police provided treatment to the cancer-stricken student
নিজস্ব প্রতিনিধি , বর্ধমান : ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে মাধ্যমিক পাশ করা ছাত্রীকে মুম্বাইয়ে চিকিৎসার জন্য পাঠালো পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে মাধ্যমিক পাশ করা এক ছাত্রীর স্যার,আমি বাঁচতে চাই’ এই করুণ আর্তি শুনে পুলিশ কর্তাদের হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে গিয়েছিল।তার পর থেকেই পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিষ সেনের অনুমতি নিয়ে ক্যানসার আক্রান্ত ছাত্রী সামিনা খাতুনের পাশে দাঁড়ান জামালপুর থানার ওসি রাকেশ সিং ও এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) সুপ্রভাত চক্রবর্তী।ক্যানসার রোগের চিকিৎসার জন্য তাঁরাই সমস্ত আর্থিক খরচ বহন করে সামিনাকে মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন তারা।
বৃহস্পতিবার বিকালে জামালপুর থানায় হাজির হয় সামিনা ও তাঁর মা নূরজাহান বেগম। পুলিশের গাড়িতে চড়েই এদিন মুম্বই যাওয়ার জন্য হাওড়া স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা হয় সামিনা।
জামালপুর ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম রামনাথপুর । এই গ্রামের এক প্রান্তে রয়েছে দরিদ্র ছাত্রী সামিনাদের বাড়ি ।ছোট দু’কুটুরি ঘরে পরিবারের সবাই বসবাস করেন । ছাত্রীর বাবা শেখ আলম পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ব্যক্তি ।তিনি দিন মজুরির কাজ করেন।
অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় সামিনার শারীরিক অসুস্থতা শুরু হয়। তাঁর বাবা মা তাঁকে জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান চিকিৎসার জন্যে । তখন মনে করেছিলেন জামালপুর হাসপাতালের ডাক্তারবাবুদের চিকিৎসাতেই সামিনা সুস্থ হয়ে উঠবে ।কিন্তু তা হয় নি। বিভিন্ন ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্টে ধরা পড়ে সামিনার শরীরে বাসা বেঁধেছে মারণ ব্যাধি।তার পর থেকে টানা প্রায় তিন বছর ধরে তাঁর ক্যানসার রোগের চিকিৎসা চলছে।সেই থেকে নিয়ম করে সামিনাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ’কেমো থেরাপি’ ও ’রেডিয়েশন থেরাপি’ নিতে যেতে হত । এর জন্য মাথার চুল সব উঠে যাওয়ায় সামিনা প্রথমে একটু মুষড়ে পড়েছিল ঠিকই। তবে এখন তা নিয়ে সামিনা আর মাথা ঘামাতে চায়না।।ক্যানসার রোগের সমস্ত জ্বালা যন্ত্রনাকে দূরে সরিয়ে রেখে সামিনা এবছর ২০৪ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তির্ণ হয়।
মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল ঘোষণার পরেই সামিনার বাড়িতে যান এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী ও ওসি রাকেশ সিং।ওই পুলিশ কর্তাদের কাছে নিজের শারীরিক অসুস্থতার কথা তুলে ধরে সামিনা ।একইসঙ্গে সামিনা পুলিশ কর্তাদের কাছে কাতর আর্তি জানিয়ে বলে, “স্যার, আমি বাঁচতে চাই । মুম্বইয়ে আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেদিন“ ।
সমিনা ওইদিন পুলিশ কর্তাদের জানায়’ “তাঁর ’দুই কানের নিচে গলার অংশে’ ক্যানসার বাসা বেঁধেছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। চিকিৎসা চলছে ঠিকই, তবে তাঁর শরীর এখন ভালো যাচ্ছে না ।শরীরে জ্বর রয়ে থাকছে । গলায় ব্যাথা থাকায় ভাত গিলে খেতেও তাঁর অসুবিধা হচ্ছে । সামিনা এদিনও জানায় সে বাঁচতে চায় । এসপি ,এসডিপিও , ওসি তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরাই সব ব্যবস্থা করে তাঁকে মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসাপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠাচ্ছেন । প্রত্যাশা ওখান থেকে সুস্থ হয়েই বাড়ি ফিরবো।সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করবে বলেও সামিনা জানায় “।সামিনার মা নূরজাহান বেগম বলেন ,“তাঁর মেয়েকে প্রাণে বাঁচানোর জন্য পুলিশ বাবুরা যে ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন তা কোন দিন ভোলার নয় ।পুলিশ বাবুদের অবদান সারাজীবন মনে রাখবো “।
এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন,এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল ঘোষনার দিনেই ছাত্রী সামিনার কথা আমরা জানতে পারি ।ওই দিনই জানতে পারি সামিনা ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফল ভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে।এমন দৃষ্টান্ত তৈরি করার জন্যে ওইদিন আমরা সামিনাকে শুভেচ্ছা জানাতে যাই। ওই দিন ,“সামিনা কাতর আর্তি জানিয়ে বলে, স্যার, আমি বাঁচতে চাই ।মুম্বইয়ে আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিন স্যার“ ।মেয়ের জন্য একই আবেদন রাখে সামিনার বাবা ও মা । এর পর থেকেই জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিষ সেনের অনুমতি নিয়ে মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে সামিনার চিকিৎসা করানোর ব্যাপারে যাবতীয় উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়।এই ব্যাপারে মুখ্য উদ্যোগ নেন ওসি রাকেশ সিং। মুম্বাইয়ের হাসপাতালের বিষয়ে জানা থাকা জামালপুর হাটতলা এলাকার বাসিন্দার ন শেখ আলাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে এদিন সামিনা ও তাঁর মাকে মুম্বাইয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা পুলিশ করেছে ।
ট্রেনের টিকিট সহ খাবার , অর্থ সবই জামালপুর থানার পুলিশের পক্ষ থেকে সামিনার মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়।এদিন সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে হাওড়া স্টেশন থেকে সিএসএমটি মেলে চড়ে তাঁরা সবাই মুম্বই যাবে ।
0 Comments