ব্রেকিং নিউজ

6/recent/ticker-posts

নীরবে চলে গেলেন শহীদ উধম সিং

No one remembers Shaheed Udham Singh

নিজস্ব প্রতিনিধি : রাম-মহম্মদ-সিং আজাদ বলে কাউকে চেনেন ? আজকের ভারতবর্ষে এ নামে কাউকে চেনা সম্ভব নয়। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের মূল খলনায়ক মাইকেল ও ডায়ারকে খতম করার  পর লন্ডনের কোর্টে এই নামেই বলেছিলেন শহীদ - ই- আজম উধম সিং ।  ৩১ জুলাই ১৯৪০ সালে ইংল্যান্ডে তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল বৃটিশরা। আজ দেশজুড়ে এই অবক্ষয়ের রাজনীতির বিপ্রতীপে দাড়ানো সেই শহীদ উধম সিংকে আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ ।

 পার্থ- অর্পিতার কালো টাকা উদ্ধারের খবরের ঘনঘটার মধ্যে নীরবেই চলে গেল ৩১ জুলাই । কেউ একবার স্মরণও করল না শহীদ - ই- আজম উধম সিংকে। অথচ আজ থেকে ঠিক বিরাশি বছর আগে এই জুলাই মাসের শেষ দিনেই ইংল্যান্ডে তাঁকে ফাঁসি কাঠে ঝুলিয়ে ছিল ইংরেজরা। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রায় ২১ বছর পর ১৯৪০ সালের ১৩ই মার্চ লন্ডনের ক্যাক্সটন হলে ইস্ট ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড দ্য সেন্ট্রাল এশিয়ান সোসাইটির আলোচনা সভায় জেনারেল ও ডায়ারকে রিভালভার থেকে গুলি করে খতম করেন তিনি। পৃথিবীর ইতিহাসে যা আজও সবচেয়ে পুরোন প্রতিশোধের ঘটনা বলে অভিহিত করেন ইতিহাসবিদরা। উধম সিংয়ের জন্ম ১৮৯৯ সালের ২৬শে ডিসেম্বর। বাবা তেহাল সিং । মায়ের নাম নারায়েন কাউর ।  তিন বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি । বাবা তেহাল সিং  মাটি কাটার কাজ করতেন ।  দু বছরের বড় দাদা সাধু সিংয়ের সঙ্গে বাধ্য হয়েই উধম সিং ও যেতেন বাবার সঙ্গে মাটি কাটার কাজ করতে  কয়েক বছরের মধ্যেই বাবা ও দাদার মৃত্যু হলে কাকা বাধ্য হযে ছোট্ট উধমকে খালসা অনাথ আশ্রমে পাঠিয়ে দেন ।সেখান থেকেই ১৯১৮ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন । কিছুদিন বাগদাদ ও বসরাতে ছুতোর মিস্ত্রির কাজ করার পর    ১৯১৯ সালে ফের ফিরে আসেন দেশে ।

 কিন্তু সেবছরেরই কুখ্যাত জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড তাঁর জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দেয়।  ১৯১৯ সালের ১০ই এপ্রিল কুখ্যাত রাওলাট আইনে বন্দী হন কংগ্রেস নেতা সত্যপাল ও সৈফুদ্দিন কিচলু । কুখ্যাত রাওলাট আইনের প্রতিবাদে ও গ্রেফতার হওয়া নেতাদের মুক্তির দাবিতে  ১৯শে এপ্রিল বিশাল মিছিল করে কয়েক হাজার মানুষ জমায়েত হন অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগে । ভারতীয়দের শিক্ষা দেবের জন্য নিরস্ত্র সেই জমায়েতের উপর গোর্খা সেনা নিয়ে চড়াও হন জেনারেল ডায়ার। তারই নির্দেশে ব্রিটিশ পুলিশ একটানা   ১ হাজার ৬০০ রাউন্ড গুলি চালায় ।

ঘটনাস্থলেই শহীদ হন ৩৮০ জন। আহত কয়েক হাজার। অনেক ইচিহাসবিদের মতে নিহতের সংখ্যা এর কয়েকগুন। কারণ বৃটিশ প্রশাসন এরপর খবর চাপতে সংবাদ মাধ্যমের উপর সেন্সরশিপ চাপায়। নিহত অনেকের দেহ ফেলে দেওয়া হয় জালিয়ালওয়ালাবাগের ভিতরের একটি কুয়োয়। ঘটনার পর প্রতিবাদে নাইটউড ত্যাগ করেন রনীন্দ্রনাথ। সেদিনই উধম সিং প্রতিজ্ঞা করেন প্রতিশোধ নেবার।

এরপর ১৯২৪ সালে ভগৎ সিং এর অনুপ্রেরনায় গদর পার্টিতে যোগ দেন উধম সিং।  ভগত্ সিংয়ের ফাঁসির পর  ১৯৩৪ সালে লন্ডন পৌছন তিনি। বৃটিশদের অধিনে চাকরি নেন তিনি।  আর গোপনে পরিকল্পনা করতে থাকেন জেনারেল ডায়ারকে হত্যার । ১৯৪০ সালের ১৩ই মার্চ লন্ডনের ক্যাক্সটন হলে  ইস্ট ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড দ্য সেন্ট্রাল এশিয়ান সোসাইটির আলোচনা সভায় এসে গেল সেই সুযোগ। বইয়ের পাতা কেটে তার ভিতর রিভালবার লুকিয়ে সভায় ঢোকেন উধম সিং ।  বক্তৃতা দেওয়ার উদ্দেশ্যে মঞ্চের দিকে ডায়ার আসতেই  পর পর  দুবার গুলি। ঘটনাস্থলেই ভবলীলা সাঙ্গ হয় কুখ্যাত ডায়ারের। গ্রেপ্তারের পর উধম সিং বলেছিলেন ডায়ারকে আমি অনেক আগেই মারতে পারতাম কিন্তু ভগৎ সিং এর মতো সেন্ট্রাল এসেম্বলীতে  বোমা ছোঁড়ার ও প্রচার পত্র বিলি করে সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণের মত আমিও এরকম একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম । ১৯৪০ সালের ৩১শে জুলাই পেন্টন ভিলের কারাগারে এই মহান বিপ্লবীর ফাঁসি হয় । ফাঁসির আগেও রাজবন্দির মর্জাদা আদায়ের জন্য জেলে ৪২ দিন অনশন করেছিলেন । দেশ স্বাধীন হবার পর জালিয়ানওয়ালাবাগের সামনে তার  মূর্তি বসেছে বটে, কিন্তু তাঁকে কি আমরা আদৌ মনে রেখেছি । 

Post a Comment

0 Comments