সম্পাদক সমীপেষু
আন্তর্জাতিক গৃহশ্রমিক দিবস
১৬ই জুন আন্তর্জাতিক গৃহশ্রমিক দিবস পালিত হলো । খবর হলেও খবরের কাগজের পাতায় তাদের স্থান মেলে না । তাদের দুঃখের কথা কে শোনে ? তাদের সংগঠন ILO ( International Labour Organization ) এর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে অসংগঠিত শ্রমিকদের মতো তাদের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হোক । তাদের বক্তব্য তারা বাবুদের বাড়িতে ঝি এর কাজ করে । তারা ঘর ,বার্থরুম পরিস্কার থেকে শুরু করে বাবুদের এঁটোকাঁটা বাসন মাজে ,জামা কাপড় কাচে । তারা চা ,টিফিন থেকে শুরু করে বাবুদের রান্নার খাবার তৈরি করে । কিন্তু তারা বাবুদের বার্থরুম ব্যবহার করতে পারে না ,বাবুদের নাকি ঘৃণা হয় । তাই সকাল থেকে তারা না খেয়ে থাকে ,জলও খায় না । তাদের মানবাধিকার রক্ষার লড়াইয়ের একমাত্র সঙ্গী তাদের চোখের জল । ভোরবেলায় তারা সবজির ট্রেন ( যার নাম হয়েছে ঝি স্পেশাল ) ধরে শহরে পা রাখে । তারপর তারা বাবুদের বাড়িতে কাজে লেগে যায় । অনেকের বাড়িতে ছোট ছোট ছেলে মেয়ে আবার অনেকের বাড়িতে অসুস্থ স্বামী আছে । এভাবে দুঃখ দিয়ে দিন শুরুও শেষ হয় ।
বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টের আদেশে পতিতারা এখন শ্রমিক হিসেবে গন্য হয় । অসংগঠিত শ্রমিকদের নিয়ে সরকারের অনেক ভাবনা চিন্তা আছে কিন্তু তাদের নিয়ে সরকার কেন উদাসীন তাদেরকে ভাবায় । তারা শ্রম দিলেও তারা শ্রমিক হিসেবে গণ্য হয় না । তাদের যত্ন ,আন্তরিকতা ,ভালোবাসা কেবল পণ্য যা টাকা দিয়ে কেনা যায় ,বাবুরা এমনটাই মনে করেন । তারা শ্রমিকও নয় কেবল পণ্য বলে বাবুরা গণ্য করেন । তাদের দুঃখ ,কষ্ট ,ব্যথা ,যন্ত্রনা ,কান্নার শরিক কেবল তারা নিজরাই । তাই ILO সংগঠন তাদের অধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে এমন জোরদার আন্দোলন করছে ।
সুবল সরদার
মগরাহাট
দক্ষিণ ২৪ গরগণা
-----------_-----------------------:
প্রেমের কবিতা
সুবল সরদার
তুমি লেখ বেঁচে থাকার একটা গান।
প্রেমের কবিতা ।
কোভিড, বেকারত্ব, হতাশা ,
দুঃখ, কষ্ট ,ব্যাথা ,
এবার হোক বিদায় তারা ।
বৃষ্টি,আলো,বাতাস,সবুজ পাতা ,
এ কী বন্ধনে আমি বন্ধন হারা !
মেঘ,বৃষ্টি, আলো,ছায়া,
প্রকৃতির কী অপূর্ব খেলা !
