানুষকেই দিতে হবে । মনে রাখা দরকার যে বন্যপ্রাণই হলো মানব সভ্যতার মূল ধারক ও বাহক । তাই বন্যপ্রাণ রক্ষা ও সংরক্ষণের দায়িত্বও নিতে হবে মানুষকে । কিন্তু আজ মানুষ উন্নয়নের নামে যেভাবে অরণ্য ধ্বংস করছে, তা আগামীদিনের জন্য মোটেই সুখকর নয় বলেই ব্যক্ত করেছেন বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞরা । বেশ কিছু সেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যদের অভিযোগ, মানুষের এই বন্যপ্রাণ ধ্বংসের কর্মকান্ডে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর পাশাপাশি, কখনো প্ৰত্যক্ষ, কখনো বা পরোক্ষ মদত দিয়ে থাকেন বন্যপ্রাণ রক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ক সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল ।

  প্রসঙ্গত উল্লেখ, বাংলাদেশের কক্সবাজার অন্তর্ভুক্ত ডুলহাজরা সাফারি পার্কে সম্প্রতি একটি সিংহের মৃত্যু হয় । এই সাফারি পার্কটি কক্সবাজার জেলা সদর থেকে ৪৮ কিলোমিটার উত্তরে এবং চকরিয়া থানা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে কক্সবাজার জেলা সদরের দক্ষিণ বন-বিভাগের ফাসিয়াখালি রেঞ্জের ডুলহাজরা ব্লকে অবস্থিত । মূলত হরিণ প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক এই পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হলেও, হরিণ ছাড়াও সিংহ এবং অন্যান্য গোত্রের বহু প্রাণী রাখা হয় এখানে । পার্কের বিশেষ সূত্র মারফৎ খবরের ভিত্তিতে জানা যায়, লকডাউন চলাকালীন দীর্ঘদিন ধরেই এই পার্কে খাঁচাবন্দি প্রাণীদের খাবার সরবরাহ অনিয়মিত ছিল । তারপর থেকেই অসুস্থ হতে শুরু করে বহু প্রাণী । পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবেই ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে খাঁচাবন্দি সিংহটির শারীরিক অবস্থা । চিকিৎসকেরা বহু চেষ্টা করেও তার শারীরিক অবস্থার তেমন কোন উন্নতি ঘটাতে পারেন নি বলেই জানায় চিড়িয়াখানার কিউরেটর । ফলে ক্রমশই দুর্বল হতে থাকে সিংহটি এবং শেষমেষ মৃত্য হয় তার । তবে বয়সজনিত কারণেই সিংহটির মৃত্যু হয়েছে বলে ঘটনার দায় এড়াতে চাইছেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ । একথা সত্য নয় বলেই জানিয়েছে সিংহটির কেয়ারটেকার ।

  যেভাবে সমগ্র বিশ্বজুড়ে বন ও বন্যপ্রাণ রক্ষায় সচেষ্ট বিভিন্ন সংস্থা, সেখানে ডুলহাজরা সাফারি পার্কের খাঁচাবন্দি সিংহের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করে পার্ক কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকেই দায়ী করছেন আন্তর্জাতিক মানের বেশকটি বন্যপ্রাণ রক্ষাকারি সংস্থার সদস্যরা ।

Post a Comment

0 Comments