আদিবাসীদের তাড়া খেয়ে পালিয়ে গেল জেলা শাসক ও পুলিশ বাহিনী
বিশ্বরূপ দে : বীরভূমের দেউচা পাচামি কয়লা খনি প্রকল্প নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চাপান উতোর চলছে । একদিকে যেমন তৎসংলগ্ন অঞ্চলের আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে মরিয়া রাজ্য, ঠিক তেমনই বিপরীতে প্রকল্প রুখতে জারি গণ-আন্দোলন । আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, এই প্রকল্প বাতবায়িত হলে পরিবেশ ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি, উচ্ছেদ হতে হবে অসংখ্য আদিবাসী পরিবারকে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের জীবন-জীবিকা । যদিও উচ্ছেদের ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রত্যেক পরিবারকে আর্থিক সাহায্য ও সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তাতেও আন্দোলন থেকে বিরত রাখা যায়নি আদিবাসীদের । কারণ মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে তেমন বিশ্বাস নেই আদিবাসীদের ।
সম্প্রতি নবান্নের এক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন যে গ্রামবাসীরা না চাইলে জোরপূর্বক কয়লাখনি করা হবে না । তাঁর এই ঘোষণার ঠিক পাঁচ দিনের মাথায় দেখা যায়, খনি সংলগ্ন দেওয়ানগঞ্জে প্রকল্পের সমর্থনে সভা করার লক্ষ্যে হঠাৎই বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন খোদ জেলা শাসক । সেইসঙ্গে বীরভূমের বিভিন্ন আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম থেকে কমপক্ষে ৩০টি বাস বোঝাই করে মানুষদের নিয়ে আসা হয় সভাস্থলে । জেলাশাসক ও বাসভর্তি মানুষের হঠাৎ এই জমায়েতের মধ্যে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আসলে কৌশলে "খনির স্বপক্ষে ইচ্ছুক আদিবাসী জনতা" দেখানোর বন্দোবস্ত করেছিলেন বলেই বক্তব্য স্থানীয়দের ।
জেলা শাসক ও মানুষের জমায়েত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই খনি সংলগ্ন এলাকার বিপুল সংখ্যক আদিবাসী নারী-পুরুষেরা লাঠি-ঝাঁটা ও তীর-ধনুক নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন । তাদের ক্ষোভের মুখে পড়ে শেষমেষ সভাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন জেলা শাসক ।
অন্যদিকে বাইরে থেকে আসা আদিবাসীরাও গ্রামে ঢুকে সত্যটা বুঝতে পারেন যে তাদের মিথ্যাকথা বলে, ভুল বুঝিয়ে সভায় নিয়ে আসা হয়েছে । বিক্ষোভরত আন্দোলনকারীদের মুখে সব শুনে ও দেখে বাইরে থেকে আসা আদিবাসীদের একটা বড় অংশই উল্টে আন্দোলনে সামিল হন ।
এই ঘটনার পর আরো দৃঢ়ভাবে আদিবাসীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে তাঁরা কয়লাখনি চান না । এমনকি সরকারিভাবে প্রকল্প বাতিল না হওয়া পর্যন্ত গণ-প্রতিরোধ জারি থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ, ১৩ই এপ্রিল নবান্নের বৈঠকে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যে স্থানীয়রা না চাইলে কোনভাবেই জোর করে খনি করা হবে না । কিন্তু ঠিক তার পাঁচদিন পর ১৮ই এপ্রিল দেওয়ানগঞ্জে প্রকল্পের স্বপক্ষে সভা করার জন্য জেলা শাসকের উপস্থিতি, মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতির সম্পূর্ন পরিপন্থী বলেই দাবি সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের ।
দলের পক্ষ থেকে রাজ্য নেতৃত্ব কমরেড পার্থ ঘোষ এবিষয়ে এক বিবৃতি জারি করে বলেন,"আমরা সরকারের এই দ্বিচারিতার নিন্দা জানাচ্ছি এবং পূর্বে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলি পালনের দাবি জানাচ্ছি"। আন্দোলনকারীদের সমর্থন করে তিনি আরো বলেন,"দেউচা পাচামি কয়লাখনি প্রকল্প স্থানীয় আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা ও পরিবেশের ওপর বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলবে । অবিলম্বে সরকারকে এই প্রকল্প প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে"।
অন্যদিকে, কর্মসংস্থানের তাগিদে দেগঙ্গা থেকে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়ে, মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচ শ্রমিকের পরিবরগুলির সাথে দেখা করে সমবেদনা জানিয়েছেন আইএসএফের রাজ্য কমিটির চেয়ারম্যান ও ভাঙরের বিধায়ক মহঃ নওসাদ সিদ্দিকী । পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারপিছু দুলক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে । কিন্তু এই সামান্য অর্থ দিয়ে সরকার দায় সারতে পারেন না বলেই মন্তব্য করেছেন দলের রাজ্য সম্পাদক বিশ্বজিৎ মাইতি । প্রত্যেক পরিবারপিছু ন্যূনতম দশলক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে আইএসএফ । পাশাপাশি, পরিবারের একজনকে স্থায়ী সরকারি চাকরি দিতে হবে এবং রাজ্যে শিল্প-কারখানাও গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন দলের রাজ্য সম্পাদক বিশ্বজিৎ মাইতি । যাতে কর্মসংস্থানের জন্য কোন শ্রমিককে ভিনরাজ্যে গিয়ে এইরকম মর্মান্তিক পরিস্থিতির শিকার হতে না হয় ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ, উত্তর ২৪ পরগণার দেগঙ্গা থেকে পাঁচজন শ্রমিক ভিনরাজ্যে গিয়ে সেখানকার এক কারখানার ট্যাঙ্কে নেমে বর্জ্য পরিষ্কার করার সময় এই মর্মান্তিক মৃত্যুর শিকার হন ।
0 Comments