নদীর গান,পাহাড়ের টান,
পাখীর ডানা,প্রজাপতির পাখা।
নীল আকাশ, সবুজ ঘাসের ঘ্রাণ ,
প্রভাতে শিশির ভেজা ফুলের স্নান,
জেগে ওঠে আমার এ প্রাণ ।
তুমি লেখ বেঁচে থাকার একটা গান ।
প্রেমের কবিতা ।
কোভিড, বেকারত্ব,হতাশা,
দুঃখ, কষ্ট, ব্যাথা ,
এবার হোক বিদায় তারা ।
_---------_------_----------------
তোমার দেশে
সুবল সরদার
হেমন্ত সোরেনের ছেলে জীবন হামাগুড়ি দিয়ে ছুটে আসছে টুলের উপরে জলের গ্লাসটা ধরার জন্যে । আমি তাড়াতাড়ি গ্লাসটা হাতে না ধরলে আজ সকালে সে কাচের গ্লাসটা ভেঙ্গে ফেলত । আমার ছেলে সার্থকের মতো সে খুব ছটফটে । এমন সময় আকাশে ঝড় উঠেছে । মাতাল বাতাসে দমকা ধাক্কায় আমার হৃদয় দরজা কেমন করে খুলে যায় । অন্ধকার ঘর থেকে বাহির হয়ে আমি ফিরে যাই তোমার দেশে যেখানে তুমি দীর্ঘ দিবস রজনী জেগে আছো । সেই কবিতার দেশে যেখানে তুমি আছো প্রিয়ার বেশে । আমি সুখে থাকি শুধু তোমার কাছে । আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল ফকির চাঁদ কলেজে ডায়মন্ড হারবারে । দু'জনের পরিচয় হয়েছিল গান গেয়ে । 'আগুনের পরশমনি ছোঁয়ায় আমার প্রাণে ।
দহনে দানে পূণ্য করো এ জীবন ।'
কলেজের নবীন বরণে তুমি শুনিয়েছিলে যে গান , সেদিন সবাই শুনেছিল সে গান কিন্ত মনে রেখেছে শুধু একজন । তোমার গান শুনে পূণ্য আমার এ জীবন । ফুলের বুক থেকে সেই গান নিয়ে অলি আমার কানে সদা গুন গুনায় । কোকিলের ডাক শুনে কত বসন্ত ফিরেছে তোমার দুয়ার থেকে ।
তারপর । তারপর শুধু অতীত । ধন্য আমি তোমাকে পেয়ে আজ এ বসন্তে এই কবিতার দেশে । আমি এখন সুখী রাজ পুত্র । দুঃখ ,কষ্ঠ কি জানি না ! পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়ে সাতসমুদ্র তেরো নদীর পারে আমার স্বপ্নে থাকা যে রাজ কন্যার আমি খোঁজ করছিলাম ; সেই রাজকন্যা এখন আমার সামনে ! চল না ফিরে যাই আমাদের সেই কলেজে । নতুন করে শুরু করি । তুমি ফুলের প্রথম কুঁড়ি । বসন্তের বাতাসে ভ্রমরের মতো আমার প্রথম আহ্বান । প্রথম আলো । প্রথম অনুভূতি । তারপর শুধু গান আর গান ।
তোমার সঙ্গে কত ঝগড়া ! কলেজে কোন বান্ধবী আমার সঙ্গে কথা বললে তোমার কত রাগ হত ! কলেজ থেকে আমরা দু'জনে নদীর পাড়ে গিয়ে বসে থাকতাম সবুজ ঘাসে ঝাউগাছের তলায় । নদীর ঢেউ গুনতাম । তোমার কোলে মাথা রেখে স্বপ্ন দেখতাম । কখনও নদীতে জোঁয়ার আসত । ঝড় উঠত । কলেজ থেকে ছুটির ঘন্টা শুনতাম । মন খারাপ করে বাড়ি ফিরতাম ।
সত্যি- সত্যি একদিন সব অভিমান, বিরহের অবসান হল। নহবৎ বেজে উঠলো এক বৈশাখী সন্ধ্যায় । বর বেশে আমি গেলাম তোমাদের বাড়িতে । আমি মালা দিলাম আমার রাজকন্যার গলায় । তুমি মালা দিলে আমার গলায় । মালা বদল হল । বাসর ঘর ! ফুলে ফুলে সাজানো ছিল । ফুল শয্যায় তুমি বধূর বেশে এলে আমার পাশে । মুদিত চোখে তোমার হৃদয় বীণা বেজে উঠল । দু'টো হৃদয় এক হয়ে কি স্বপ্ন দেখেছিল সে রাতে ! তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে হল । কী আনন্দ ! তোমার শরীরের কী মাদকতা ! কী সুবাস ! আমি মুগ্ধ হয়ে শুধু তোমাকে দেখতাম । তুমি হাত বাড়ালে আমি বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরতাম । সব দুঃখ, যন্ত্রণা দূর হত । আমাকে পেয়ে তুমি কত সুখী ! কত গর্ব ! আমাকে সর্বদা তোমার দেখতে ইচ্ছা করত । আমারও ঠিক তাই হত । এ পৃথিবীতে এতো সুখ আছে তোমাকে না পেলে হয়ত জানতাম না । তুমি সকালে ফুল তুলতে ,মন্দির পূজো করতে আমি দেখতাম । সন্ধ্যা বেলায় তুলসী মঞ্চে প্রদীপ জ্বালাতে । প্রদীপের আলো থেকে তাপ নিয়ে তোমার হাতের উষ্ণ স্পর্শ দিতে আমার কপালে,বুকে । তোমার হাতের কোমল স্পর্শে সুখের অনুভূতিগুলো আরোও মধুর লাগত । স্বর্গের দেবীর স্পর্শে কিছু অপূর্নতা থাকে !
