তথ্য ও গবেষণা:
মহঃ এন্টনি বোস
সাধক বামাক্ষ্যাপা একবার কলকাতায় এসেছিলেন । সেবার তিনি কালীঘাটে যান মা কালীকে দর্শন করতে । মন্দিরে যাওয়ার আগে বামাক্ষ্যাপা আদিগঙ্গায় স্নান করতে গেলেন ৷
আদিগঙ্গায় স্নান করে তিনি এসে দাঁড়ালেন মায়ের মূর্তির সামনে । বললেন, - *চল মা, তোকে আমি তারামার কাছে নিয়ে যাব* । একথা বলে যেই তিনি মূর্তি স্পর্শ করতে যাবেন, তখনই উপস্থিত ব্রাহ্মণগন বাধা দিয়ে উঠলেন । বললেন, বাইরের কাউকে তাঁরা দেবীমূর্তি স্পর্শ করতে দেবেন না । এতে বামাক্ষ্যাপার খুব কষ্ট হল । শিশুর মতো অভিমান করে বলে উঠলেন, - *চাই না আমি মা কালীকে । অমন রাক্ষুসে রূপ । এর থেকে আমার তারামা ভালো । আহা, আমার তারা মায়ের রূপের কী বাহার*। একথা বলে তিনি মন্দির থেকে বেরিয়ে গেলেন ।
এর পরে অন্যান্যরা তাদের ভুল বুঝতে পেরে তাঁর কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে বললে, - *ঠাকুর আপনি ফিরে চলুন । আমাদের ভুল হয়েছে । আপনি মূর্তি স্পর্শ করতে পারবেন*। কিন্তু তিনি আর স্পর্শ করলেন না মায়ের পাষাণ বিগ্রহ । ধীর স্থির শান্ত অচঞ্চল পদক্ষেপে বেরিয়ে এলেন মন্দির থেকে ।
ক্ষোভে দুঃখে তিনি মন্দির থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসার সময় দেখা হয় যুগাবতার ভগবান শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের সঙ্গে । তিনি মন্দির থেকে বেরিয়ে আসছেন এদিকে রামকৃষ্ণ দেব মন্দিরে ঢুকছেন ৷ দুই মহামানবের আলিঙ্গন হয় ৷
রামকৃষ্ণদেব বামাক্ষ্যাপার অমন ক্রুদ্ধ মুখ দেখে বললেন, - *চলো শ্যামনগরে, আমার আরেক মা আছে তার সঙ্গে দেখা করে আসি*। বামাক্ষ্যাপা কোন আপত্তি না করে চললেন রামকৃষ্ণ দেবের সঙ্গে শ্যামনগরে মা কালীকে দেখতে । রামকৃষ্ণ দেব বামাক্ষ্যাপাকে নিয়ে আদিগঙ্গা দিয়ে নৌকায় চাপিয়ে বামাক্ষ্যাপাকে নিয়ে গিয়েছিলেন শ্যামনগর *মূলিজোড় কালী মা'* দর্শন করতে । যে মা একসময় গঙ্গায় নৌকায় বেয়ে যাওয়া রামপ্রসাদ সেনের গান শুনতে চেয়েছিলেন ৷ রামপ্রসাদ মাকে বলেছিলেন, - *তোর যদি গান শুনবার ইচ্ছা হয় তো তুই আমার দিকে ফিরে শোন — আমার আজ কাজ আছে, দাঁড়িয়ে (থেমে) তোকে গান শোনাতে পারব না*। ভক্তের গান শোনার জন্য মা — মন্দির সমেত দক্ষিন থেকে পশ্চিম দিকে ঘুরে গিয়েছিলেন ৷ আজও সেই মন্দির বর্তমান ৷ মন্দিরে কৃষ্ণকালী মূর্তি আছে ৷ পৌষ মাসে জোড়া মূলো দিয়ে পূজা দিতে হয়, সেই জন্য "মূলাজোড় কালী বাড়ী" নামে খ্যাত শ্যামনগরের ওই স্থান ৷
এখানে এসে মাকে দেখে বামাক্ষ্যাপা পরম শান্তি লাভ করেছিলেন ৷ মায়ের অমন দিব্যসৌম্য রূপ দেখে বামাক্ষ্যাপা শান্ত হয়ে গেলেন । শ্যামনগরে গঙ্গায় স্নান করে বামাক্ষ্যাপা ওই রাত্রে নিজে মায়ের পূজাও করেছিলেন ৷
শ্যামনগরের কালীবাড়িতে পূজা করে তারপর সেখান থেকে আবার রামকৃষ্ণ দেব ও বামাক্ষ্যাপা নৌকায় করে এসে বামাক্ষ্যাপাকে হাওড়া ষ্টেশনে ছেড়ে যান এবং নৌকায় রামকৃষ্ণদেব দক্ষিণেশ্বরে চলে ৷ বামাক্ষ্যাপা ফিরে যান তার তারা মায়ের কোলে তারাপীঠে ।
0 Comments