ব্রেকিং নিউজ

6/recent/ticker-posts

সমস্ত বিদ্যালয়ে বাংলা আবশ্যিক করার দাবিতে সর্বদলীয় ভাষা কনভেনশন

 

 নিজস্ব সংবাদ দাতা ,৩রা সেপ্টেম্বর, কলকাতার সেন্ট্রাল এভিনিউর হেমন্ত বসু ভবনের , নলিনী গুহ সভাঘরে , সর্বভারতীয় বাংলা ভাষা মঞ্চের আহবানে আয়োজি হল  ভাষা কনভেনশন।  লিখিত মূল প্রস্তাব পেশকরেন সাধারণ সম্পাদক নীতীশ  বিশ্বাস।যেখানে দাবি করা হয়, ভারতের অন্য রাজ্যের মতো  এই রাজ্যের সব বিদ্যালয়ে একটি বিষয় হিসেবে বাধ্যতা মূলক ভাবে বাংলা পড়তে হবে।  সভার সভাপতিত্ব  করেন মঞ্চের সর্বভারতীয় সভাপতি ডা. দিলীপকুমার সিনহা। প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদেন  মানভূম ভাষা আন্দোলনের প্রবীণ  সৈনিক কাজল সেন।   

শনিবার কনভেনশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন , সরকার কি করবে তা বলা কঠিন কিন্তু আসুন আমরা নিজেদের জীবন থকে শুরু করি, ব্যাঙ্কের সাইন থেকে যেখানে সম্ভব আমরা যেনো বাংলায় স্বাক্ষর করি। আমি কলকাতার মেয়র থাকা কালে আইন করেছিলাম সাইন বোর্ডে বাংলা না থাকলে লাইসেন্স রিনিউ করা যাবেনা।তিনি বলেন আপনাদের ভাষা আন্দোলনের বিজ্ঞান বাদী দৃষ্টি ভঙ্গির প্রতি আমার সমর্থন আছে। 

প্রবীণ কংগ্রেস নেতা অধ্যাপক প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, আমি বহুবার পার্লামেন্টে  বাংলার জন্য কথা বলেছি। তখন আজকের ভয়ংকর হিন্দি আগ্রাসন ছিলোনা। আর পশ্চিম বঙ্গের কথা কি বলবো, এখানকার মুখ্য মন্ত্রীর ঘোষণার কি কোনো দাম আছে ? আপনারা আন্দোলন করুন আমি সাথে থাকব। 

সমাজ বিজ্ঞানী  অধ্যাপক শোভন লাল দত্তগুপ্ত , বলেন, এখন উচ্চশিক্ষায়ও প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা আসছেন, তারা ক্লাশ লেকচারে বাংলা চাইছেন। আমি এবিষয়ে খুব হতাশ নই কিন্তু ঐ ছাত্র যখন গবেষণার জন্য আরও ভালো ভালো ইংরেজি বই পাবেন , তখন কিন্তু বাংলা বই সে স্তরে  না উন্নীত হলে হতাশ হবেন। আমদের তাই উপযুক্ত বাংলা গ্রন্থ প্রস্তুত করতে হবে। তার ভিত্তি হোক এই আন্দোলন। আমি এই আন্দোলনের সাফল্যের জন্য সততই আপনাদের সঙ্গে আছি।

আর এস পি-র সেন্ট্রাল কমিটির সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য  বলেন, আমি অনেক দিন পার্লামেন্টে ছিলাম, তারা হিন্দির জন্যে কোটি কোটি টাকা নিয়ে নিচ্ছে। আর বাংলা ভাষার ক্ষত্রে প্রায় শূন্য । আসলে এর জন্য আমাদের উদার মনোভাব সেদিন হয় তো ঠিক ছিলোনা। আর আজও হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্থান পন্থীদের ভয়াণক গর্জিণ। তবে আমরা বাংলা ভাষার সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় কিভাবে কি করতে পারি তা দেখবো। আপনাদের দাবিকে পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি। 

 সিপি আই  নেতা মিহির বাইন বলেন , আমি জানি এই বাংলা ভাষা মঞ্চ-এর পেছনে নীতীশ বাবু ও আমার শ্রদ্ধেয় বন্ধু ত্রিপুরার অনিল সরকারের অবদান অনেক। আমিও তার সেই শ্লোগান, নিজের ভাষাকে ভালো বাসো আর অন্যের ভাষাকে সম্মান করো , আজও ভুলতে পারিনা। বাংলা বভহাষা সেই পথেই চলছে।আমি তাদের সঙ্গে আন্তরিক ভাবেই আছি। 

আর পি আই - এর  রাজ্য কমিটির সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় মল্লিক বলেন, আমি নীতীশ দার মতোই দাবি করি সব দল তাদের আগামী নির্বাচনী ইস্তেহারে বাংলা ভাষার অধিকারের এদাবি যুক্ত করুন। আমদের মুখ্য মন্ত্রী ও রাজ্য পালকে অতি সত্তর এই দাবি জানাতে যাব ।অন্যদেরও বলব সে পথে এগুতে। 

