ব্রেকিং নিউজ

6/recent/ticker-posts

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে বিধানসভায় তোপ দাগলেন নওসাদ সিদ্দিকী

 ভাঙরবাসীর সুবিধার্থে সেতু সংস্কারের দাবি তুললেন বিধায়ক

বিশ্বরূপ দে :   বৃহস্পতিবার (২৩/৬/২২) বিধানসভা অধিবেশনের উল্লেখ পর্বে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ ও জলপথ মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে, ভাঙরের কচুয়া উত্তরপাড়া থেকে ছেলেগোয়ালিয়া সংযোগকারী ভগ্নপ্রায় ও বিপজ্জনক সেতুটি অবিলম্বে সংষ্কারের দাবি তুললেন ভাঙরের বিধায়ক পীরজাদা নওসাদ সিদ্দিকী ।

  ভাঙর বিধানসভা অন্তর্গত কচুয়া উত্তরপাড়া থেকে ছেলেগোয়ালিয়া সংযোগকারী সেতুটি দীর্ঘদিনের রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে, বর্তমানে ভগ্নপ্রায় ও বিপজ্জনক অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে । এমনকি দীর্ঘদিনের পুরনো এই সেতুটির এক প্রান্ত ইতিমধ্যেই ভেঙে পড়েছে । ফলে যখন তখন বড়সড় কোন দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় মানুষ । 

  এদিন বিধানসভায় রাজ্যের সেচ ও জলপথ মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করে ভাঙরের বিধায়ক বলেন,"সেতুটির ওপর বহু মানুষ নির্ভরশীল । সেতুর এই বেহাল অবস্থার জন্য যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে প্রবল সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে স্থানীয় মানুষকে । এমনকি স্কুলে পৌঁছনোর ক্ষেত্রেও একমাত্র ভরসা এই সেতু । বিপজ্জনক অবস্থার মধ্যে দিয়েই রীতিমতো প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে নিত্য যাতায়াত করতে হচ্ছে স্কুল পড়ুয়াদের । কৃষক ও সবজি ব্যবসায়ীরাও বহুবার এই সেতুর ওপর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে ।  বাধ্য হয়ে তারা এখন ঘুরপথে যাতায়াত করছে"। 

  কাজেই স্থানীয় মানুষের সুবিধার্থে দ্রুত এই সেতু সংষ্কারের জন্য রাজ্যের সেচ ও জলপথ বিভাগকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্যোগ নিতে হবে বলে বিধানসভায় আওয়াজ তোলেন বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী । 

  পাশাপাশি, এদিন বিধানসভায় "পশ্চিমবঙ্গ  সংখ্যালঘু বিষয়ক এবং মাদ্রাসা শিক্ষা মন্ত্রী" কর্তৃক উপস্থাপিত "আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধনী বিল ২০২২ সম্পর্কে ভাঙরের বিধায়ক তথা ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের চেয়ারম্যান পীরজাদা নওসাদ সিদ্দিকী বলেন,"আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমি আগেও এই সভাকক্ষে বলেছি । আমি নিজে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তনী । স্বাভাবিকভাবেই একটা আবেগ জড়িয়ে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে । আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ২৪২ বছরের পুরাতন প্রতিষ্ঠান । এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস দেখলে জানা যাবে ১৭৮০ সালে কলকাতার কয়েকজন মুসলমান ব্যক্তির অনুরোধই তৎকালীন ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ নেন । আলিয়ার দীর্ঘ ইতিহাসের উপর সামান্য আলোকপাত করলেই এর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের আভাস মিলবে । আলিয়া হল দেশের প্রথম সরকার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । যার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল মুসলমান সমাজের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটানো এবং আমলা ও সরকারি কেরানী তৈরি করা । সুতরাং এটা পরিস্কার, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে মুসলিম সমাজের দীর্ঘদিনের আবেগ জড়িয়ে আছে । তাই আমি মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে আশা করবো আপনি আপনার সংখ্যা গরিষ্ঠতার জোর খাটিয়ে মুসলমান সমাজের আবেগ জড়িয়ে থাকা এই প্রতিষ্ঠানের উপরে কোন আঘাত করবেন না । মুসলিম সমাজের স্বপ্নের এই প্রতিষ্ঠান ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর চরম সংকটের সম্মুখীন হয় । স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষা মন্ত্রী মাওলানা আবুল কালাম আজাদের উদ্যোগে এবং ফুরফুরা শরীফের বড় হুজুর মাওলানা আব্দুল হাই সিদ্দিকীর (রহঃ) সহযোগিতায় আলিয়ার পরিকাঠামো পুনর্গঠিত হয় । ২০০ বছরের অধিক পুরাতন এই ঐতিহ্যশালী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে ২০০৭ সালে “আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন” অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছে । আজ পুনরায় “আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধনী বিল” এই সদনে নিয়ে আসা হয়েছে । তৎকালীন এই প্রতিষ্ঠানের দুরাবস্থায় যারা হাল ধরেছিলেন সেই ফুরফুরা শরীফকে উপেক্ষা করে এই বিল নিয়ে এসে কতটা সৌজন্যতার পরিচয় সরকার দিচ্ছে তার উত্তর আশা করি মাননীয় 

