পঞ্চমুন্ডি আসনই হলো মহাদেব ও কালী রুপী মহাকালভৈরব ও কালভৈরবী সাধনার প্রধান শক্তিক্ষেত্র
তথ্য ও গবেষণা:
মহঃ এন্থনি বোস
"ওঁ মহাকালং যজেদব্যং দক্ষিণে ধূমবর্ণকম । বিভ্রতং দন্ড খটাঙ্গৌ দংস্ট্রাভীমমূখম্ শিশুম্।। ব্যাঘ্রচর্মাবৃতকটীং তূন্দীলং রক্তবাসসম্ ।
ত্রিনেত্রমূর্ধং কেশঞ্চ মুণ্ডমালা বিভূষিতম্ ।জটাভার লসচ্চচন্দ্র খন্ডমুগ্রং জলন্নিভম্ ।।"
প্রথম মহাবিদ্যা দেবী কালীর ভৈরব মহাকালের রহস্য অতি স্থুল, সরলভাবে তার বর্ননা করা কখনোই সম্ভব নয় । তবে অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় বা রহস্য তুলে ধরার প্রয়াস রাখলাম ।
দেবাদিদেব মহাদেবের অনেক রুদ্র অবতার আছে । দৈত্য দানব ও অশুভশক্তির বিনাশ হেতু তিনি বিভিন্ন রুদ্ররুপের ব্যাপ্তি ঘটিয়েছেন । পূর্ণজ্ঞান ও ভক্তি পরিস্ফুটিত না হলে রুদ্রজ্ঞান লব্ধ অসম্ভব ।
প্রথমেই জেনে রাখা প্রয়োজন, দেবাদিদেব মহাদেবের রুদ্রাবতার অতীব ভয়ঙ্কর এবং মহাবিনাশক ।
ভগবান শিবশঙ্কর যখনই রুদ্ররুপ ধারণ করেছেন, তখনই ত্রিলোক কোনও না কোনও দ্বিধায় পড়েছে, কিন্তু পরবর্তিকালে ধরিত্রী পেয়েছে নবপরিচয় । যা একমাত্র মহাকালের লীলাতেই সম্ভব । ঠিক যেমন অনলে দগ্ধ হয় স্বর্ণ হয় শুদ্ধ, ঠিক তেমনই মহারুদ্রের ক্রোধাগ্নিতে দগ্ধ হয়ে ধরিত্রী হয়েছে শিবভস্ম, যা থেকে পরবর্তীতে অঙ্কুরিত হয়েছে শুদ্ধ পবিত্র জ্ঞানবৃক্ষ । মহাদেব শিবের যতরকম রুদ্র অবতার আছে, তন্মধ্যে অন্যতম অবতার হলো মহাকালভৈরব ।
কাল শব্দের অর্থ হলো 'সময়' । কিন্তু এক্ষেত্রে 'সময়' অর্থাৎ 'অন্তিম সময়' বা 'মৃত্যু' আর ভৈরব শব্দের অর্থ 'ছন্দ', অর্থাৎ 'কালভৈরব' শব্দের অর্থ মৃত্যুর দেবতা বা কালবিনাশক ।
কথিত আছে ব্রহ্মার পঞ্চম মস্তক যা সমূহপাপে আক্রান্ত, সেই পাপ ও মস্তক বিনাশ হেতু মহাদেবের নীলতেজ হতে মহাকালভৈরবের আবির্ভাব ।
তন্ত্রশাস্ত্র মতে, দেবী মহামায়ার দশ অবতারের একটি যা 'ভৈরবী' নামে পরিচিত । সেই ভৈরবীর বামাঙ্গ তথা বামদিকের পুরুষরুপই হলো মহাকালভৈরব । শ্মশানের অধিপতি দেবতা হলেন এই মহাকালভৈরব ।
কালী পূজার সময় কালভৈরব রূপে মহাকাল রুপি শিবের পূজা করা হয় । মহাকালের পূজা ব্যতীত কালী পূজা অসম্ভব ও অসম্পূর্ন ।
তন্ত্রসাধক তাঁর সাধনায় মহাকালকে সন্তুষ্ট করে অলৌকিক শক্তি অর্জন করেন, যার ফলে ভালো এবং মন্দ উভয়েরই অধিকারী হন সাধক ।
তবে একমাত্র পঞ্চমুন্ডি আসনে বসে সাধনা করতে পারলেই সেই অলৌকিক শক্তি অর্জন করা সম্ভব ।
পঞ্চমুন্ডি আসনে বসে সাধনা ব্যতীত মহাকালের পূজা অসম্পূর্ন থাকে, ফলে মা কালীর পূজাও অসম্পূর্নই থেকে যায় । পঞ্চমুন্ড জাগ্রত না হলে সাধকের ডাকে মহাকালভৈরব সাড়া দেন না । আর তিনি যদি সাড়া না দেন, তাহলে দেবীও পূজা গ্রহণ করেন না । ফলস্বরূপ যা হয়, তা কেবলই ভুল আর ভুল । ক্রমাগত এই ভুল হতে থাকলে দেবী অসন্তুষ্ট হন এবং কালভৈরবীর সেই অসন্তুষ্টিতে ক্রোধাহ্নিত হন স্বয়ং মহাকালভৈরব । যার পরিণতি আশা করি ব্যক্ত করার কোন প্রয়োজন নেই ।
কিন্তু পঞ্চমুন্ডি আসন হলো এমনই এক শক্তিক্ষেত্র, যাতে বসে সাধনা করতে হলে সাধককে এক বিশেষ পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে নিজেকে প্রস্তুত করতে হয় । অন্যথায় সেই আসনে বসা তো দূর, আসনের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গেই উন্মাদ, পঙ্গু বা মৃত্যুও ঘটতে পারে সেই ব্যক্তির ।
এই পঞ্চমুন্ডি আসনই হলো দেবাদিদেব মহাদেব ও কালী রুপী মহাকালভৈরব ও কালভৈরবী সাধনার প্রধান ও একমাত্র শক্তিক্ষেত্র ।।
0 Comments