ব্রেকিং নিউজ

6/recent/ticker-posts

অম্বুবাচি কী ? এর অর্থই বা কী ?

 অম্বুবাচির অর্থ কাপড় দিয়ে মায়ের মুখ ঢেকে তাঁকে নির্জলা রাখা নয়

মহঃ এন্থনি বোস


        অম্বুবাচি সময় কালে দেবী নাকি অশুচি হন । আর তাই তিনি লজ্জায় সন্তানদের সামনে আসতে পারেন না । অশিক্ষিত আহম্মকদের এই রটনায় আম্বুবাচির কালে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, অর্থাৎ মন্দির, এমনকি বাড়িতেও বেশিরভাগ মানুষ কাপড় চোপর দিয়ে মায়ের মুখ আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে । শুধু তাই নয়, ওই সময়কালে মায়ের নিত্য পূজা বা খেতে পর্যন্ত দেওয়া হয় না । অথচ নিজেরা দিব্যি গান্ডে পিণ্ডে রসনার তৃপ্তি লাভ করেন । অনেকে আবার অম্বুবাচির সাথে আম খাওয়ার সম্পর্ক জুড়ে দিয়েছেন । অথচ মা - সে দিনের পর দিন নির্জলাই থাকেন । আহম্মকদের এই প্রথাই যুগ যুগ ধরে পালন করে আসছে মায়ের "তথাকথিত পূজারী" বা "সেবকগণ"। আর তাদের দেখানো পথেই হাঁটছেন সাধারণ মানুষ । কিন্তু প্রকৃত অর্থে মায়ের মুখ ঢেকে নির্জলা রাখার সাথে অম্বুবাচির কোন সম্পর্কই নেই । এ কেবলই অশিক্ষা এবং ভ্রান্ত ধারণার প্রয়োগ । যার দ্বারা মা অর্থাৎ দেবী অসন্তুষ্ট হন । তাহলে কি এই অম্বুবাচি ? আসুন জেনে নেওয়া যাক ।

  ভগবতীর ষোড়শ যাত্রার মধ্যে অন্যতম হলো অম্বুবাচি যাত্রা । অম্বুবাচী কথাটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ "অম্ব" ও "বাচি" - এই দুটি শব্দ থেকে । "অম্ব" শব্দের অর্থ হলো জল এবং "বাচি" শব্দের অর্থ হলো বৃদ্ধি । সুতরাং গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহের পর যখন বর্ষার আগমনে ধরিত্রী সিক্ত হয় এবং নবরূপে বীজধারণের যোগ্য হয়ে ওঠে সেই সময়কেই বলা হয় অম্বুবাচী ।

অম্বুবাচির স্থিতিকাল :

--------------------------------            সূর্য আষাঢ় মাসে যে দিন যে সময়ে মিথুন রাশিতে আদ্রা নক্ষত্রের প্রথম পদে গমন করে, সেই সময়কাল থেকে মাতৃস্বরূপা পৃথিবী এবং আদ্যাশক্তি মহামায়া ঋতুমতী বা রজ্বসলা হয় এবং সেই সময় থেকেই অম্বুবাচির কাল শুরু হয় । 

অর্থাৎ সূর্যের মিথুন রাশি গমনের কাল থেকে শুরু করে বিংশতিদন্ডাধিক্ তিনদিন বা তিনদিন কুড়িদন্ড কাল সময় অম্বুবাচির স্থিতি ।


অম্বুবাচি কালে সাধকের কর্তব্য :

-------------------------------------

"আষাঢ়ে প্রথমে দেবী অম্বুবাচী দিনত্রয়ং ।সংগোপন গৃহে দেবিং স্থাপয়েদ্বস্ত্র বেষ্টনে ।।

রাত্রৌ মহানিশা যোগে পঞ্চাচারেণ দেশিকঃ।

পূজয়িত্বা বলিং দত্বা হোময়িত্বা বিহারয়েৎ।।"

অর্থাৎ আষাঢ়ের প্রথমে অম্বুবাচী দিবসত্রয়ে দেবীকে গুপ্তভাবে বস্ত্রাদি দ্বারা বেষ্টন করিয়া ( বেষ্টন অর্থে চোখমুখ ঢেকে কাপড় চাপা দিয়ে রাখতে বলা হয় নি, যারা এইরূপ করেন তাহা অশিক্ষা ও দেবীর অসম্মান ) রাখিবে । অম্বুবাচী নিবৃত্তি হইলে সাধক মহানিশাতে পঞ্চতত্ত্ব  দ্বারা দেবীর পূজা করিয়া, বলিদানাদি, হোমাদি সম্পন্ন করিবে ।


সাধারণ মানুষের কর্তব্য :

-----------------------------------

এই দিনগুলিতে আমাদের কর্তব্য দেবীকে বিশেষভাবে যত্নে রাখা । এমন ধারণা একেবারেই ঠিক নয় যে দেবী এইসময় অশুচি বা অস্পৃশ্যা হয়ে যান । অনেকে এই সময় মায়ের নিত্যসেবাও বন্ধ করে দেন , যা একেবারেই অনুচিত । এই দিনগুলিতে আমাদের কর্তব্য দেবীকে বিশেষভাবে যত্নে রাখা ।  উপরন্তু যথাসম্ভব একান্ত পরিবেশে নির্জন বাসের ব্যবস্থা করা উচিত । কোনভাবেই আমাদের কোন আচরণে মায়ের বিরক্তির উদ্রেক যেন না হয়, সেদিকে সর্বদাই খেয়াল রাখতে হবে । সংকল্প বিহীন নিত্য পূজাপাঠ ও আচার অনুষ্ঠান যথাসম্ভব অনাড়ম্বর ভাবে পালন করা উচিত । এই সময় বেশী করে জপ-ধ্যান ইত্যাদি করা উচিত , এই কালে জপ করলে বহুগুণ ফল লাভ হয় । ভূমি কর্ষণ বা ভূমিতে কোনরকম আঘাত করা নিষিদ্ধ । সকল সাধক ও ভক্তগণেরই এই সময় সংযত জীবনযাপন করা একান্ত কর্তব্য ।

Post a Comment

0 Comments