ব্রেকিং নিউজ

6/recent/ticker-posts

কাশীপুর উদ্যানবাটিতে কল্পতরু হয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ

১৮৮৬ সালের পয়লা জানুয়ারি কল্পতরু হয়েছিলেন ঠাকুর

বিশেষ প্রতিবেদন:

বিশ্বরূপ দে


         শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের অসুস্থতা যখন বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গেছে তখন ঠিক হল তাঁকে দক্ষিণেশ্বর থেকে শ্যামপুকুরে নিয়ে আসা হবে । 

  শ্যামপুকুর বাটীতে ৭০ দিন থাকার পর দেখা গেল ওষুধে খুব একটা কাজ হচ্ছে না । তখন ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের পরামর্শে ভক্তরা তাঁকে কাশীপুরের বাগানবাড়িতে নিয়ে এলেন । কলকাতা থেকে ৩ মাইল দূরে বরানগরের পথে বেশ নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ পেয়ে ঠাকুর খুব খুশি হলেন । মনোরম এই বাগানবাড়িটি রানি কাত্যায়নীর জামাই গোপাললাল ঘোষের । মাসিক ৮০ টাকায় বাড়িটি ঠাকুরের জন্য ভাড়া নেওয়া হল । ১১ বিঘা ৪ কাঠা ৪ ছটাক আয়তনের এই বাগানবাড়ি চারদিক দেওয়াল দিয়ে ঘেরা । দেওয়ালের উত্তর দিকের মাঝামাঝি ৩টি ছোট ঘর রান্নাঘর ও স্টোর হিসাবে ব্যবহার করা হতো । উল্টোদিকে দোতলা একটা বাড়ি । তার নীচে ৪টে ঘর, উপরে দু’টো । নীচতলার ঘরটি হলঘরের মতো । এরই উত্তর দিকে পাশাপাশি দু’টো ছোট ঘর ছিল । তার মধ্যে পূবের দিকটা ছিল সারদা মায়ের । নীচের হলঘরের ঠিক উপরেই একই মাপের যে ঘরটা ছিল সেটাতেই থাকতেন ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ ।

  সে দিন ছিল পয়লা জানুয়ারি, ১৮৮৬ । সময় বিকেল ৩টে । শরীরটা আজ যেন একটু ভালো । ঠাকুর নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে বাগানের পথ দিয়ে হেঁটে বাগানবাড়ির প্রধান ফটকের দিকে চলেছেন । দেখলেন কাছেই আম গাছের তলায় গল্প করছেন গিরিশ, অতুল, রাম ও আরও অনেকে । কাছে গিয়ে ঠাকুর গিরিশকে বললেন, “হ্যাঁরে, তুই নাকি আমার নামে কী সব বলে বেড়াচ্ছিস ? আমি নাকি ভগবানের অবতার ! তুই আমার মধ্যে কী দেখলি, কী এমন বুঝলি ?” গিরিশ তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললেন,“ তাঁর সম্পর্কে আমি আর কী বলতে পারি ? স্বয়ং ব্যাসদেব আর বাল্মীকিও যাঁকে বর্ণনা করার জন্য ভাষা খুঁজে পাননি।” গিরিশের এই ভক্তি দেখে আপ্লুত শ্রীরামকৃষ্ণ বললেন, “তোদের আধ্যাত্মিক জাগরণ হোক, এই আশীর্বাদ করি।” এই কথা বলেই ঠাকুর সমাধিস্থ হলেন । গিরিশ দেখলেন ঠাকুরকে ঘিরে রয়েছে এক দিব্যজ্যোতি । ‘জয় শ্রীরামকৃষ্ণ’, ‘জয় শ্রীরামকৃষ্ণ’ বলে ঠাকুরের পায়ে পড়ে গিরিশ চিৎকার করতে লাগলেন । ভক্তরা উন্মাদ হয়ে উঠল । কেউ আনন্দে চিৎকার করে উঠল, কেউ বা ঠাকুরের দিকে ফুল ছুড়তে লাগল, কেউ আবার ঠাকুরের পা জড়িয়ে ধরলো । ক্ষণিক পর সমাধি ভাঙল শ্রীরামকৃষ্ণের । ভক্তদের প্রত্যেককে স্পর্শ করে তাঁদের মনোমতো আশীর্বাদ করলেন । এই স্পর্শ ভক্তদের মনের মধ্যে বিপ্লব ঘটিয়ে দিল । কেউ হাসতে লাগল, কেউ বা আনন্দে কাঁদতে লাগল, অনেকে আবার ধ্যানে বসে গেল । 

  পরে ভক্তদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, সেই মুহূর্তটা কেমন মনে হয়েছিল, যখন শ্রীরামকৃষ্ণ তাদের স্পর্শ করেছিলেন । কেউ একটা মিষ্টি মাদকতা অনুভব করেছিলেন, কেউ ধ্যানে যে দেবতাকে দেখতে পান না, তাঁকে দেখেছিলেন, কারও শরীরের মধ্য দিয়ে কেমন একটা অদ্ভুত স্রোত বয়ে গিয়েছিল, কেউ অনির্বচনীয় আনন্দ অনুভব করেছিলেন যা আগে কখনও পাননি, কেউ আবার একটা দীপ্তি দেখেছিলেন ।

  কাশীপুর উদ্যানবাটীতে শ্রীরামকৃষ্ণ সে দিন ‘কল্পতরু’ হয়েছিলেন । সেই দিনটির স্মরণে এখানে প্রতি বছর 'কল্পতরু উৎসব' পালিত হয় ।

  এই কাশীপুর উদ্যানবাটীতেই ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস তাঁর স্থুল শরীর ত্যাগ করেন ।

Post a Comment

0 Comments