ব্রেকিং নিউজ

6/recent/ticker-posts

লাল আবীরে ছেয়ে গেল ৯২ ও ১০৩নং ওয়ার্ড

 কলকাতা পুরসভার ৬৬টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে বামেরা

বিশ্বরূপ দে  :  জোড়াফুলের প্রতীক আর লক্ষীর ভান্ডারের মাধ্যমে মাসিক ৫০০ টাকা ত্রাণ দিয়েই যে প্রত্যেক নাগরিকের মন জয় করা সম্ভব নয়, তা পুর নির্বাচনের ফলাফলে বুঝিয়ে দিল বামেরা । ১৪৪টির মধ্যে ১৩৪টি আসনই তৃণমূলের দখলে এবং বিরোধীদের আসন সংখ্যা মাত্র ১০টি হওয়া সত্ত্বেও ভোটের অঙ্কে কলকাতার অধিকাংশ বরোতেই দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে বামেরা ।

  কলকাতার প্রায় ৬৬টি ওয়ার্ডে শাসকদলের পরেই স্থান রয়েছে বামেদের । ৪৭টি ওয়ার্ডে বিজেপি ও ১৬টি ওয়ার্ডে কংগ্রেস রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে । 

  ২০১১-য় রাজ্যের ক্ষমতা দখল করার পর তৃণমূল নেতাদের বহুবার বলতে শোনা গিয়েছিল যে বামেরা নাকি সাইনবোর্ড হয়ে গেছে । বামেদের খুঁজতে হলে নাকি দূরবীন প্রয়োজন হবে । এমন সব ব্যাঙ্গাত্মক বাক্য ব্যবহার করে একাধিকবার মিডিয়ার সামনে জোর গলায় বলতে শোনা গিয়েছিল তৃণমূলীদের । আর আজ কলকাতা পৌরসভার ৬৬টি আসনে দ্বিতীয় স্থানে বামেদের অবস্থান দেখার পর কি বলবেন সেই তৃণমূলীরা ? 

এই প্রশ্নই এখন চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে তৃনমূলের নেতা-মন্ত্রী ও পুরভোটে বিজয়ী তৃণমূল প্রার্থীদের কপালে । সমীকরণের হিসেব কোষতে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন "বিশিষ্ট" রাজনীতিবিদরাও । যদিও অবাক হওয়ার কিছু নেই । কারণ বিগত দিনের করোনা মহামারি মোকাবিলায় বাম ছাত্রযুবদের রেড

ভলান্টিয়ার্স টিম যেভাবে মানুষকে পরিসেবা দিয়েছে, তা হার মানিয়েছে সাশকদলকে । এখনো পর্যন্ত কলকাতার বহু জায়গায় লকডাউনে কাজ হারানো অসহায় মানুষকে বিনামূল্যে দুবেলা পেট ভরা খাদ্য সরবরাহ করে আসছে বামেরা । এরই প্রতিফলন পুরভোটের ফলাফল । 

  হ্যাঁ, এটাও বাস্তব যে ১৪৪টির মধ্যে হাতে গোনা মাত্র দুটি আসন পেয়েছে বামেরা । তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯২নং ওয়ার্ডের সিপিআই প্রার্থী কমরেড মধুছন্দা দেব । ৩৫০০ ভোটের ব্যবধানে তৃণমূল প্রার্থীকে পেছনে ফেলে এই নিয়ে পর পর ছয়বার এই ওয়ার্ড থেকে মানুষের বিপুল সমর্থনে নির্বাচিত হলেন তিনি । এর পাশাপাশি ১০৩নং ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়েছেন সিপিআইএম প্রার্থী তথা শিক্ষিকা কমরেড নন্দিতা রায় । 

  সকলের কাছে অত্যন্ত প্রিয়, প্রত্যেকের সুখ-দুঃখের সাথী ও সর্বক্ষণের কাজের মানুষ ৯২নং ওয়ার্ডের সিপিআই প্রার্থী কমরেড মধুছন্দা দেব "দিদিভাই" নামেই সকলের কাছে চির পরিচিত । ওয়ার্ডের সার্বিক উন্নয়নে মানুষের সাথে মানুষের পাশে সর্বদা যে ব্যক্তিটিকে সবসময় পাওয়া যায়, তার নাম দিদিভাই । কাজেই শাসকদলের বানভাসি জলস্রোতে অন্যান্য ওয়ার্ডে যাই হোক না কেন, ৯২নং ওয়ার্ডটি যে দিদিভাইয়ের দখলেই থাকছে, সে বিষয়ে ১০০% নিশ্চিত ছিল শাসকদলও । আর ফলাফলেও সেটাই আরো একবার প্রমাণিত হলো । আর তাই প্রতিবারের মতো এবারও ফলাফল ঘোষণার সাথে সাথেই দিদিভাইকে সাথে নিয়ে লাল আবীর উড়িয়ে ৯২নং ওয়ার্ড জুড়ে বিজয় মিছিল ও আনন্দে মেতে উঠলেন প্রত্যেক দলীয় কর্মী সহ ওয়ার্ডের পুরকর্মীরা এবং বাম ছাত্রযুব ও মহিলা সমিতির সদস্যরা । ১০৩নং ওয়ার্ডে সিপিআইএমের বিজয়ী প্রার্থী কমরেড নন্দিতা রায়ের সমর্থনেও এলাকা পরিক্রমা করে বিজয় মিছিল করেন পার্টিকর্মীরা । 

  অন্যদিকে রাজস্থানের অনুপগড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনেও উল্লেখযোগ্য ফল করলো বামেরা । পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচনে বিজেপির দখলে থাকা ৫টি পঞ্চায়েত সমিতি ছিনিয়ে নিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে সিপিআইএম । 

  তবে কলকাতা পুরসভার ৬৬টি আসনে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করা বা অধিকাংশ বরোতে দ্বিতীয় স্থান দখল করে আত্মতুষ্টিতে নির্লিপ্ত হয়ে না থেকে, শাসক ও শোষকের বিরুদ্ধে ছাত্রযুব ও সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আগামীদিনে আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার মধ্যে দিয়েই বামেদের হারিয়ে যাওয়া পুরনো জমি পুনরুদ্ধার করতে হবে বলেই নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর জানিয়েছেন বাম নেতৃত্ব ।

Post a Comment

0 Comments