নিজস্ব প্রতিনিধি, সমকাল বাংলা : সোমবার বিকেল থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। বিকেলে মুকুল রায় কে দমদম এয়ারপোর্টে দেখা যায়। তারপরেই শুরু হয় বিভিন্ন রকম জল্পনা। সূত্রের খবর, মুকুল রায় দিল্লি পৌঁছেছেন সোমবার রাতেই। সংবাদ মাধ্যমে তিনি একটি বিবৃতি ও দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, আমি প্রয়োজনে দিল্লী এসেছি। দিল্লি কি আমি আসতে পারি না? আমি বর্তমানে এমপি । আগে খুব ঘন ঘন আসতাম এখন সেটা সম্ভবপর হয় না। অনেকদিন পর দিল্লিতে এসেছি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন চিকিৎসার জন্য আসেনি। প্রয়োজনে এসেছি কাজ যতদিন শেষ না হবে ততদিন দিল্লিতে থাকবে।
যদিও মুকুল পুত্র শুভ্রাংশুর দাবি বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি গতকাল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। আমি ভীষণ উদ্বিগ্ন। বাবার চিকিৎসা চলছে। বাবা বলছেন যে তিনি দিল্লির এম এল এ আবার বলছেন দিল্লির এমপি এ থেকে বোঝা যায় তিনি কতটা ভারসাম্যহীন। ঠিকমতো করে হাঁটতেও পারছেন না। কিছু রাজনৈতিক দল আছে তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম অপপ্রচার চালিয়ে থাকেন। রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য। এক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটে নি। তিনি আরো বলেন আমি পুলিশকে জানিয়েছি। ভীষণভাবে সহযোগিতা করছে। এর পরবর্তী পর্যায়ে অপেক্ষা করছি কি পরিস্থিতি দাঁড়ায়। আমি মনে করি বাবাকে ফিরিয়ে এনে কোন হাসপাতালে ভর্তি করা একান্ত প্রয়োজন।
কিন্তু হঠাৎ করে মুকুল রায় এই অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে বিভিন্ন রকম জল্পনা। মুকুল রায় ২০১৭ সালে তৃণমূল ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। তৎকালীন সময় পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির দায়িত্বভার ছিল কৈলাস বিজয় বর্গীয়র কাঁধে। যার কারনে কৈলাস বিজয় বর্গিয়র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল মুকুল রায়ের। সেই সময় মুকুল রায়ের বিজেপি উত্থানের পিছনে অনেকটাই হাত ছিল বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি হয় পশ্চিমবাংলায়। প্রত্যাশিতভাবে বিজেপি যত সংখ্যক আসন পাওয়ার কথা ছিল তা প্রত্যাশাই থেকে গেছে। যার ফলে নির্বাচন উত্তর কালে অনেকটা চাপের মুখে পড়েছিলেন মুকুল রায়রা। কারণ মুকুল রায়ের উপর অনেকটা নির্ভর করেছিল বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তৎকালীন বিজেপি সভাপতি বর্তমানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিভিন্ন সভায় মুকুল রায়ের ভুয়শি প্রশংসা করেছিলেন।
মুকুল রায় বিজেপিতে যোগদানের কিছুদিন পরে মুকুল পুত্র শুভ্রাংশ রায়ের বিজেপিতে যোগ দেয়। এবং 2021 সালের বিজেপির ভরাডুবিতে চাপে পড়ে যান মুকুল পুত্র শুভ্রাংশুও । রাজনৈতিক মহলে তখন একটি গুঞ্জন ছিল মুকুল পুত্র শুভ্রাংশু চাপ সামলাতেই তৃণমূলের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে মুকুল রায়কে কিছুটা হলেও বাধ্য করেন তৃণমূলের ফেরার জন্য। মুকুল রায় ২০২১ এর নির্বাচন পরে আবার তৃণমূলে ফিরে আসেন। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে সেই অবস্থান বা জায়গা তিনি আর ফিরে পাননি। যদিও পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুকুল রায় কে ব্যবহার করা হবে বলে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল।
তৃণমূল এবং বিজেপি উভয় দলেই একসময় স্বীকার করতেন মুকুল রায় ভালো সংগঠক। তিনি দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব সহ দলের নিচু তলার কর্মীদেরও এক নামে চিনতেন। বিভিন্ন সময় নিচু তলার কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করেছেন মুকুল রায়। যার কারনে দলের উঁচু তলা থেকে নিচু তলায় সমস্ত ধরনের কর্মীদের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ ছিল মুকুল রায়ের। মুকুল রায় কে অনেক নেতৃত্ব আবার রাজনৈতিক গুরু বলেও মানতেন। সব মিলিয়ে মুকুল রায় তৃণমূলে যোগদানের পরে বেশ কিছুদিন ঘরের অন্দরমহলে অবস্থান করছিলেন।
পরে তিনি যখন প্রকাশ্যে বেরন সেই সময় তিনি বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন যে মন্তব্যের সঙ্গে কোন তাল মিল করাতে পারছিলেন না রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের সময় উত্তর দিয়েছিলেন তৃণমূল বিজেপি সব এক। এ নিয়ে তখন রাজনৈতিকভাবে বেশ জল্পনার সৃষ্টি হয়েছিল। প্রশ্ন উত্তর শুরু করেছিল মুকুল রায়ের স্মৃতিভ্রম হয়েছে না মুকুল রায় ইচ্ছাকৃতভাবে এ ধরনের মন্তব্য করছেন।
কিন্তু হঠাৎ করে মুকুল রায় কেন অন্তর্ধান হলেন সে নিয়ে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শেষ নেই। এরকমও গুঞ্জন রয়েছে মুকুল রায়ের সঙ্গে যেহেতু কৈলাস বিজয় বর্গীয় সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল সে কারণে তিনি কৈলাস বিজয় বর্গীয় সঙ্গে বৈঠক করতে গেছেন দিল্লিতে। কারণ একটা সময় অমিত শাহের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক ছিল মুকুল রায়ের। তবে কি মুকুল রায় আবার বিজেপিতে ফিরতে চাইছেন?