সঠিক নিয়মে শক্তিসাধনা না করলে উন্মাদ বা পঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল
তথ্য ও গবেষণা:
মহঃ এন্থনি বোস
মা ছিন্নমস্তা হিন্দুসমাজে এক সুপরিচিত দেবী, তবে মায়ের এই ভয়ঙ্করী রূপের পূজা সীমাবদ্ধ । মায়ের নিজস্ব মন্দিরের সংখ্যা একেবারেই হাতে গোনা । কোন কোন জায়গায় দশমহাবিদ্যার মন্দিরেও পূজিতা হন দেবী ছিন্নমস্তা । এককভাবে তাঁর সার্বজনীন পূজাও সুপ্রচলিত নয় ।
সর্বত্যাগী যোগী এবং তান্ত্রিকগনই বীরাচারী তন্ত্রমতে মায়ের পূজা করে থাকেন । কারণ, দেবী ভীষণা এবং তাঁর পূজা করা বা তাঁর নিকটে যাওয়া অনেকের ক্ষেত্রেই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে । এই রকম বেশ কিছু দৃষ্টান্তের জন্য মায়ের পুজো সেভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি ।
মা ছিন্নমস্তার শতনাম ও সহস্রনাম স্তোত্রে দেবীর ভীষণা প্রকৃতি ও ক্রোধের উল্লেখ আছে । এই সকল উল্লিখিত নামে তাঁকে প্রেতসেবিতা ও রক্তপানকারিণী রূপেও বর্ণনা করা হয়েছে । তিনি নররক্ত ও নরমাংসে প্রীতা হন । দেহরোম, মাংস ও ভয়ংকর তন্ত্রমন্ত্রে তাঁর পূজা করা হয়ে থাকে ।তন্ত্রসাধকগণ সিদ্ধি বা অলৌকিক ক্ষমতা লাভের জন্য বীজমন্ত্রশক্তি দ্বারা মা ছিন্নমস্তার পূজা বা সাধনা করেন ।
তবে সঠিক নিয়মে বীজমন্ত্র পাঠ বা সাধনা করতে না জানলে পাগল বা পঙ্গু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল ।
কাউকে মন্ত্রচালিত করা বা কারোর ক্ষতি করার জন্যও মা ছিন্নমস্তার মন্ত্র ব্যবহার করা হয় ।
কাব্যশক্তি, সুস্থতা, শত্রুবিজয়, বিঘ্নবাধা অপসারণ, অর্থ লাভ, অন্যকে আকর্ষণ, শত্রু জয় ও মোক্ষলাভ এবং মহাবিদ্যা আরাধনার উদ্দেশ্যেও ছিন্নমস্তার পূজা করা হয় ।
তন্ত্রসার, শাক্ত প্রমোদ ও মন্ত্র মহোদধিহ নামক তন্ত্র গ্রন্থে ছিন্নমস্তা ও অন্যান্য মহাবিদ্যার পূজাপদ্ধতি, যন্ত্র, ধ্যানমন্ত্র সহ অন্যান্য মন্ত্রেরও উল্লেখ রয়েছে ।
তন্ত্রসারে গৃহস্থকে কেবল নিরাকার রূপেই ছিন্নমস্তার পূজা করতে বলা হয়েছে । এই গ্রন্থে আরও বলা হয় যে, যদি কোনো নারী, মন্ত্রশক্তি দ্বারা ছিন্নমস্তাকে আবাহন জানায়, তবে তিনি পূর্ণ ডাকিনীতে পরিণত হন, স্বামী-পুত্র হারান এবং শেষে পরিপূর্ণ যোগিনী হন । শক্তিসঙ্গম তন্ত্র গ্রন্থে কেবল বামমার্গে দেবীর পূজা করতে বলা হয়েছে । শাক্ত প্রমোদ গ্রন্থেও যজ্ঞ ও রাত্রিকালে মদ্য ও মাংস যোগে দেবীর পূজার কথা বলা হয়েছে । কোনো কোনো স্তবে বলা হয়েছে, দেবী রক্তে সন্তুষ্ট হন । তাই তাঁর পূজায় রক্ত বলিদান করা হয় । শক্তিসঙ্গম তন্ত্র মতে একমাত্র বীরেরাই বামমার্গে দেবীর পূজার অধিকারী বলে উল্লেখ করা হয়েছে । শাক্ত প্রমোদ গ্রন্থে বলা হয়েছে, সঠিক ভাবে দেবীর পূজা না করলে দেবী সাধকের মস্তক ছিন্ন করে রক্ত পান করেন । এই গ্রন্থে গৃহস্থ ও ত্যাগীর জন্য পৃথক পন্থায় ছিন্নমস্তার পূজার বর্ণনা রয়েছে ।
অতীতে গোরক্ষনাথ এবং মৎসেন্দ্রনাথের মতো মহাশক্তিশালী যোগীরাই মাকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছিলেন । তাদের পর দেবীর এই ভয়ঙ্করী রূপের সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করা তো দূর, বহু শক্তিসাধক মায়ের সামনে বসে বীজমন্ত্র পাঠ অসম্পূর্ন রেখেই উঠে যেতে বাধ্য হন এবং পরক্ষনেই কেউ উন্মাদ হয়ে ঘুরতে থাকেন, কেউ আবার পঙ্গু হন । কারণ, তাদের কেউই পঞ্চমুন্ড আসনে বসে শক্তি সাধনায় উত্তীর্ণ না হয়েই মা ছিন্নমস্তার সাধনা করার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন ।
0 Comments