ব্রেকিং নিউজ

6/recent/ticker-posts

প্রকৃতিই ঈশ্বর - "THE SUPREME POWER OF GOD PARTICLE"

কেদারনাথের নির্মাণকারী বিজ্ঞানী ব্যক্তিগণ আজও অনাবিষ্কৃত


তথ্য ও গবেষণা:

মহঃ এন্টনি বোস

    কেদারনাথ মন্দির কে বা কারা তৈরি করেছিলেন তা নিয়ে অনেক কথা বলা হয় । এমনকি পাণ্ডব থেকে আদি শঙ্করাচার্য পর্যন্ত । কিন্তু বিজ্ঞান অনুমান করে  যে কেদারনাথ মন্দির সম্ভবত অষ্টম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল, অর্থাৎ বলা যেতে পারে , এই মন্দিরটি অন্তত ১২০০ বছর ধরে বিদ্যমান ।

  কেদারনাথ যে জায়গায় আছে, একবিংশ শতাব্দীতেও তা খুবই প্রতিকূল । একদিকে ২২,০০০ ফুট উঁচু কেদারনাথ পাহাড়, অন্য দিকে ২১,৬০০ ফুট উঁচু করাচকুন্ড এবং তৃতীয় দিকে ২২,৭০০ ফুট উঁচু ভারতকুন্ড । এই তিনটি পাহাড়ের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পাঁচটি নদী হল মন্দাকিনী, মধুগঙ্গা, চিরগঙ্গা, সরস্বতী ও স্বরন্দরী ।

  এই এলাকাটি "মন্দাকিনী নদীর" একমাত্র রাজ্য । শীতের দিনে প্রচুর পরিমাণে তুষারপাত এবং বর্ষায় প্রবল বেগে জল প্রবাহিত হয়, এমন জায়গায় একটি শিল্পকর্ম তৈরি করা কতটা কঠিন হতে পারে, সেটা কল্পনার অতীত । এমন একটি দুর্গম জায়গায় কেদারনাথ মন্দিরের অবস্থান, যেখানে আজও গাড়ি চালিয়ে সরাসরি পৌছনো সম্ভব নয় । 

  কিন্তু কেন এটি এমন জায়গায় নির্মিত হয়েছিল ? এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ১০০০ বছরেরও বেশি আগে একটি মন্দির কীভাবে তৈরি হতে পারে , সে চিন্তা অনেকেরই । বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন, মন্দিরটি যদি ১০ শতকে পৃথিবীতে থাকত, তবে এটি একটি ছোটখাটো  "বরফ যুগ" এর মধ্যে থাকত ।

  ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট অফ জিওলজি, দেরাদুন, কেদারনাথ মন্দিরের পাথরগুলির উপর লিগনোম্যাটিক ডেটিং এর একটি পরীক্ষা পরিচালনা করেছে । এটি "পাথরের বয়স" নির্ণয় করার জন্য করা হয় । পরীক্ষায় দেখা গেছে যে মন্দিরটি ১৪ শতক থেকে ১৭ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে বরফে ঢাকা ছিল । তাতেও মন্দির নির্মাণে কোনো ক্ষতি হয়নি ।

  ২০১৩ সালে কেদারনাথে যে বিপর্যয়কর বন্যা আঘাত হানে তা সকলেরই জানা । সেই সময়কালে, বৃষ্টিপাত গড়ের চেয়ে ৩৭৫% বেশি ছিল । পরবর্তী বন্যায় "৫৭৪৮ জন" (সরকারি পরিসংখ্যান) নিহত হয় এবং ৪২০০টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয় । ভারতীয় বায়ুসেনা ১ লাখ ১০ হাজারেরও বেশি লোককে এয়ারলিফট করে স্থানান্তর করেছিল । এমন প্রলয়ঙ্করী বন্যাতেও কেদারনাথ মন্দিরের পুরো কাঠামো বিন্দুমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি ।

  আর্কিওলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার মতে, বন্যার পরেও মন্দিরের পুরো কাঠামোর নিরীক্ষায় মন্দিরের ৯৯ শতাংশ সম্পূর্ণ নিরাপদ । ২০১৩ সালের বন্যার সময় নির্মাণে কতটা ক্ষতি হয়েছিল এবং এর বর্তমান অবস্থা অধ্যয়নের জন্য "আইআইটি মাদ্রাজ" মন্দিরে "এনডিটি পরীক্ষা" পরিচালনা করে এবং দেখা যায় যে মন্দিরটি সম্পূর্ণ ভাবে নিরাপদ এবং মজবুত রয়েছে ।

  এই মন্দির দুটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত । একটি খুব গুরত্বপূর্ণ  বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা"তে উত্তীর্ণ না হলে বিশেষজ্ঞরা এই মন্দিরকে স্থাপত্য শিল্পের সেরা নিদর্শন হিসেবে ঘোষণা করতে পারতেন না । 

  ১২০০ বছর পরে, যেখানে সেই এলাকার সমস্ত কিছু দুরন্ত নদী দ্বারা বাহিত হয়, অথচ এই মন্দিরটি সেখানে দাঁড়িয়ে আছে এবং শুধু দাঁড়িয়েই নয়, এটি প্রতিমুহূর্তের এক শক্তিশালী শিল্পকীর্তির প্রমান ।

