আরএসএসের বিরুদ্ধে সমাজের সর্বস্তরের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আবেদন লিবারেশন পলিটব্যুরোর
বিশ্বরূপ দে : সম্প্রতি রামনবমী উৎসবকে কেন্দ্র করে আরএসএসের বিবিধ বাহিনী দ্বারা সংঘটিত গুজরাটের হিম্মতনগর এবং খাম্বাত, মধ্যপ্রদেশের খারগোন, ঝাড়খণ্ডের লোহারদাগা এবং বারমো, পশ্চিমবঙ্গের শিবপুর এবং দিল্লীর জেএনইউ সহ অন্যান্য জায়গায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর সহিংসতার ঘটনায় দেশব্যাপী উদ্বেগজনক পরিস্থিতি হয়েছে । এবিষয়ে এক প্রেস বিবৃতি জারি করেছে সিপিআই (এমএল) লিবারেশন পলিটব্যুরো ।
১০ই এপ্রিল রামনবমী উৎসব পালনের মধ্যে দিয়েই উল্লিখিত জায়গাগুলিতে ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষদের চিহ্নিত করে তাদের ওপর পাথর ছোড়া হয় এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রদর্শন করে মুসলমানদের ভয় দেখানো হয় বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করে দলের পলিটব্যুরো সদস্যগণ ।
উক্ত বিবৃতিতে বলা হয়,"রামনবমীর আগেও দেখা গেছে বহু বিজেপি নেতা এমনকি প্রশাসনের সাথে যুক্ত বেশ কিছু ব্যক্তি দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাংসের দোকান বন্ধ এবং মাংস না খাওয়ার নির্দেশ দিতে শুরু করেন । এই নির্দেশের পরপরই সঙ্ঘ বাহিনী বেছে বেছে মুসলমানদের দোকানে হামলা চালায় । এমনকি জেএনইউ-তে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ হোস্টেলের মেস কর্মীদের আমিষ খাবার পরিবেশন করার সময় বলপূর্বক বাধা দেয় এবং এর প্রতিবাদ করতে এলে হোস্টেলের আবাসিক ছাত্রছাত্রীদের ওপর রড ও পাথর দিয়ে প্রাণঘাতী আক্রমন চালায় । এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী গুরুতর আহত হয় । রামনবমীর শোভাযাত্রাকে ব্যবহার করে মুসলিমদের গণহত্যা করার আহ্বান জানিয়ে গান বাজানো হয়, মসজিদের বাইরে হিন্দু আধিপত্যবাদী স্লোগান এবং হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয় । এমনকি মুসলমানদের দোকান ও বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগও করা হয়"।
*গুজরাট, মধপ্রদেশ এবং জেএনইউতেও এই কাজগুলি রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রকাশ্য পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হয়েছে বলেই দাবি দলের পলিটব্যুরোর* । খারগোনে রামনবমীর পরের দিন অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার পরেও মুসলমানদের যে বাড়িগুলি কোনক্রমে রক্ষা পেয়েছিল, সেগুলোতে বুলডোজার চালানো হয়েছে । এই ফ্যাসিবাদী কর্মসূচির পর মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম শর্মা খোলাখুলি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন,"যে বাড়ি থেকে পাথর এসেছে সেই বাড়িটিকে পাথরের স্তূপে পরিণত করা হবে"।
*সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিবারেশনের পলিটব্যুরো সদস্যগণ তাদের বিবৃতিতে বলেছেন যে দুর্ভাগ্যবশত বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম এই ফ্যাসিবাদী আক্রমনগুলিকে হিন্দু ও মুসলিমদের "সংঘাত" বলে চিত্রিত করেছে । আর জেএনইউ-এর ঘটনার ক্ষেত্রে বাম বনাম ডানপন্থী ছাত্র সংগঠনের রাজনৈতিক সংঘাত হিসেবে দেখানো হয়েছে । সংবাদমাধ্যমের এই কার্যকলাপকে মিথ্যাচার বলে দাবি করেছে লিবারেশন পলিটব্যুরো* । তাদের সাফ বক্তব্য, আক্রমণকারী সঙ্ঘ পরিবারের সংঠনগুলোকেই সহিংসতার শিকার হিসেবে তুলে ধরার একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই সংবাদমাধ্যমের এই কার্যকলাপ ।
হিন্দু উৎসবকে মুসলিম বিরোধী বিদ্বেষ ও সহিংসতার প্ল্যাটফর্মে রূপান্তরিত করে আরএসএস সমগ্র হিন্দু সমাজকে বিষিয়ে তুলছে । এই ঘৃণা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে সমাজের সর্বস্তরের গণতন্ত্রপ্রিয় ও শান্তিকামী মানুষের কাছে দেশব্যাপী প্রতিবাদ সংগঠিত করার আবেদন জানিয়েছে লিবারেশন । সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজের প্রগতিশীল ও শান্তিপ্রিয় মানুষ তাদেরই উৎসবের নামে চালানো এই জিঘাংসাকে কখনোই মেনে নিতে পাতে না বলেও দাবি পলিটব্যুরোর । এই বিদ্বেষকে প্রত্যাখ্যান করা ও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া অত্যন্ত জরুরি বলেই বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে সিপিআই (এমএল) লিবারেশন পলিটব্যুরো ।
0 Comments