নিজস্ব প্রতিবেদক : শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ED) যেভাবে প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী এবং প্রাক্তন তৃণমূল দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে একের পর এক যেভাবে টাকা উদ্ধার হয়েছে তাতে রীতিমতো হতচকিত হয়ে গেছেন বাংলার মানুষ। স্বভাবতই মানুষের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে এত টাকা কোথা থেকে এলো? কোটি কোটি টাকা শুধুমাত্র ঘুষের টাকা? তাহলে এই ঘুষের টাকা শুধুমাত্র পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের? এরকম একের পর এক প্রশ্ন সামাজিক মাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে।
কেউ কেউ অতি সক্রিয় হয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় চোর অনুব্রত মণ্ডল চোর এরকম শ্লোগান দিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু সমস্যাটা তৈরি হয়েছে অন্য জায়গায়। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বলছেন টাকা আমার নয়। অর্পিতা মুখোপাধ্যায় বলছেন টাকা আমার নয়। তাহলে এই পঞ্চাশ কোটি বা স্বর্ণালংকার বা কোটি কোটি টাকার মালিক কে?
বিরোধী রাজনৈতিক দল অবশ্য এই টাকা কার এই প্রসঙ্গ তুলোধোনা করছে তৃণমূলকে এবং তৃণমূল নেত্রীকে। বিশেষ করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আক্রমণে নেমেছেন তৃণমূল সুপ্রিমোকে লক্ষ্য করে। তিনি বিভিন্ন সময় তীব্র আক্রমণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু এখানেই তৈরি হয়েছে প্রশ্ন? যদি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই বিপুল সম্পত্তি না হয় তাহলে তিনি কেন বলছেন না এই সম্পত্তি কার!
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত করছে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ইডি বা সিবিআই এই দুই তদন্তকারী সংস্থা পরিষ্কার করতে পারেননি এত টাকার উৎস কি? এবং এর মালিকানা কার? স্বভাবত বাংলার উৎসুক মানুষের প্রশ্ন কত দিনে জানতে পারবে এই টাকার মালিকানা কোন ব্যক্তির বা কোন সংগঠনের।
কারণ রাজ্য সরকার বারবার বলছেন সরকারের ভাড়ার শূন্য। সরকারি কর্মচারীদের DA দেওয়ার মত ভাড়ারে পয়সা নেই। অথচ প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে কোটি কোটি টাকার হদিশ। বজবজের ব্যবসায়ীর বাড়িতে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার ইডির। তাহলে কি কিছু মানুষের হাতে টাকা কুক্ষিগত হয়েছে? এ প্রশ্ন সামাজিক মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
বিগত দুই বছর করোনা মহামারীর কারণে সমস্ত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর্থিক সংকটে অনেক বেসরকারি কোম্পানি। সেখানে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে এত কোটি কোটি টাকা উদ্ধার এবং অনলাইন জুয়ারির বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার ঘিরে বাংলার মানুষ কিছুটা হলেও বিতশ্রদ্ধ। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, তাহলে কি চাকরির নামে প্রতারণা ঘুষ নিয়ে এত টাকা জমানো হয়েছিল? অন্যদিকে অনলাইন প্রতারণার ফাঁদে ফেলে এত টাকার মালিক হয়েছিলেন বজ বজের ব্যবসায়ী? নাকি এর সঙ্গে বৃহৎ ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে আছে অন্য কেউ? এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো তদন্তকারী সংস্থা দিতে পারবে। কিন্তু তদন্তে কিছুটা হলেও বিলম্ব হওয়ায় মানুষ বিভিন্ন রকম মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে করছেন। সামাজিক মাধ্যমে মানুষের বক্তব্য একটা বিষয় পরিষ্কার, যদি পঞ্চাশ কোটি টাকা ঘুষের টাকায় হয়ে থাকে, সেই ঘুষের টাকার মালিকানা জারই হোক না কেন, কিন্তু যারা ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছেন তাদের অবিলম্বে চাকরি যাওয়া যাবে না কেন? কারণ অনৈতিকভাবে চাকরি পেয়ে শিক্ষকতা করলে সে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষা দেবে। সে নিয়ে ভাবতে বসেছে বাংলার আগামী প্রজন্মের অভিভাবকেরা।
একদিকে সামাজিক মাধ্যমে যখন টাকা কার? চোর চোর বলে স্লোগান, অন্যদিকে ধর্মতলায় দিনের পর দিন অবস্থানে বসে আছেন চাকরি প্রার্থীরা।তাই বাংলার শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের প্রশ্ন? যদি অযোগ্য প্রার্থীরা ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়ে থাকেন,তাহলে যোগ্য প্রার্থীরা কেন দিনের পর দিন অবস্থান করেও চাকরি পাবেন না ?
0 Comments