  যে পদ্ধতিতে ও জায়গা নির্বাচনে এই মন্দিরটি তৈরি করা হয়েছে তার পিছনে কোনো অদ্ভুত শক্তি  রয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরাও । বিজ্ঞান বলছে, মন্দির নির্মাণে যে পাথর ও কাঠামো ব্যবহার করা হয়েছে তার কারণেই ভয়াবহ বন্যায় মন্দিরটি টিকে থাকতে পেরেছিল ।

  কেদারনাথ মন্দির "উত্তর-দক্ষিণ" হিসাবে নির্মিত । যদিও ভারতের প্রায় সব মন্দিরই ‘পূর্ব-পশ্চিম’। বিশেষজ্ঞদের মতে, মন্দিরটি যদি "পূর্ব-পশ্চিম" হত, তবে এটি ইতিমধ্যেই ধ্বংস হয়ে যেত । অথবা অন্তত ২০১৩ সালের বন্যায় তা ধ্বংস হয়ে যেত । কিন্তু এই দিক নির্দেশনার কারণেই টিকে আছে কেদারনাথ মন্দির । আরেকটি বিষয় হলো এতে ব্যবহৃত পাথরটি খুবই শক্ত ও টেকসই ।

  একটি আশ্চর্যজনক বিশেষ বিষয় হল এই মন্দির নির্মাণে যে পাথর ব্যবহার করা হয়েছে তা সেখানে পাওয়া যায় না, তাহলে ওই পাথর সেখানে এলো কিভাবে ? তখন এত বড় পাথর বহন করার মতো যন্ত্রপাতিও আবিষ্কার হয়নি । এই পাথরের বৈশিষ্ট্য হল বরফের নীচে থাকার ৪০০ বছর পরেও এর বৈশিষ্টে কোন পার্থক্য নেই ।


  তাই বলা যায় প্রকৃতির আবর্তেই মন্দিরটি তার শক্তি বজায় রেখেছে । মন্দিরের এই মজবুত পাথরগুলো কোনো সিমেন্ট ব্যবহার ছাড়াই "Ashler" পদ্ধতিতে একত্রে জোড়া হয়েছে । তাই পাথরের জয়েন্টে তাপমাত্রা পরিবর্তনের কোনো প্রভাব ছাড়াই মন্দিরের শক্তি দুর্ভেদ্য ।

  ২০১৩ সালে অলৌকিক ভাবে মন্দিরের পিছনে একটি বড় পাথর আটকে যায় এবং জলের প্রচন্ড ধারাকে দুইপাশে বিভক্ত করে দেয় । কিন্তু অদ্ভুতভাবে মন্দির এবং মন্দিরে আশ্রয় নেওয়া লোকেরা সুরক্ষিত থাকে । যাদের পরের দিন ভারতীয় বিমান বাহিনী এয়ারলিফট করে উদ্ধার করে ।

  তবে একি কোনো অজানা শক্তির অবদান ! এতে কোন সন্দেহ নেই যে মন্দিরটি নির্মাণের জন্য স্থান, দিকনির্দেশ, নির্মাণ সামগ্রী এমনকি প্রকৃতিকেও সতর্কতার সাথে বিবেচনা করা হয়েছিল যা যুগ যুগ ধরে এর সংস্কৃতি এবং শক্তি সংরক্ষণ করবে ।

  টাইটানিক ডুবে যাওয়ার পর পশ্চিমীরা বুঝতে পেরেছিল যে কীভাবে "এনডিটি পরীক্ষা" এবং "তাপমাত্রা" সমস্ত ধারণা ঘুরিয়ে দিতে পারে ।

কিন্তু কেদারনাথ মন্দির নির্মাণে সেই প্রযুক্তি কার্যকরী হয়েছিল ১২০০ বছর আগে ।

  প্রবল ভারী বর্ষণ এবং তুষারপাতের মধ্যেও এখনও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২,০০০ ফুট উপরে মাটিকে সঠিক ভাবে ঢেকে রাখে এই স্থাপত্য । ৬ ফুট উঁচু প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে যে বিপুল পরিমাণ বিজ্ঞান ব্যবহার করা হয়েছে তা ভেবে হতবাক বিজ্ঞানীরা ।

আজ, সমস্ত বন্যার পরে, কেদারনাথ মন্দির সৃষ্টিকারী সেই অজানা বিজ্ঞানীদের নির্মাণের সামনে মাথা নত করে বিশ্বের তাবড় তাবড় ইঞ্জিনিয়ার ও বিজ্ঞানীরা ।

কিন্তু মন্দির নির্মাণকারী বিজ্ঞানী ব্যক্তিগণ আজও অনাবিষ্কৃত । কারণ মন্দিরের সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং প্রকৃতি । 

  তাই বলাই বাহুল্য, প্রকৃতিই সর্বশক্তিমান, প্রকৃতিই সৃষ্টি ও ধ্বংসের ধারক-বাহক । প্রকৃতিই ঈশ্বর - "THE SUPREME POWER".



  বৈদিক হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতি কতটা অগ্রসর ছিল তার নিদর্শন এটি। সেই সময়ে, আমাদের ঋষিরা, অর্থাৎ বিজ্ঞানীরা, স্থাপত্য, আবহাওয়া, মহাকাশ বিজ্ঞান, আয়ুর্বেদে অসাধারণ জ্ঞান ও প্রয়োগ বিদ্যায় অত্যন্ত দক্ষতা লাভ করেছিলেন।

Post a Comment

0 Comments