নিজস্ব প্রতিবেদক, বোলপুর, ১১ সেপ্টেম্বর ঃ ফের মুক্তিপণের দাবিতে খুন করা হল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রকে। এবার ঘটনাস্থল বীরভূমের ইলামবাজার জঙ্গলে। খুনিকে গ্রামবাসীরা ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ছাত্রের নাম সৈয়দ সালাউদ্দিন শেখ (২১)। বাড়ি বীরভূমের খয়রাশোল থানার আমোদপুর গ্রামে হলেও দু মাস আগে তার পরিবার মল্লারপুরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত। সে আসানসোলের একটি মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাত্রি ১২ টা নাগাদ সালাউদ্দিনের মোবাইল থেকে তার বাবাকে ফোন করে সালমান শেখ নামে এক দুষ্কৃতী। পেশায় ইঁটভাটার ব্যবসায়ী সালমান, সালাউদ্দিনের বাল্য বন্ধু। সে সালাউদ্দিনের বাবা সৈয়দ আব্দুল মতিনকে ছেলের মুক্তিপণের জন্য ফোনে ৩০ লক্ষ টাকা দাবি করে। আব্দুল মতিন বলেন, “আমাকে ছেলের ফোন থেকে দুষ্কৃতী তুই তুই করে বলে কে তুই। তোর আশেপাশে কে আছে? এরপরেই বলে তোর ছেলেকে কিডন্যাপ করেছি। মুক্তিপণের জন্য রাত ২ টোর মধ্যে ৩০ লক্ষ টাকা নিয়ে আয় বোলপুরে। পুলিশকে জানালে তোর ছেলেকে খুন করে দেব”। রাতেই আব্দুল মতিন মল্লারপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপরেই পুলিশ মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন করে ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর আগেই সালাউদ্দিনকে খুন করে সালমান। ভোর হতেই ইলামবাজার থানার চৌপাহারি জঙ্গলের ধল্লা গ্রামের রাস্তার ডান দিকে সালাউদ্দিনের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার গলার নলি কেটে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। এদিকে বন্ধুকে খুন করে সালমান ধল্লা গ্রামে একটি দুর্গা মন্দিরে গিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে বন্ধুকে ফোন করে। সে সময় গ্রামবাসীরা তার চিৎকার শুনে তাকে ধরে ফেলে। ভোরের দিকে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে সালমানের বাজারে প্রচুর দেনা হয়ে গিয়েছিল। সেই টাকা তুলতেই বন্ধুকে মুক্তিপণের ছক কষেছিল। কিন্তু পেশাদার না হওয়ায় নিজেই দিকভ্রষ্ট হয়ে গ্রামে ঢুকে নিজের হাত কেটে খুনের নজর ঘোরানোর চেষ্টা করেছিল।
জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্র নাথ ত্রিপাঠি বলেন, “ধৃত সালমান খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। সে জানিয়েছে সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় মদ্যপান করেছে দুজনে। রাতে জঙ্গলে গিয়ে সালাউদ্দিন যখন অচেতন হয়ে পড়ে সে সময় ভয় পেয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলার নলি কেটে নিজের হাত কাটে সালমান। ওরা দীর্ঘদিনের বন্ধু ছিল। এর আগেও দুই লক্ষ টাকা ধার চেয়েছিল বন্ধুর কাছে। তবে এর সঙ্গে আরও কেউ যুক্ত আছে কিনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে”।
0 Comments