আমাদের ঘর আলো করে যেদিন নতুন অতিথি এল ,সে কী আনন্দ হয়েছিল বল ! তার নাম রাখা নিয়ে তোমার সঙ্গে আমার রাগারাগি হল । তুমি তার নাম দিলে সার্থক । স্বার্থক হল আমাদের ভালোবাসা । সার্থক একটু বড় হল। তার সঙ্গে খুনসুটি করে আমার সারা রোববারটা কখন কেটে যেত ! কখনও আমি পক্ষীরাজ ঘোড়া হতাম । সে আমার পিঠে চড়ত । তুমি রান্না ঘর থেকে হেসে বলতে ,'কিরে ,তোর বাবার কষ্ট হয় না ?' কখনও অফিস থেকে ফিরতে দেরি হলে ,তুমি সঙ্গে ছেলে আমার জন্যে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে । কেন এতো দেরি হল বলে রাগ দেখাতে । সার্থক খাবার দাও বলে তার ছোট দু'হাত আমার সামনে বাড়িয়ে দিত । পকেট থেকে তার হাতে খাবার দিলে কি আনন্দ ! পৃথিবীর যত সুখ সব আমাদের এই ছোট ঘরে । আমার ঘাম ঝরছে দেখে তুমি আমার জামার বোতাম খুলে দিতে । তারপর জলের গ্নাস আমার হাতে দিতে ।
কখন জলের গ্নাস আমার হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে গেল । আমি কবিতার দেশ থেকে ফিরে এলাম । দেবীর মতো তুমি কখন অদৃশ্য হয়ে গেল । তোমার সঙ্গে সার্থক বাতাসে মিলিয়ে গেলে । আমি এখন একা । দুর্গম পাহাড়ের কোলে জঙ্গলের কুঁড়ে ঘরে । পাহাড় দেখি । সূর্যাস্ত দেখি । পাখীরা দলবেঁধে বাসায় ফেরে । মেঘেরা উড়ে রায় । কোথায় যায় ! হয়ত তোমার কাছে । মন চায় মেঘকে বলি,'একবার দাঁড়াও । তুমি আমার প্রিয়াকে সংবাদ দিতে পারো । বল তার জন্যে আমি অপেক্ষা করছি ।'
__________________________________________
_____________________________________________
তোমার স্বপ্ন গেল ভেঙ্গে
ঝিলের পাড়ে বসে ,
আমার জল ছবি দেখছ ?
কখনও তোমার ?
আমরা দু'জনে জল ছবি হয়ে ,
খেলছি কেমন জলের সাথে ভেসে।
ঢেউতে আমার মাথা গেল কেটে ।
তোমার স্বপ্ন গেল ভেঙ্গে ।
ভাবছ তুমি আমি আছি কেমন
অনেক দূরে ।
বুকের জ্বালা জূড়িয়ে যেত,
আমায় বুকের মাঝে ধরে ।
সিন্ধুর মতন শীতল হতো,
আমায় ভালোবেসে ।
আমি ও ঠিক ভাবছি তাই ,
যদি তোমায় বুকের মাঝে পাই !
সুবল সরদার
মগরাহাট
_----------------_--------------------------------------------------------------
~ মেঘ পড়ুয়া এবং আমি ~
বিদ্যুৎ ভৌমিক
কেউ একজন ঘুমের মধ্যে প্রাণপনে ছুটে এসে জানিয়ে দিল ; আজ নতুন করে সেই দিনগুলোর মৃত্যু হবে ,------
মস্ত একটা কাজ ফেলে রেখে আসা হয়েছে
কাঁধের উপর সৌরদ্বীপের
কপাল ভেজা চকচকে
ছায়া পড়লে মাঝপথে এভাবেই বাতাস
থমকে যায় !
