নিজস্ব প্রতিবেদক, রামপুরহাট, ১৭ জুন ঃ সবজি বাজারে জবর দখল উচ্ছেদ করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পরে পিছু হঠল রামপুরহাট পুরসভা। যদিও পিছু হঠার কোন প্রশ্নই নেই বলে দাবি করেছেন পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন ভকত। তিনি জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হল। তাতেও জবর দখল খালি না করলে ভেঙে দেওয়া হবে।
বীরভূমের রামপুরহাট পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে রাস্তার দু-ধারে জবর দখলের কারণে রাস্তা সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। অগ্নিসংযোগ কিংবা বড়সড় কোন দুর্ঘটনা ঘটলে দমকল গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ঢোকার আগে সব শেষ হয়ে যাবে। এনিয়ে রামপুরহাট পুরসভা বার বার রাস্তা জবর দখল করে থাকা ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছে। সরকারি জায়গা ছেড়ে ব্যবসা করার আবেদন জানিয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে বার বার পিছু হঠতে হয়েছে পুরসভাকে। কারণ রাজনৈতিক টানাপোড়েন। অথচ ওই ওয়ার্ডেই বসবাস করেন রামপুরহাট বিধায়ক, বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বাড়ির সামনেই প্রতিদিন সকালে রাস্তা দখল করে বসে সবজি বিক্রেতারা। এসব ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করার জন্য রামপুরহাট মহকুমা শাসক বিধান রায়, উমা শঙ্কর এস, শ্বেতা আগরওয়ালরা বহু চেষ্টা করেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক চাপে পিছু হঠতে হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে ফের পুরসভার বিভাগীয় বাস্তুকার ডালটন চট্টোপাধ্যায় রামপুরহাট থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে উচ্ছেদ অভিযানে নামে। শুরুতেই ডেপুটি স্পিকারের বাড়ির সামনের ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ দেখান পুরসভার আধিকারিকদের। তাদের দাবি উচ্ছেদ করতে গেলে রাস্তার দুই প্রান্ত থেকে উচ্ছেদ শুরু করতে হবে। রাস্তার দু-ধারে কংক্রিটের যে সমস্ত ঝুলবারান্দা বা সিঁড়ি রয়েছে সেই গুলোও ভাঙতে হবে। ওয়ার্ডের তৃণমূলের বুথ সভাপতি তাপস গুপ্তা বলেন, “চেয়ারম্যান কিংবা কাউন্সিলর কারও সঙ্গে কোন আলোচনা না করেই উচ্ছেদ করতে এসেছিল। আমরা বলছি উচ্ছেদ করা হোক, তবে রাস্তার দুই প্রান্তের জবর দখলকারীদের আগে উচ্ছেদ করা হোক। কোন রং দেখে উচ্ছেদ করা যাবে না। অথচ ভোর ৫ টা থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত কিছু সবজি ব্যবসায়ী রাস্তা দখল করে ব্যবসা করছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কার স্বার্থে পুরসভা এমন উচ্ছেদ অভিজানে নামল বুঝতে পারছি না”।
ব্যবসায়ী রাজীব প্রসাদ, অতুল প্রসাদ গুপ্তা বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে জবর দখল উচ্ছেদের পক্ষে আছি। উচ্ছেদ হলে রাস্তা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স, দমকলের গাড়ি স্বাছন্দ্যে ভিতরে ঢুকতে পারবে। সাধারণ মানুষের উপকার হবে”।
পথচারী দেবনাথ চৌধুরী বলেন, “পুরসভা যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে সাধুবাদ জানায়। জবর দখল উচ্ছেদ হলে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে বাজারে ঢুকতে পারবে”।
ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর বিজেপির শুভাশিস চৌধুরী বলেন, “কিছু গরিব মানুষ সকালের দিকে রাস্তার উপর সবজি নিয়ে বসে দুটো আয় করে। এটা ভারতবর্ষের সর্বত্র রয়েছে। আর জবর দখল উচ্ছেদ এর আগে মহকুমা শাসকরা করেছিলেন। তবে নতুন করে কেউ রাস্তা দখল করে থাকলে উচ্ছেদ করবে। তবে তার আগে শহরের অন্যান রাস্তার জবরদখল উচ্ছেদ করতে হবে। পুকুর বুজিয়ে যে সমস্ত ফ্ল্যাট কভাবে গজিয়ে উঠছে তার তদন্ত করতে হবে। কিভাবে পাঁচ-ছয় তোলা ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে তার তদন্ত করতে হবে। শুধু হাটতলায় অভিযান চালালে হবে না”।
চেয়ারম্যান সৌমেন ভকত বলেন, “জবর দখল উচ্ছেদ হবেই। কারও কোন কথা শোনা হবে না। রাস্তা দখল করে ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। মানুষকে ভালো পরিষেবা দেওয়ায় পুরসভার কাজ। সেই কাজ চালিয়ে যাব”।
0 Comments