ব্রেকিং নিউজ

6/recent/ticker-posts

টেরাকোটা স্থাপত্য রক্ষনাবেক্ষনের নামে কৃত্রিম রূপদানে কলুষিত হচ্ছে পরিবেশ

 বাঁকুড়া বিষ্ণুপুরের নামকরণ ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস


বিশেষ প্রতিবেদন :

বিশ্বরূপ দে :   বাঁকুড়া জেলার মহকুমা শহর বিষ্ণুপুর একসময় "বন বিষ্ণুপুর" নামে খ্যাত ছিল । যা প্রাচীন মল্লভূম রাজ্যের রাজধানী ছিল । অতীতের সেই মল্লভূম রাজ্য বর্তমানের বাঁকুড়া, বর্ধমান, মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ এবং বিহারের ছোটনাগপুর অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল । খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ পর্যন্ত যারা এই সমগ্র অঞ্চল জুড়ে রাজত্ব করেছেন, তারা "মল্লরাজ" নামে ইতিহাস খ্যাত । 

  প্রসঙ্গত উল্লেখ, "মল্ল" শব্দের অর্থ হলো "কুস্তি", আর "মল্লরাজ" শব্দের অর্থ কুস্তি বা বাহু যুদ্ধে নিপুন ব্যক্তি । মল্লরাজারা ভগবান শ্রী বিষ্ণুর উপাসক ছিলেন বলেই সেই নাম অনুসারে মল্লরাজদের রাজধানীর নামকরণ হয় বিষ্ণুপুর । 

  এখানকার প্রতিটা স্থাপত্যই অপূর্ব ভাস্কর্য । বিষ্ণুপুরের এই ভাস্কর্য "টেরাকোটা" শিল্প হিসেবে পৃথিবী বিখ্যাত । বিশ্বের প্রতিটা দেশের মানুষ সেই প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী "টেরাকোটা" শিল্প দেখতে সারা বছরই ভিড় করেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে । "টেরা" হলো ল্যাটিন শব্দ বা ইতালীয় ভাষা, যার অর্থ "মাটি", আর "কোটা" শব্দের অর্থ হলো "শুষ্ক আস্তরণ"। তাই "টেরা কোটা" শিল্পকে বলা হয় "Baked Clay Work" বা "পোড়ামাটির কাজ"। 

  বিষ্ণুপুরের "টেরাকোটা" শিল্পের আকর্ষণীয় স্থাপত্যগুলি হলো মৃণ্ময়ী মন্দির, রাসমঞ্চ, শ্যামরায় মন্দির, জোড়বাংলা মন্দির, কালাচাঁদ মন্দির, রাধলাল জিউ মন্দির, মদনমোহন মন্দির, পাথর দরজা, জোড় মন্দির, রাধাগোবিন্দ মন্দির এবং রাধামাধব মন্দির । প্রতিটা স্থাপত্যই ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৩৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নির্মিত হয় । 

  যুগ যুগ ধরে অপরূপ টেরাকোটা শিল্পের ঐতিহ্য বহনকারী বিষ্ণুপুরের প্রতিটা মন্দির ও সৌধ প্রমান করে যে ভারতবর্ষ শিল্পের দেশ, শিল্পীর দেশ এবং সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির দেশ । একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিটা স্থাপত্যই আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । স্থাপত্যের সেই ক্ষত মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ হস্তক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে । তবে এক্ষেত্রে বেশ কিছু স্থাপত্য রক্ষনাবেক্ষনের নামে যেভাবে কৃত্রিম রূপদান করা হয়েছে তাতে বিকৃত হয়েছে আদিম শিল্প-সৌন্দর্য এবং নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, এমনটাই মত ট্যুরিস্টদের একাংশের ।

Post a Comment

0 Comments