নিজস্ব প্রতিবেদক : ঝাড়খন্ড থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের 'সঞ্চালন লাইন' নেয়াকে কেন্দ্র করেখন্ড যুদ্ধ ফারাক্কায়, আহত বেশ কয়েকজন।
বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ঝাড়খন্ডের গোড্ডা হয়ে ফরাক্কার বেনিয়াগ্রাম দাদনতোলার উপর দিয়ে আদানী গোষ্ঠীর কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ (হাইটেনসন কেবল) নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় ফারাক্কায়। শনিবার ঘটনাটি ঘটে ফরাক্কার জাফরগঞ্জে দাদনটোলা গ্রামে। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কার্যত খন্ডযুদ্ধ বেধে যায় আদানী গোষ্ঠীর কর্মকর্তাদের সাথে।
অভিযোগ, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে আদানি গ্রুপের তরফে গ্রামের উপর দিয়ে সঞ্চালন লাইন নেয়াকে ঘিরেই গত কয়েকদিন ধরে উত্তপ্ত ফারাক্কা। গ্রামবাসীরা তাদের নিজস্ব জমির উপর দিয়ে ওই 'সঞ্চালন লাইন' নিয়ে যেতে বাধা দেন। আর যা ঘিরেই শুরু হয় বিপত্তি। শনিবার তা চরম আকার নেয়।
ঘটনার খবর পেয়ে গ্রামবাসীদের বিষয়টি বোঝাতে ঘটাস্থাকে ছুটে আসে ফরাক্কার পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কিন্তু নিজের অবস্থান থেকে এক চুলও নড়তে নারাজ ছিল গ্রামবাসীরা। উত্তেজিত গ্রামবাসীদের সঙ্গে বচসা সৃষ্টি হয় পুলিশের। একসময় পুলিশকে লক্ষ করে পাথর ছোঁড়ে গ্রামবাসীরা, তাতে জখম হয় কয়েকজন পুলিশ সদস্য। পাল্টা পুলিশের তরফেও প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়, আত্মরক্ষায় স্থানীয় বাসিন্দাদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করলে তাতে দুই জন গ্রামবাসীও আহত হয়েছেন স্থানীয় সূত্রের খবর। আতাদের সকলকেই জঙ্গিপুর মহকুমা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিন দুপুরের দিকে পুলিশকে সাথে নিয়ে ওই সংস্থার কর্মীরা গ্রামে এলে জেলা পরিষদের সদস্য ও স্থানীয় কংগ্রেস নেতা আশিক ইকবাল সাথে বচসাবাধে।
গোটা ঘটনায় যথেষ্ট উত্তেজনায় ছড়িয়েছে এলাকায়। ইতিমধ্যেই ওই এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে ফরাক্কা থানার বিশাল পুলিশ বাহিনীকে।
উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ার কারমাইকেল খনি থেকে কয়লা নিয়ে আসা হবে উড়িষ্যার ধামরা বন্দরে। সেই কয়লা রেল পথে যাবে ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। আর গোড্ডার তৈরি বিদ্যুৎ সরাসরি বিক্রি হবে বাংলাদেশে। দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্য থেকে বিদ্যুৎ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার। আমদানিকৃত বিদ্যুৎ বাংলাদেশের কৃষিজ অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র রাজশাহী ও রংপুর এলাকায় সরবরাহ করা হবে জানা যায়। ঝাড়খণ্ডের ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর ভারত ও বাংলাদেশ- উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তি অনুযায়ী কয়লাভিত্তিক ওই বিদ্যুৎ সাপ্লাই দিতে গোড্ডা থেকে মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার ইমামনগর ও বেনিয়াগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের উপর দিয়ে কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মানের কাজ করছিলেন আদানি গ্রুপের কর্মকর্তারা। কিন্তু গ্রামবাসীদের অভিযোগ, 'সঞ্চালন লাইন' তাদের জমির উপর দিয়ে নিয়ে গেলেও তাদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণও দেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় গ্রামবাসীরা। আদালতের তরফে গ্রামবাসীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ, সেই নির্দেশকে অমান্য করেই কাজ চালাচ্ছেন আদানি গোষ্ঠীর কর্মকর্তারা। শুধু তাই নয়, আন্দোলন করার জন্য এবং তাদের জমির উপর দিয়ে 'সঞ্চালন লাইন' নিয়ে যেতে বাধা দেওয়ার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসীরা।
মানবাধিকার সাগঠন এপিডিয়ার এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে । এক প্রেস বিবৃতে এপিডিয়ারের সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ শুর জানিয়েছেন,' জমি মালিকদের সঙ্গে কোন রকম চুক্তি ছাড়া,তাঁদের সন্মতি ও ক্ষতিপূরণ ছাড়া আমবাগান ও লিচু বাগানের উপর দিয়ে এভাবে হাইটেনশন তার নিয়ে যাওয়া বেআইনি। কৃষক ও গ্রামবাসীদের প্রবল আপত্তি সত্ত্বে পুলিশ দিয়ে মারধর করে এভাবে জমি দখল করার অপচেষ্টা খুবই আপত্তিজনক। একদিন জমি আন্দোলোন করেই ক্ষমতায় এসেছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। ইতিহাসের পরিহাস আজ মমতা সরকারই চাষীদের অসন্মতি সত্বেও পুলিশ দিয়ে, গুন্ডা দিয়ে সন্ত্রাস সৃস্টি করে শিল্পপতিদের হয়ে জমি দখল করছেন।*
0 Comments