ব্রেকিং নিউজ

6/recent/ticker-posts

ফের আদিবাসী গ্রামে চালু হল স্বাস্থ্য পরিষেবা

 


নিজস্ব প্রতিবেদক, রামপুরহাট, ১৭ জুন ঃ আদিবাসী অধ্যুষিত প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষদের সুবিধার্থে চিকিৎসা পরিষেবা চালু করা হয়েছিল নারায়ণপুর গ্রামে। করোনা অতিমারির কারণে সেই পরিষেবা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছিল। আদিবাসী মানুষদের কথা চিন্তা করে ফের পরিষেবা চালু করল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা চালু হওয়ায় খুশি এলাকার আদিবাসী মানুষজন।

বীরভূমের রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের নারায়ণপুর অঞ্চল। এলাকার অধিকাংশ মানুষ আদিবাসী সম্প্রদায়ের। পাশেই ঝাড়খণ্ড। এই দুই রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকায় তিন দশক আগে ছিল না কোন স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা। ছিল না শিক্ষা ব্যবস্থা। প্রায় ২০ কিলোমিটার দুর্গম রাস্তা অতিক্রম করে রামপুরহাট শহরে শিক্ষা কিংবা চিকিৎসা পরিষেবার জন্য যাতায়াত তাদের কাছে ছিল বিলাসিতার সমান। এরকম একটি প্রত্যন্ত গ্রামে ডেনমার্কের মিশনারি অফ চ্যারিটি গড়ে তুলেছিল মিশন গার্লস স্কুল। প্রথম দিকে সেই স্কুলের দায়িত্ব নিয়ে এসেছিলেন ‘এলেন লাউরসেন ওরফে মিতাদি’ নামে এক মিশনারি। তিনি এলাকায় থাকতে থাকতে আদিবাসী শিশু কন্যাদের দুর্দশা দেখে ‘শান্তিবাড়ি’ নাম দিয়ে ইন্ডিয়ান চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সার্ভিসের অধীনে একটি শিশু কন্যাদের থাকা, খাওয়া ও পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছিলেন। ১৭ জন শিশু কন্যা দিয়ে শুরু করা ওই আবাসিক প্রতিষ্ঠানে এখন ৪০ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুঃস্থ শিশু কন্যাদের থাকার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি এলাকার মানুষের বাড়ি বাড়ি স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ারও স্বপ্ন নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই স্বপ্ন তাঁর পূরণ হয়নি। তার আগেই দুরারোগ্য অসুখে তিনি মারা গিয়েছিলেন। মৃত্যু আগে নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা মিশন স্কুলের করণিক নেকবর মিঞাকে আবাসিক মেয়েদের দেখভাল এবং আদিবাসী পরিবারে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বভার দিয়ে গিয়েছিলেন। সেই দায়িত্ব পালন করতে প্রায় তিন দশক আগে শান্তিবাড়িতে ‘মিতা স্মৃতি সেবা কেন্দ্র’ নাম দিয়ে শুরু করা হয়েছিল চিকিৎসা পরিষেবা। শুধু ক্যাম্প করে নয়, পাথর শিল্পাঞ্চল এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে আদাবাসী অন্তঃস্বত্ত্বা মহিলাদের বাড়িতে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বার্ধক্য জনিত কারণে অসুস্থদের বাড়ি পৌঁছে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ায় ছিল শান্তিবাড়ির কাজ। ২০০১ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত এলাকায় টিবি রোগের চিকিৎসা করা হত পাথর শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকদের বাড়িতে গিয়ে।

শুধু বীরভূমের নারায়ণপুর অঞ্চল নয়, সীমান্তবর্তি ঝাড়খণ্ডের ঘূর্ণি, খাঁকসা, বনডিগ্রামের মতো বেশ কয়েকটি গ্রামের আদিবাসী মানুষজন শান্তিবাড়ির উপর নির্ভর করতেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার। পরবর্তীকালে এলাকায় সরকারিভাবে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে উঠলেও সেটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে আজও শান্তিবাড়ির উপর ভরসা করেন কয়েক হাজার আদিবাসী মানুষজন। ২০০৮ সালের ১৪ আগস্ট নেকবর মিঞার মৃত্যুর পর ভেঙে পড়েছিলেন এলাকার মানুষজন। কিন্তু চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ করেনি কর্তৃপক্ষ। তবে করোনা অতিমারি সেই পরিষেবায় কিছুটা ইতি টেনে দিয়েছিল। করোনা অতিমারি কমতেই ফের সেই পরিষেবা চালু করল শান্তিবাড়ি কর্তৃপক্ষ। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মহম্মদ মোহর আলি সপ্তাহে একদিন চিকিৎসা পরিষেবা দিতে শুরু করেছেন।

প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক সন্দীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা আগের মতো সপ্তাহে সবদিন পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করব। করোনা অতিমারি আমাদের কিছুটা পিছনে ফেলে দিয়েছিল। আমরা ফের সেই সমস্যা কাটিয়ে এলাকার আদিবাসী মানুষের মতো আগের মতোই পাশে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাব”। কার্যত বাড়িতে বসেই ফের চিকিৎসা পরিষেবা মেলায় খুশি গ্রামের বাসিন্দা তালা মুর্মু, ব্রজেল সোরেনরা। তাঁরা বলেন, “মাঝে আমাদের খুব কষ্ট হয়েছিল। প্রচুর টাকা খরচ করে রামপুরহাট যেতে হত। এখন ডাক্তারবাবু গ্রামেই আসছেন। এখন আর রামপুরহাট যেতে হবে না”।

Post a Comment

0 Comments