পায়ের ক্ষতস্থানে ভয়ংকর সংক্রমন নিয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুনছে
বিশেষ প্রতিবেদন:
বিশ্বরূপ দে
জীবন যন্ত্রণা থেকে মুক্তির প্রতীক্ষায় দিন গুনছে জলপাইগুড়ির নাগরাকাটা ব্লক অন্তর্ভুক্ত খেরকাটা জঙ্গলের অসুস্থ হাতি ।
সম্প্রতি হাতিটি একপ্রকার খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, দাঁড়িয়ে থাকছে নদী সংলগ্ন জঙ্গলে, চোখ দিয়ে অনবরত জল ঝরছে । জঙ্গল সংলগ্ন গ্রামাঞ্চলের লোকজনকে দেখলেই শুঁড় উঁচিয়ে চিৎকার করে ডাকছে এবং তার ক্ষতস্থান দেখাচ্ছে, তা দেখে স্থানীয়দের হতাশা প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই করার উপায় থাকছে না । এইভাবেই প্রায় একমাস যাবৎ ক্ষতস্থানের যন্ত্রণা নিয়ে মৃত্যুর সাথে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে খেরকাটা জঙ্গলের হাতিটি ।
ডিসেম্বরের ৫ তারিখ হাতিটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি করে চিকিৎসা করা হয়েছিল, তার পর থেকে বনকর্মীরা ওষুধও খাওয়াচ্ছিলেন বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গিয়েছে ।
তবে বিগত ১৬ দিনে বনদপ্তরের চিকিৎসক বা অন্যান্য কর্মীরাও হাতিটিকে একটি বারের জন্যও দেখতে আসেনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা । তাদের মতে অবিলম্বে চিকিৎসা শুরু করলে হাতিটির যন্ত্রণা কিছুটা লাঘব করা যেত ।
হাতিটি প্রথমে নাগরাকাটা ব্লকের খেরকাটা জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকলেও বিগত এক সপ্তাহ ধরে সেটি ধূপমাড়ার নিউ দিঘা এলাকার ডায়না নদীর উলটো দিকে দাঁড়িয়ে রয়েছে ।
হাতিটির পেছনের ডান পা ভয়ানক রকমের ফুলে রয়েছে এবং সংক্রমণের কারণে দুর্গন্ধ বেরোতে শুরু করেছে । ফলে একেবারেই চলাফেরা করতে পারছে না সে । গত কয়েকদিন গ্রাম বাসীরা কলাগাছ, ধান ও কিছু সবজি হাতিটিকে খেতে দিচ্ছিল, সেই খাবারই খাচ্ছিল হাতিটি । তবে রবিবার থেকে খাওয়া দাওয়া এক প্রকার বন্ধ করে দিয়েছে ।
এই মুহূর্তে নদীর পাশে থাকা টুকরো জঙ্গলের ৩০-৪০ মিটার ভেতরে হাতিটি দাঁড়িয়ে রয়েছে, ফলে জল খাওয়ার জন্যও সে নদীতে আসতে পারছে না । চেহারায় ক্রমশ রুগ্নতার ছাপ ফুটে উঠেছে, চামড়া শুকিয়ে মাথার খুলিও বেরিয়ে এসেছে । এক্ষুনি চিকিৎসা শুরু করা না হলে হাতিটি কয়েক দিনের মধ্যেই মারা যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা । বন বিভাগের ওপর একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে তাদের বক্তব্য,"সাহায্য করার কেউ নেই, কাঠি করার লোক প্রচুর, তাই আমরাও আগ-বাড়িয়ে নিজেরা কিছু করতে পারছি না, আমরা ক্ষমতাবান নই, তাই আমাদের কথাও কেউ শুনছে না । অদ্ভুত এক সমাজে বাস করছি আমরা"।
বনবাসী আলিপুরের (বন্যপ্রাণ রক্ষা, উদ্ধার ও সংরক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থা) তত্বাবধানে স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ করে ঘটনাস্থলে পৌঁছে হাতিটির চিকিৎসা করে প্রাণ বাঁচানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে ঠিকই, তবে শেষ পর্যন্ত তাকে রক্ষা করা যাবে কিনা সেই বিষয়টি অনিশ্চিত । চিকিৎসা করে হাতিটির প্রাণ বাঁচানোর জন্য ইতিমধ্যেই নাগরাকাটার খেরকাটা জঙ্গলের উদ্যেশ্যে রওনা দিয়েছেন বন্যপ্রাণ প্রেমী সংস্থার একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল, যাদের নেতৃত্বে রয়েছেন নীলোৎপল সেন, শুভ দত্ত, গুনময়, মাধাই ও আরো অনেকে ।
0 Comments