কী এক কঠিন অথচ আদেখা
লজ্জায় স্নান ঘরের ভেতর মেঘ পড়ুয়া আমি ; সারাদেহ ভেজাই আষঢ় - শ্রাবণে !
এটাই ক্ষণকালের
জটিল পাপ এবং কলঙ্কের
প্রতিতুলনার ম্যাজিক রিয়ালিটি ,------
#
কাল থেকে প্রত্যেক পৃষ্ঠায় একই কথা তোকে লিখেছি ;
এই যে
এতকাল নদী মানেই
নদী টুকুই জানতাম ৷
অথচ এখন ; নদী মানেই তুমি
শুধুই তুমি -----
এই বয়স যেন স্বপ্ন সাধক
কাজল কালো রাত্রির মত
কিম্বা সময়শূন্য ঘন নিঃস্ব
অথবা নষ্ট নষ্ট নির্ঘুম অনন্ত !
এই বয়সে হঠাৎ ডুবে গেলে মাথার উপরের চাঁদও মুখ
ফিরিয়ে নেবে বারবার ,------
আজ এই রাস্তাটা আমার অনেককালের ছায়ার উপর
এবং নীচে ঘুমন্ত নির্ঘূমে
শুয়ে আছে ! ভেতর থেকে নিঃশ্বাস যেন উদ্ভাসিত , তাই
বলে প্রতিদিনের পোশাকে এক চিন্তা মিশিয়ে জবরদস্ত মাতাল ইচ্ছা নেই
একবারও !
#
কিছু একটা ভুলতে চেয়েছি ;
অপরাংশে
রোদে পুড়ে যায় মন এবং
সমৃতিছুট সময় ,----
একবার ইঙ্গিত দাও তবে
ভালোবাসা নিতে পারি
বাগান ভর্তি করে -----
এই হাতে মিথ্যা ছোঁয়ার অর্থ
মায়াপাশে জড়ানো নিজেকে
এতদিন এই বিছানায় শুয়ে
তোমার পাশে একা ও একক
হয়েছিলাম ৷
গভীরে ততকালের অতলান্ত
বিবর্ণ তোলপাড় ,--- এখনো খেলা করে পার্থিব
ম্যাজিকের টানে !
কবে থেকে মুখোমুখি , কবে
থেকে বৃষ্টির কাছে আমার যত
যন্ত্রণার কথা বলে গেছি ;
ও শুধুই আমার চোখের পাতা
ভিজিয়েছে ! তাই ,---- মন হারিয়ে এই অসুখ বিসুখ !!!
________________________________________________
_______________________________________________
স্বপ্নকথা
ইদানিং তোমার কথাগুলো বদলে যাচ্ছে,ইদানিং তোমার কথাগুলো বদলে যাচ্ছে,
সেই পরিচিত গন্ধে আমার আর ঘুম আসে না।
জেগে জেগে কত যে স্বপ্ন দেখি প্রতিদিন!
দেখি আর ভেঙে যায়,
ভেঙে যায় আবার শুরু করি।
স্বপ্নের এই ভাঙা-গড়াতেই দিন চলে যায়।,
আমি ঘুমুতে পারি না।
ভাঙা ভাঙা প্রেমকথা,
ছোট ছোট দুঃখ কথা,
সকালের রৌদ্র, অভিযোগ জানায় রাত জাগার অপরাধ,আর নিস্তব্ধ মনের ব্যাথা.....
সেই পরিচিত গন্ধে আমার আর ঘুম আসে না।
জেগে জেগে কত যে স্বপ্ন দেখি প্রতিদিন!
দেখি আর ভেঙে যায়,
ভেঙে যায় আবার শুরু করি।
স্বপ্নের এই ভাঙা-গড়াতেই দিন চলে যায়।,
আমি ঘুমুতে পারি না।
ভাঙা ভাঙা প্রেমকথা,
ছোট ছোট দুঃখ কথা,
সকালের রৌদ্র, অভিযোগ জানায় রাত জাগার অপরাধ,আর নিস্তব্ধ মনের ব্যাথা.....
কবি অনুরাধা ঘোষ ভট্টাচার্য
0 Comments