মন্ত্রী মহাশয় দেবেন । মাননীয় মন্ত্রী মহাশয় হয়তো উত্তর দিতে পারেন এটি আইনের মধ্যে পড়ে কিনা, আপনার জ্ঞাতার্থে আমি বলি, আপনি এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে যখন তার পরিচালন পদ্ধতি পরিবর্তন করতে চাইছেন, তখন আপনাকে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পুরাতন অভিভাবকদের অভিমত নেওয়া উচিত ছিল । কারণ, এই প্রতিষ্ঠান স্বাধীন আইন প্রণয়ন হওয়ার পূর্বেকার প্রতিষ্ঠান । কিন্তু দুঃখের বিষয়, সামগ্রিকভাবে এই প্রতিষ্ঠানের বড় কোন উন্নতি আমরা আজও দেখতে পাইনি । আমরা দেখছি, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নানান উন্নতি হচ্ছে । অথচ এখানে সবকিছুই থমকে আছে । প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় হলো । ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেন্টর গ্রুপ তৈরি হলো । আমরা চাই ওখানে আরো উন্নতি হোক । কিন্তু আলিয়ার কি হলো ? এটাও তো ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠান । মেন্টর গ্রুপ তো দূরের কথা, একজন ভাইস চ্যান্সেলর পর্যন্ত কয়েকমাস ধরে নিয়োগ হয়নি অলিয়ায় । Ad-hoc VC কাজ চালাচ্ছেন । শেষ যিনি VC ছিলেন,  তার সাথে  কি হলো, সেটা তো আমরা দেখেছি । 

এখনও পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত funding নেই । অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় NAAC স্বীকৃতি পেয়েছে । আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় NAAC স্বীকৃতি পেয়েছে কিনা তা আজও অজানা । এই রাজ্যে শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক অবস্থা খুবই হতাশজনক । দূর্নীতি, ভুয়ো নিয়োগ, মন্ত্রী থেকে আমলা অনেকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ আসছে, তদন্ত চলছে । বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে একটা checks and balance থাকতো, যখন রাজ্যপাল আচার্য থাকতেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁর nominee থাকতো । রাজ্যপাল রাজনৈতিক প্রভাবিত কিনা, সেটা অন্য প্রসঙ্গ । যদি কোন রাজ্যপালের কাছ থেকে রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ পায় তা গণতন্ত্রের জন্য অস্বাস্থ্যকর । তদুপরি, মুখ্যমন্ত্রীর মতো একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব । তিনি আচার্যের পদে আসীন হলে ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসগুলিতে একচ্ছত্র রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগের প্রবল আশঙ্কা সৃষ্টি হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন, গবেষণা, শিক্ষক নিয়োগ, ছাত্র ভর্তির মত সমস্ত কিছুর গুণগতমান বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হবে ।  

মুখ্যমন্ত্রী আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আমির-ই-জামিয়া হবেন । কিন্তু হিসেব মতো আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তো minority status পাওয়ার কথা । হ্যাঁ, মুখ্যমন্ত্রী অবশ্যই monitor করতে পারেন । কিন্তু minority institution-এর নিজস্ব রীতি সংস্কৃতি আছে । সংবিধান প্রদত্ত আইনের বলে এটা স্বয়ংশাসিত প্রতিষ্ঠান । মুখ্যমন্ত্রী কিভাবে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আমির-ই-জামিয়া হতে পারেন ? তাহলে কি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা হরণ করা হচ্ছে ? সেক্ষেত্রে মানুষের কাছে কি বার্তা যাচ্ছে ?

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বিভাগ পুরোদমে খোলেনি । Political Science, Economics, Sociology, Science & Technology-এর নানান শাখায় full Fledged বিভাগ খোলেনি । এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে Faculty of Medical Science স্থাপিত হলো না, অথচ আলিয়া মাদ্রাসাতে অনেক আগেই চিকিৎসা শাস্ত্র পড়ানো হতো । 

আলিয়ার ২৪২ বছরের ঐতিহ্যবাহী campus এর দেখভাল হচ্ছে না । নতুন Campus এর হালও খারাপ । দরজা-জানালা ভাঙা, প্লাস্টার খসে পড়ছে । হেরিটেজ ক্যাম্পাসের সামনের ফুটপাত দখল, মূল প্রবেশদ্বারের সামনে গরু বাঁধা থাকে । পার্কসার্কাস ক্যাম্পাসে আম্ফান ঝড়ে ভেঙে পরা গাছ এখনো ক্যাম্পাস চত্বরেই পরে আছে । 

নিউটাউন ক্যাম্পাসের কাজ ২০১১ সালে শুরু হয়েছিল, ২০১৪ সালে দ্বারদঘাটন হয়, কিন্তু এই ৪ বছরের মধ্যে ভবনের কাঁচ, প্লাস্টার ভেঙে পরছে, যেকোনো সময়ে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে । মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি ক্ষমতা কুক্ষিগত না করে, আচার্যের পদ থেকে সরে গিয়ে শিক্ষাব্যবস্থা যেভাবে ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে ,পঙ্গু হচ্ছে, সেটাকে রোধ করুন । শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মচারী সহ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের দিকে নজর দিন"। 

  বিধানসভার মাননীয় অধ্যক্ষকে তিনি বলেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো স্বয়ংশাসন । সেজন্য সংসদ বা বিধানসভায় আইন তৈরি হয়, যাতে বিশ্ববিদ্যালয় রাজনৈতিক, বিশেষত সরকারের প্রভাবমুক্ত থাকে । কিন্তু, এখানে দেখা যাচ্ছে এই সবকিছুকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে, রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে রাজ্যসরকার এই বিল নিয়ে এসেছে ।

  মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী বলেন,'"মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তদারকি করুন । আমির-ই-জামিয়া হয়ে নয় । তাতে বিশ্ববিদ্যালয়েরই মঙ্গল হবে"।

Post a Comment

0 Comments