ব্রেকিং নিউজ

6/recent/ticker-posts

বড় প্রতারণা চক্রের সন্ধান মিললো সেক্টর ফাইভে

 

পোর্ট ডিভিশনের সাইবার শাখার তৎপরতায় গ্রেফতার সাত


বিশেষ প্রতিবেদন :

বিশ্বরূপ দে : বাড়ির ছাদে মোবাইল টাওয়ার বসানোর বিনিময়ে প্রচুর টাকা রোজগার - এইরকম ফোন কলের মাধ্যমেই মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে, শেষমেষ কলকাতা পুলিশের পোর্ট ডিভিশনের সাইবার শাখার তৎপরতায় সল্টলেক সেক্টর ফাইভের ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানা এলাকা এবং নিউটাউন থানা এলাকার কৃষ্ণপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় প্রতারণা চক্রের মোট সাতজনকে । 

  ধৃতরা হলেন মানসজ্যোতি গগৈ, সাদ্দাম হোসেন, অভয় তিওয়ারি, অর্ঘ্য বৈষ্ণব, মহঃ জফরুদ্দিন, বিশ্বজিৎ বরা এবং রনি পাল । 

  ঘটনার সূত্রপাত ২৩শে মে, ২০২২ । একটি নামী বেসরকারি মোবাইল পরিষেবা সংস্থার কর্মী পরিচয় দিয়ে একাধিক ব্যক্তির ফোন আসতে থাকে ৫২ বছর বয়সী শেখ নূর আলমের কাছে, সকলেরই বক্তব্য, তাঁর বাড়ির ছাদে মোবাইল টাওয়ার বসাতে সাহায্য করবে তারা, বদলে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে ২০.৫০ লক্ষ টাকা । প্রতারকদের পাতা ফাঁদে ভুলবশত পা দিয়ে ফেলেন নূর আলম । কিন্তু, না মোবাইল টাওয়ার বসানো হয়, না তাঁর টাকা ফেরত পান নূর আলম । 

  এরপর তিনি ও তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশে অভিযোগ করা হয় ।

  তদন্তে নামেন পোর্ট ডিভিশনের সাইবার শাখার বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তদন্তকারী দল । তাদের উন্নত প্রযুক্তি সহায়তায় জানা যায়, ওই চক্রের অবস্থান সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ অঞ্চলে । আরও তথ্য অনুসন্ধান করতে সূত্র মারফত খবর যোগাড় করতে শুরু করে পুলিশ । সেই খবরের ভিত্তিতেই নিউ টাউন থানার অন্তর্গত কৃষ্ণপুর এলাকার একটি ভাড়াবাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় এই চক্রের সাথে যুক্ত মানসজ্যোতি গগৈ (২২) ও সাদ্দাম হোসেন (২৫) নামে দুই ব্যক্তিকে ।

  জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন এই দুজনের কাছ থেকে জানা যায়, সেক্টর ফাইভে ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানা এলাকার একটি বহুতলের ন’তলায় তাদের অফিস । 

  সোমবার ওই অফিসে হানা দিয়ে দেখা যায়, "পিএম ওয়ানি ওয়াইফাই সার্ভিস" নাম দিয়ে চলছে ভুয়ো কল সেন্টার, যেখান থেকে মোবাইল টাওয়ার বসানোর প্রস্তাব দিয়ে বিভিন্ন মানুষকে ফোন করা হতো । অফিসের মালিক অভয় তিওয়ারি (৩৮) এই ধরনের কল সেন্টার চালানোর কোনও বৈধ অনুমতিপত্র দেখাতে পারেনি পুলিশকে । ফলে গ্রেফতার করা হয় তাকে । 

  অফিসের যে ঘরে বসে এসব করা হতো, অর্থাৎ ‘ওয়ার্ক স্টেশন’, সেখানে টেবিলে বসা অর্ঘ্য বৈষ্ণব (৩৩)-এর কাছ থেকে পাওয়া যায় একটি ফোন, এবং তাকেও গ্রেফতার করা হয় । ওই ফোনের মধ্যে যে সিম কার্ডটি ছিল, সেটি থেকেই নূর আলমকে ফোন করা হয় । এছাড়াও নিউটাউন থেকে ধৃত গগৈ-এর টেবিল থেকে পাওয়া যায় সম্ভাব্য ‘শিকারের’ তালিকাবিশিষ্ট একটি নোটবই, যাতে রয়েছে নূর আলম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ফোন নম্বর । এরপর গ্রেফতার করা হয় মহঃ জফরুদ্দিন (৩১), বিশ্বজিৎ বরা (২৯), এবং রনি পাল (২৮) নামে ওই ভুয়ো কল সেন্টারের আরো তিনজনকে । 

  অফিস থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে মোট ১০৪টি ডায়ালার সেট, ৭৫টি ছোট বোতাম মোবাইল, ১০টি স্মার্টফোন, ৩৩টি সিম কার্ড, ১২টি এটিএম কার্ড, দুটি ল্যাপটপ, এবং নগদ ১৩ হাজার টাকা । বিভিন্ন সাক্ষীর উপস্থিতিতে ‘সিল’ করে দেওয়া হয় অফিস । ধৃতরা সকলেই আপাতত পুলিশের হেফাজতে ।

  সমগ্র ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন পোর্ট ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার জাফর আজমল কিদওয়াই । এছাড়া তদন্তকারী দলে ছিলেন ইকবালপুর থানার সাব ইন্সপেক্টর সিরিং তামাং এবং পোর্ট ডিভিশনের সাইবার শাখার সাব ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ খান ও সার্জেন্ট মানজিৎ গোয়েল ।

Post a Comment

0 Comments