নিজস্ব প্রতিনিধি , কলকাতা : শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তৃণমূল মহাসচিব , শিল্পমন্ত্রী এবং প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে এনফোসমেন্ট ডাইরেক্টর। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তার হওয়ার পরে নিম্ন আদালতের নির্দেশে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হন চিকিৎসার জন্য। সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট। কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তদন্তকারী সংস্থা ইডি।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে ২১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নগদ উদ্ধার করে ইডি। এর সঙ্গে ৭০ লক্ষ টাকারও বেশি গহনা উদ্ধার করে ইডি। অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের এই আয়ের উৎস ইডি জানতে চাইলেও সদুত্তর দিতে পারিনি অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। শুধু অর্পিতা মুখোপাধ্যায় নয়, নাম উঠে আসছে শান্তিনিকেতনের মোনালিসা দাসেরও। ইডি মনে করছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গচ্ছিত সম্পদ মোনালিসা দাস এর কাছেও রয়েছে।
ইডি মনে করছে পার্থ চট্টোপাধ্যায় কে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। সে কারণে ব্যাঙ্কশাল কোটে ইডি ১৪ দিনের তাদের হেফাজতের আবেদন করে। কিন্তু নিম্ন আদালত দুদিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দেয়। সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবীরা জানান তিনি অসুস্থ বোধ করছেন এবং তার চিকিৎসা জরুরি হয়ে পড়েছে। ইনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টর এর তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসার জন্য আলিপুর কমান্ডো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেও নিম্ন আদালত এসএসকেএম এ চিকিৎসার জন্য নির্দেশ দেন।
এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট নিম্ন আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেন। ইডির দাবি পার্থ চট্টোপাধ্যায় জিজ্ঞাসাবাদ এড়ানোর জন্যই এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাই কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিক এসএসকেএম হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোন হাসপাতালে ভর্তি করার। রবিবার স্পেশাল আদালতে শুরু হয় সরল জবাব। সবার জবাবের পরে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অসুস্থতা তার সাস্থ্য পরীক্ষা হবে ওড়িশা এইসে। সোমবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে পার্থ চট্টোপাধ্যায় কে নিয়ে যাওয়া হবে উড়িষ্যা এইমস হাসপাতালে। সঙ্গে থাকবেন এইমসের চিকিৎসকরা এবং আইনজীবীরা ।একই সঙ্গে কলকাতা হাইকোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেন এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসকদের আচরণ নিয়ে। প্রভাবশালী কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গ্রেপ্তার হওয়ার পরে আশ্রয় নেন এসএসকেএম হাসপাতালে। ইডির বক্তব্য তদন্ত প্রক্রিয়া এড়ানোর জন্যই তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এসএসকেএমে ভর্তি হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। বিরোধীদের বক্তব্য লক্ষ লক্ষ চাকরি প্রার্থী চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। একইসঙ্গে টাকার বিনিময় কিছু অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীর চাকরি করে দিয়েছেন এইসব নেতৃত্ব। তাই এদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আসল রহস্য উদঘাটন করা উচিত।
কলকাতা হাইকোর্টের সওয়াল জবাবের সময় ইডির আইনজীবীরা অভিযোগ করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী, তাই নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে ই ডির প্রশ্নবানকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শুধু পার্থ চট্টোপাধ্যায় নয় বিগত দিনের দিকে তাকালে অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব গ্রেপ্তার হওয়ার পরে এরকম এসএসকেএম এ ভর্তি হয়েছেন। এবং তদন্তকারী সংস্থার প্রশ্নকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে রিপোর্টকে ব্যবহার করেছেন। যার কারনে কলকাতা হাইকোর্ট বিভিন্ন সময় এসএসকেএম হাসপাতালে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ভর্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।
ইডির আবেদনে কলকাতা হাইকোর্ট সাড়া দিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন ওড়িশা এইমসে হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশের পরে অল্প বিস্তার হলেও চাপে পড়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তৃণমূল দল। দিনভর চাপানো তোর চলার পরে অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ পেয়ে তদন্তকারী সংস্থা আশাবাদী খুব শিগগিরই স্কুল শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে আরও নতুন তথ্য উঠে আসবে।।
0 Comments