আলীয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম এই আন্দোলনের একজন তাত্ত্বিক নেতা তিনি  বাংলা ভাষা মঞ্চের ভাষা গণতন্ত্রের  ডাক কে  একঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বলে এই কনভেণ শানের প্রতিটি কথাকে  সমর্থন করেন। এছাড়াও অনেক অধ্যাপক কবি শিল্পী  তাদের বক্তক্যে এই দাবির প্রতি তাদের সমর্থন ঘোষণা করেন। সভায় যোগ দেন  ও ভাষা পদযাত্রায় অংশ নেন  ।  উল্লেখ্য  বক্তাদের মধ্যে ছিলেন,  ড. সমীর শীল, অধ্যাপক বঙ্কিম মন্ডল,(রবীন্দ্র ভারতী) অধ্যাপক উত্তম বিশ্বাস,(প্রেসিডেন্সী বিশ্ব),, ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব, ড. বিরাট বৈরাগ্য , ড. বীরুপাক্ষ  বৈদ্য, কবি দীপদুলাল বিশ্বাস, সমর প্রামাণিক, ড. সনতকুমার  বিশ্বাস, প্রমূখ  ।  সঙ্গীত পরিবেশন করেন মুকুল চক্রবর্তী, শ্যামল বিশ্বাস, চিন্ময়ী বিশ্বাস ও  অরুণ ভট্টাচার্য।            

এ ছাড়া সংগঠনের সম্মাননীয়  নেতৃত্ব হিসেবে  এদিনের এই সভায়  সম্মর্ধিত হন কবি সৈয়দ  কওসর জামাল  পুরুলিয়ার চন্দ্রশেখর সরকার,পব কলেজ গ্রন্থাগের সমিতির রাজ্য সম্পাদক ড.সনতকুমার বিশ্বাস, , মঞ্চের কলেজ শাখার পক্ষে  ড. দয়ালচাঁদ সরদার, হুগলীর গৌরী হালদার, ছোট পত্রিকার সম্পাদক অমল কর,  ভাষা সমীক্ষক ড. তন্ময় বীর, রোকেয়া মঞ্চের প্রাণতোষ ব্যানার্জি, বেলালা পশ্চিমের নেতা অরুওণ ভট্টাচার্য,  সত্যেন মৈত্র জনশিক্ষা সমিতির নেতা দিলীপ ভট্টাচার্য,  দক্ষিণ ২৪পরগণার পংকজ তাঁতী, পলতার জয়গোপাল বিশ্বাস ,বারাসাতের  রণজিত দত্ত,ডা. দুলাল কৃষ্ণদাস, সুন্দর বনের বিনোদ সরদার ,হাওড়ার কবি বাসুদেব দাস প্রমূখ। সম্মর্ধণা প্রদান করেন মঞ্চের পক্ষে অধ্যাপিকা যূথিকা পাণ্ডে , কবি দিলীপ পাল, কবি তপন দাস, সাহিত্যিক অমিতাভ চক্রবর্তী প্রমূখ। সভার সম্মাননীয় উপস্থিতি প্রবীণ ভাষা সংগঠক  সুবোধ বিশ্বাস, সমীর কয়াল, অমর ঘোষাল, ভাষা কর্মী সুব্রত ব্যানার্জি,ও জয়ন্ত বিশ্বাস,  ঐকতান উপদেশক সমীর বরণ দাস,, ড.নিত্যানন্দ  মণ্ডল, ,  সমাজ সেবী অশোক দাস, কবি তাপসী আচার্য, চিত্র পরিচালক পল্লব রায় ও  বিশিষ্ট আলোক চিত্র শিল্পী সুজিত সরকার, ।

 সভার মূল প্রস্তাব উত্থাপন করেন  সর্ব ভারতীয় বাংলা ভাষা মঞ্চের সাধারণসম্পাদক ,ভাষা গবেষক  নীতীশ বিশ্বাস । তিনি বলেন আমাদের রাজনৈতিক দলগুলির প্রায় কারোই সময়োপযোগী ভাষানীতি  নেই। যে ভারতে বাংলা ভাষার প্রধান কেন্দ্র হল পশ্চিম বঙ্গ। কিন্তু কেরল থেকে কাশ্মীর  সর্বত্র সেই রাজ্যের প্রধান ভাষা  সেখান কার সব মাধ্যমে ও সবধরনের বিদ্যালয়ে আবশ্যিক, কেবল বাংলা ও ত্রিপুরা বাদে। কলকাতা মূল শহরে এখন বাঙালির সংখ্যা ৪৬%। আর এখনই এ রাজ্যের সব মাধ্যমের ও সব ধরণের বিদ্যালয়ে একটি বিষয় হিসেবে আবশ্যিক ভাবে  বাংলাভাষা  পড়ানো শুরু হলে ২/৩ বছরে বাংলায় অন্তত ২০/২৫ হাজার বাংলা শিক্ষক নিযুক্ত হবে ,। আর বাড়বে বাঙালি –অবাঙালি সম্প্রীতি ও সাম্প্রদায়িক সং হতি। এই জন্য প্রায় সব দলই  এই দাবির প্রতি নরম মনোভাবা পন্ন। তিনি জানান *২০১৭ সালে একবার মুখ্য মন্ত্রী মহোদয়া  যে ঘোষণা করেছিলেন এই রাজ্যের সব বিদ্যালয়ে একটি বিষয় হিসেবে বাধ্যতা মূলক ভাবে বাংলা পড়তে হবেআমরা চাই সে আদেশ নামা অবিলম্বে প্রকাশিত হোক ও আগামী শিক্ষা বর্ষথেই তা প্রযুক্ত হোক।  

Post a Comment

0 Comments